শান্তি রঞ্জন চাকমা, রাঙ্গুনিয়া »
রাঙ্গুনিয়ায় শত শত একর আমন ক্ষেতে পোকার আক্রমণে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। রোপা আমন ধানের ক্ষেতে ব্যাপকভাবে বেড়েছে গুনগুনিয়া পোকার আক্রমণ।
ক্ষেত রক্ষায় বারবার কীটনাশক প্রয়োগ করার পরও কোনো সুফল মিলছে না। পোকা দমনে ব্যর্থ হয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে কৃষকরা। পোকা দমনে অনেকেই আবার পেতেছেন আলোক ফাঁদ।
সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ায় ১৫ হাজার ৪৪৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে। চন্দ্রঘোনা, মরিয়মনগর, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া, হোসনাবাদ ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকা নিয়ে গুমাইবিলে তিন হাজার পাঁচশ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ করা হয়েছে।
স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের কৃষক মনোজ বলেন, আড়াই কানি (১০০ শতক) জমিতে চাষ করেছি। প্রায় ৪০ শতক জমিতে গুনগুনিয়া পোকার আক্রমনে ধান গাছ মরে যাচ্ছে। পোকা দমনে কীটনাশক ব্যবহার করার পরও সমস্যা কাটছে না। এখন কি করবো বুঝতে পারছি না।
গুমাইবিল হোসনাবাদ ব্লকের কৃষক রমিজ উদ্দিন জানান, এনজিও থেকে লোন নিয়ে তিন কানি (১২০ শতক) জমিতে আমন চাষ করেছি। চলতি আমন মৌসুমে মোগলের হাট সরকারি সার ডিলারের কাছ থেকে নির্ধারিত দাম থেকে প্রতিকেজিতে ৩/৫ টাকা বাড়তি দামে সার কিনে চাষাবাদ করেছি। ধান গাছ বেড়ে উঠার মুহূর্তে আমন ক্ষেতে পোকার আক্রমণ হয়েছে।
হোসনাবাদ খাসখাইয়া বিলের কৃষক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, কৃষি শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি ও সরকারি নির্ধারিত মূল্য থেকে বাড়তি দামে সার ক্রয় এবং আমন চাষে পোকার আক্রমণে কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ধান গোলায় তোলার স্বপ্ন দেখছি, ঠিক তখনই ফসলে দেখা দিয়েছে পোকার আক্রমণ। কোন রোগের কোন কীটনাশক সেটা তো আমরা জানি না। মোগলের হাট বাজারের বদি সওদাগরের দোকান থেকে পরামর্শ নিয়ে কীটনাশক কিনতে হচ্ছে। পোকা দমনের চেষ্টায় বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক স্প্রে করেও সুফল মিলছে না।
নিশ্চিন্তাপুর গ্রামের কৃষক আনজু মিয়া জানান, এবছর অনেক আশা ছিল ধানের ফলন ভালো হবে। কিন্তু পোকার আক্রমণে ভালো ফলন তো দূরের কথা, উল্টো উৎপাদন খরচ তোলাই কঠিন হবে।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কৃষকলীগ নেতা মনোহর আলী তালুকদার বলেন, রাঙ্গুনিয়ায় শত শত একর রোপা আমন ক্ষেতে গুনগুনিয়া পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। সঠিক সময়ে পোকা দমন করা না গেলে কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কৃষকদের কাছ থেকে বাড়তি দামে সার বিক্রি করার কথা অস্বীকার করে হোসনাবাদ ইউনিয়ন সরকারি সার ডিলার বদিউল আলম এন্টারপ্রাইজের পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, পোকা দমনে বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক কৃষকদের কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি উপ-সহকারী জোতিষা নন্দ দেওয়ানজী বলেন, বিক্ষিপ্তভাবে পোকার আক্রমণে কিছু আমন ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। গুনগুনিয়া পোকার উপস্থিতি দেখে ফসলকে বাঁচাতে আলোক ফাঁদ ও কীটনাশক ব্যবহারে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সরকারি ডিলার কর্তৃক সারের দাম বৃদ্ধি নেওয়ার প্রসঙ্গে কৃষি উপ-সহকারী আরো বলেন, নির্ধারিত সরকারি মূল্য থেকে বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।