সুপ্রভাত ডেস্ক »
বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ সিরাজুল আলম খান মারা গেছেন। নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার বেলা আড়াইটায় তার মৃত্যু হয় বলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক জানান। খবর বিডিনিউজের।
৮২ বছর বয়সী ‘দাদা ভাই’ উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে সংক্রামণসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। ৭ মে থেকে শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার। পরে ২০ মে তাকে ঢাকা মেডিক্যালে স্থানান্তর করা হয়।
শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১ জুন তাকে কেবিন থেকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক জানান, শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে হার্ট অ্যাটাক হয় সিরাজুল আলম খানের। তাতে তার অবস্থার অবনতি হয়। ডাক্তররা চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেননি।
দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়ে আসা চিরকুমার সিরাজুল আলম খান ঢাকার কলাবাগানে ভাইদের সঙ্গেই থাকতেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে ষাটের দশকের প্রথমার্ধে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এই ছাত্রনেতারা।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়।
তিনি কখনও নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের পরামর্শক হিসেবে তাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত। তাকে সবাই ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকতেন।
সিরাজুল আলম খান কখনও জনসম্মুখে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান।
মুক্তিযুদ্ধকালে ডাকসুর ভিপি, বর্তমান জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব এক শোকবার্তায় বলেন, ‘সিরাজুল আলম খান ছিলেন আমার রাজনৈতিক দার্শনিক শিক্ষক। তার মৃত্যুতে দেশ অন্যতম একজন শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হারাল। সিরাজুল আলম খান বাঙালির অন্তরাত্মায় সদা সর্বদা সর্বাগ্রে জাগ্রত থাকবেন।’
বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিত সিরাজুল আলম খানের ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে সমাহিত করা হবে মায়ের কবরে।
শনিবার ঢাকায় জানাজা শেষে ‘দাদা ভাই’য়ের মরদেহ নোয়াখালীতে মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুনের কবরে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন। মোহাম্মদপুরে আল-মারকাজুল ইসলামী হাসপাতালে গোসল শেষে শুক্রবার রাতে সিরাজুল আলম খানের মৃতদেহ রাখা হয়েছে শমরিতা হাসপাতালের হিমঘরে। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় তার দেহ বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ চত্বরে নেওয়া হবে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররমে জানাজা হবে।জানাজা শেষে সিরাজুল আলম খানের মৃতদেহ নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামে পৈত্রিক বাড়িতে নেওয়া হবে। বেগমগঞ্জ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আরেক দফা জানাজা শেষে আলীপুর গ্রামের সাহেব বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে মায়ের কবরেই তাকে সমাহিত করা হবে।