রূপক বরন বড়ুয়ার গুচ্ছ কবিতা

তুমি

আমাকে বিদ্ধ করছে বৃষ্টির ফলা
জলের নহর শরীরের ত্বক বেয়ে
অজস্র ধারায়, আমি ডুবছি ডুবে যাচ্ছি
চোখের পাপড়িতে দেখছি জল কলা।

তুমি আমার উত্তাপ সমস্ত শরীর জুড়ে
জল আঁচে অনুভব খুইয়ে ফেলি, স্পর্শ
দূরে যায় সরে, নিরাভরণ চাদরে হিম
তুমি লেপটে থাকো, আষাঢ়ে বুকের চরে।

পাতার শিরায় জলবৃষ্টিতে সবুজ আহার
একদিন হও না ক্লোরোফিল সৃষ্টির জোয়ার।

 

প্রতিমা

মাটিতে কবিতা শুয়ে আছে হাত, পা ও মুখ
অলকের দূর্দান্ত বাহার, চোখে স্থির দৃষ্টি
চেয়ে আছে অপলক পৃথিবীর রকমারী সৃষ্টি।
পাপের পেয়ালায় ধূপ! রাতে নৃত্যে সুরা সাকী
প্রভাতে পুরোহিতের তন্ত্র, মন্ত্র, কপালে চন্দন টিপ
ফুলের মালায় কন্ঠরোধ, অবয়ব রাখে ঢাকি
চতুর প্রহর। কতক্ষণ অপেক্ষা করতে পারে!
আরতিরও শেষ নেই সন্তুষ্টি কোথায় কে জানে?
নিজে তো কোথাও পারে না যেতে, সাধ্য যে নেই
বিচ্ছেদের ঢেউ মনে! সমুদ্র খোঁজে বিসর্জনে।

 

বাড়ি

একদিন আমার বাড়ি ছিলো, আজ নেই হয়েছে বিরাণ
পাড়ভাঙ্গা ঢেউয়ে সব গেছে যে নিয়ে, আরো নিয়েছে পরাণ!
জমিজমা গাছতলা, ফসলের ক্ষেত, বন্ধুর পথ যত
চোখের ইজেলে সবুজ করুণ, চারপাশে দগদগে ক্ষত।

আসলে আমার কোথাও ছিলো না বাড়ি শেষে যাই ছাড়ি
বাড়ি যদি থাকে কালে কালে এতো রূপান্তর ফেলে আসে!
প্রাগৈতিহাসিক যুগ, কালের ঘরে জ্যোৎস্নার বাড়াবাড়ি
সব কালের চিত্র আঁকে, ভেঙেচুরে তোমাকে নিয়ে ভাসে
রাগ বিরাগ, অনন্তের রক জুড়ে ক্ষুধার বারোমাসি
আয়ুর পেখম খুলে ভুলি শোক, দুঃখে নিরন্তর হাসি।

আরেকদিন ঝিনুক ফসিলে মৃত্যুর সুন্দর পুনঃ ডাকি
পুনঃ বাড়ি খুঁজি, বাড়ি! সমস্ত বিশ্বাস পুনঃ জমা রাখি।