সাগর আহমেদ »
রেশমীদের বাড়ির উঠানের এক কোণে অন্য কয়েকটি গাছের সাথে একটি শিউলি ফুল গাছ আর একটি করমচা গাছ দাঁড়িয়ে আছে। রেশমীর আজ মন খারাপ। ওর দিদি স্নিগ্ধার গতকাল সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে ছুটিতে বাড়ি আসার কথা ছিলো, কিন্তু হঠাৎ করে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা হওয়ায় তার আর আসা হলো না। দিদির সাথে অনেক দিন হলো দেখা হয় না, কথা হয় না, ওর অনেক আশা ছিলো। কিন্তু দিদির না আসায় এই হঠাৎ স্বপ্নভঙ্গ হলো । ভোরে তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে যাওয়ায় রেশমী চুপচাপ শিউলি ফুলের গাছটার কাছে এসে দাঁড়ালো। গাছের নিচে সাদা সাদা অনেকগুলো ফুল ঝরে পড়ে আছে। ফুলগুলো দেখতে সত্যিই সুন্দর। রেশমির মন খারাপ ভাব অনেকটা কেটে গেলো। সে শিউলি ফুলগুলো কুড়িয়ে নিয়ে নিজের ঘরে বসে মালা গাঁথতে লাগলো। কিছুক্ষণ পরেই রেশমীর ছোট ভাই বাবলু লুঙ্গির কোচরে করে কতগুলো লালচে রঙের করমচা ফল নিয়ে এলো। দুই ভাই বোনে মজা করে করমচা ফল খেতে লাগলো। ফল খাওয়া শেষ হলে দুই ভাই-বোন উঠানে এসে দাঁড়াতেই নদীর পাড়ের কাশ বন থেকে কয়েকটা কাশফুল এলোমেলো ভাবে বাতাসে ভেসে এলো। বাবলু এগুলো উঠানে ছুটোছুটি করে ধরতে লাগলো আর চেঁচিয়ে বলতে লাগলো,
দেখ ছোট আপা, চাঁদের বুড়ির চরকা কাটা সাদা, সাদা সুতো এগুলো।
রশমী অবাক হয়ে বলল, তাইতো তাইতো, এখন কী করি?
বাবলু বলল, ছোট আপা, চল কাশবনে যেয়ে আরো কিছু কাশফুল নিয়ে আসি, তারপর এগুলো একটার সাথে আরেকটা জুড়ে দিয়ে ভেলা বানিয়ে একেবারে চাঁদের দেশে চলে যাবো। সেখানে গিয়ে চাঁদের চরকা কাটা বুড়ি মাকে দেখে আসবো।
বাবলুর চেয়ে রেশমী দু বছরের বড়, সে অনেক কিছু বুঝতে শিখেছে। সে জানে এভাবে চাঁদের দেশে যাওয়া যায় না। তবু মজা করার জন্য বলল,
চল, যাই।
পথে যেতে যেতে রেশমী আর বাবলু দেখলো পথের ধারের তালগাছগুলোতে অনেক তাল পেকে আছে । পাকা
তাল দেখে রেশমীর সুস্বাদু তালের পিঠার কথা মনে এলো। তারপর ওরা কাশবনে যেয়ে সাদা সাদা কাশফুলের সৌন্দর্য আর দমকা হাওয়ার স্নিগ্ধ পরশে বিভোর হয়ে অনেকক্ষণ সেখানে কাটিয়ে দিলো। বাবলুর আর কাশফুলের ভেলায় চড়ে চাঁদের দেশে যাওয়ার কথা মনে রইলো না। রেশমী বাবলুকে আঙুল তুলে নীল আকাশ দেখিয়ে বলল, দেখ বাবলু, নীল আকাশে সাদা মেঘের কী সুন্দর কারুকাজ। অপূর্ব, তাই না? ।
একথা বলে রেশমী আকাশের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। শরতের নীল আকাশ যেনো রেশমীর মনে এক অদ্ভুত ভালোলাগার অনুভূতি ছড়িয়ে দিলো। সে ভুলে গেলো দিদির বাড়িতে না ফেরার জন্য তার মন খারাপের কথা। বৃষ্টি মুক্ত শরতের নীল আকাশ আর দখিনা হাওয়া যেন রেশমী আর বাবলুর মনে অন্য এক দুয়ার খুলে দিলো।