মস্কো এমন এক বোঝাপড়া চায় যাতে দুপক্ষের স্বার্থ রক্ষা হবে
সুপ্রভাত ডেস্ক »
রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা স্থিতিশীলতা আনতে ও যুদ্ধ থামানোর উদ্দেশে বেলারুশ সীমান্তে যে বৈঠকে বসেছিল সেটি শেষ হয়েছে।
বেলারুশের গণমাধ্যম বেল্টা নিউজের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, দ্বিতীয়বার আলোচনায় বসার জন্য দুই পক্ষই এখন পরামর্শ করতে তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরে গেছে। কয়েক দিনের মধ্যেই দুই পক্ষ ফের আলোচনায় বসতে পারে।
এ বৈঠকের আগে শান্তি আলোচনা নিয়ে কেউই খুব বেশি আশাবাদী ছিলেন না। তবে এখন পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে অথবা রাশিয়া তাদের আক্রমণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
এর আগে গণমাধ্যম বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, দুটি প্রধান দাবি নিয়ে রাশিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা।
সেই দাবিগুলোর প্রথমটি হলো অনতিবিলম্বে যুদ্ধবিরতির চুক্তি করা। দ্বিতীয়টি হলো ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার সব সৈন্যকে প্রত্যাহার করে নেওয়া।
তবে ইউক্রেনের এ দাবিগুলোর বিষয়ে রাশিয়া কি জানিয়েছে সে বিষয়ে এখনো কোনো কিছু জানা যায়নি।
এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লদমির জেলেনস্কির সঙ্গে আলাদাভাবে ফোনে কথা বলেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
এদিকে এ বৈঠক চলার সময় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রোর সঙ্গে কথা বলেন রাশিয়ার পুতিন। ফ্রান্সের এলিসি প্রাসাদ সূত্র জানিয়েছে, পুতিনকে এখনই যুদ্ধ থামানোর ব্যাপার ব্যবস্থা নিতে বলেছেন ম্যাঁক্রো।
এলিসি প্রাসাদ সূত্র আরও জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ম্যাঁক্রো পুতিনকে তিনটি অনুরোধ করেছেন। সেগুলো হলো- বেসামরিক লোকদের উপর হামলা না করা, বেসামরিক স্থাপনা সংরক্ষণ করা ও সেগুলোর উপর কোনো হামলা না করা এবং ইউক্রেনের প্রধান সড়কগুলো বিশেষ করে রাজধানী কিয়েভের দক্ষিণের রাস্তাগুলো নিরাপদভাবে চলাচল করতে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা।
আর প্রেসিডেন্ট পুতিন এ তিনটি অনুরোধ রাখার ব্যাপারে ম্যাঁকের কাছে নিজের ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন এবং ম্যাঁক্রোর সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখার ব্যাপারেও কথা দিয়েছেন।
এর আগে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পঞ্চম দিনে যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু হয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, তারা এ মুহূর্তে যুদ্ধবিরতি এবং রুশ সেনা প্রত্যাহার চায়।
অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রতিনিধিদলের প্রধান ভ্লাদিমির মেদিনস্কি বলছেন, মস্কো এমন এক বোঝাপড়া চায় যাতে দুই পক্ষের স্বার্থ রক্ষা হবে।
বৈঠক শুরুর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি রুশ সেনাদের অস্ত্র নামিয়ে রাখার আহ্বান জানিয়েছিলেন। একইসঙ্গে ইউক্রেইনকে দ্রুত সদস্যপদ দেওয়ার জন্য ইইউ-কেও অনুরোধ করেন তিনি।
বিবিসি জানিয়েছে, সোমবার ইউক্রেনের স্থানীয় সময় দুপুর ১টার একটু আগে বেলারুশে দুপক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। ইউক্রেইনের প্রতিনিধি দলের মধ্যে বেশ কয়েকজন ঊচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থাকলেও প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নিজে নেই।
পরিকল্পনা, সংগঠন ও নিরাপত্তা ইস্যুজনিত কারণে শান্তি আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে বলে এর আগে খবর হয়েছিল।
বেলারুশের মন্ত্রীরা সোমবার আলোচনার জন্য ইউক্রেন এবং রাশিয়ার প্রতিনিধিদেরকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, তারা ‘পুরোপুরি নিরাপদ বোধ করতে পারে’।
বেলারুশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভ্লাদিমির মাকেই বলেছেন, প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো আন্তরিকভাবেই আশা করছেন যে, আলোচনায় এই সংকটের সব প্রশ্নের সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে। বেলারুশের জনগণও এর জন্য প্রার্থনা করছে।
সিএনএন জানায়, বৈঠকটি ঠিক কোন জায়গায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেটি নিরাপত্তাজনিত কারণে গোপন রাখা হয়েছে। বেলারুশে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকের স্থান বলতে কেবল গোমেল অঞ্চলে প্রিপায়াত নদীর তীরের কথা জানানো হয়েছে।
আলোচনায় মধ্যস্থতার চেষ্টায় রুশ ধনকুবের:
চেলসিয়া ফুটবল ক্লাবের মালিক রুশ-ইসরায়েলি ধনকুবের রোমান আব্রামোভিচ ইউক্রেন এবং রাশিয়াকে সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছতে সহায়তা করার জন্য মধ্যস্থতার চেষ্টা করছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
বিবিসি জানায়, আব্রামোভিচের মুখপাত্র বলেছেন, ইউক্রেইনের কর্মকর্তারা আলোচনায় একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য তার কাছে সাহায্য চেয়েছেন। এরপরই সহায়তার চেষ্টা শুরু করেছেন আব্রামোভিচ।
বৈঠকে ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলে আছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ এবং উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকোলা তোকিতস্কি। আর রাশিয়ার প্রতিনিধিদলে আছেন উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যালেক্সান্ডার ফোমিন এবং বেলারুশে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বরিস গ্রিজলোভ।