নিজস্ব প্রতিবেদক :
নগরে পূবালী ব্যাংকসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার এটিএম বুথ থেকে লাখ লাখ টাকা চুরির ঘটনায় মূল হোতাসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে এটিএম বুথে সাইবার নিরাপত্তা সিস্টেম ভেঙে দেয়ার চাবিসহ বিশেষ সরঞ্জাম ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
গত ২২ জুন নগরের আগ্রাবাদ এলাকায় দুটি বেসরকারি ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা চুরির চেষ্টার সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে তারা। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মূলহোতা মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার হেমায়েতপুর গ্রামের ইয়াজ উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে মো. শরীফুল ইসলাম (৩৪) ও তার সহযোগী চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের হাজি আহম্মদ হোসেনের ছেলে মো. মহিউদ্দিন মনির (৩০)। শরীফুল থাকত ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানার নসরুদ্দিন রোডে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গত দুই বছর ধরে অনত্মত বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে অনত্মত ২০ লাখ টাকা চুরি করার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে তারা। বৃহস্পতিবার হাজির করলে আদালত তাদের পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।
নগরের ডবলমুরিং থানার ওসি সদীপ কুমার দাস জানান, গতবছর নভেম্বর মাসে চট্টগ্রাম শহরে পূবালী ব্যাংকের বুথে টাকা চুরির পর থেকে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ হিসেবে থানায় তালিকাভুক্ত ছিল শরীফুল ও মহিউদ্দিন। শরীফুল রাশিয়ার মস্কো ও ইংল্যান্ডের লন্ডন থেকে উচ্চশিড়্গা নিয়ে দেশে ফিরে বিদেশি এক নাগরিককে সাথে নিয়ে জালিয়াতে জড়িয়ে পড়ে। ওসি জানান, ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ৩৯ মিনিটে নগরের চকবাজার থানার কলেজ রোডে পূবালী ব্যাংকের বুথ থেকে এটিএম মেশিনে জালিয়াতির মাধ্যমে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা তুলে নেয়। একইদিন রাত ৮টা ৫৫ মিনিটে আগ্রাবাদ চৌমুহনী ফারুক চেম্বারের নিচে পূবালী ব্যাংকের আরেকটি বুথ থেকে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়। ওই দুটি ব্যাংকের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে শরীফুলকে দেখা যায়।
এ ঘটনার পর পুলিশ জানতে পারেন, এ শরীফুল গতবছর ১৬ নভেম্বর কুমিলস্না জেলার কোতোয়ালী থানার কান্দিরপাড় এলাকায় পূবালী ব্যাংকের প্রধান শাখার এটিএম বুথ থেকে ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা উত্তোলন করে। আগের দিন ১৫ নভেম্বর সেই ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়া এলাকায় পূবালী ব্যাংকের আরেকটি বুথ থেকে পরীড়্গামূলক ১০ হাজার টাকা তুলেন। জিজ্ঞাসাবাদে শরীফুল পুলিশকে জানায়, সে ২০১৯ সালে ইসলামী ব্যাংক এবং আরব-বাংলাদেশ ব্যাংকের বুথে ঢুকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। বলে জানান ওসি।
পুলিশ জানায়, গত ২২ জুন বিকেল পৌনে ৪টায় নগরের জিপিও এলাকায় সাউথইস্ট ব্যাংকের বুথ এবং বিকাল ৫টায় আগ্রাবাদ মিডল্যান্ড ব্যাংকের বুথে ঢুকে এটিএম বুথের সাইবার নিরাপত্তা ভেঙে টাকা তোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পূবালী ব্যাংকের চারটি বুথ থেকে টাকা তোলার ভিডিও ফুটেজ দেখে শরীফুলের বিষষটি নিশ্চিত হয়েছি।
ওসি জানান, গ্রেফতারের পর আবেদন করলে আদালত শরীফুল ও মহিউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আবুল সালেহ নোমান।
ডবলমুরিং থানার ওসি (তদনত্ম) জহির উদ্দিন জানান, ২০১৩ সালে শরীফুল ইসলাম ও তার শিড়্গাগুরু যুক্তরাজ্যের নাগরিক মহোনতাজ পনোথোরাইসহ পাঁচলাইশ থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। তখন তাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুইটি মামলায় ১৮ মাসের কারাদণ্ড হয়। ২০১৭ সালে সে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসে। জেল থেকে বেরিয়ে সে একটি শপিং মলে চাকরি নেয়। পরবর্তীতে পাঁচটি ব্যাংকের কার্ড জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিট তাকে ২০১৮ সালে ফের গ্রেফতার করে।
ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে শরীফুল কীভাবে টাকা চুরির করেন পুলিশের কাছে সেটির বর্ণনাও দেন। সে জানায়, ব্যাংকের গ্রাহকেরা বিভিন্ন সুপার শপ ও ডিপার্টমেন্ট স্টোর থেকে পণ্য কেনেন। কেনার পর তারা তাদের কার্ড পাঞ্চ করেন। সুপারশপে কার্ড পাঞ্চ করার সময় শরীফুল সুকৌশলে গ্রাহকদের তথ্য চুরি করে নেয়। সেই চুরি করা তথ্য মোতাবেক শরীফুল ক্লোন কার্ড তৈরি করে। পরে এসব ক্লোন কার্ড দিয়ে তারা এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে নেয়। ২০১৯ সালে জামিনে বেরিয়ে এটিএম মেশিন জালিয়াতির কলাকৌশল নিয়ে গবেষণা শুরু করেন শরীফুল। ইউটিউবে ‘এটিএম জ্যাকপটিং’ অনুষ্ঠান দেখে এবং অনলাইনে পনথোরাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ কৌশল রপ্ত করে সে।
ওসি সদীপ কুমার দাস জানান, শরীফুলের টার্গেট দুই মডেলের এটিএম মেশিন। এসব মেশিন থেকে সহজে টাকা তোলা যায়। মেশিনগুলোর স্পেয়ার চাবি আলিবাবা অনলাইন শপিং থেকে সংগ্রহ করে শরীফুল। এরপর টার্গেট করা এটিএম বুথে ঢুকে নির্দিষ্ট মেশিনে ম্যালাওয়ার সফটওয়্যার ব্যবহার করে পেনড্রাইভসহ একটি ইউএসবি হাবপোর্টের প্রবেশ করায়। সফটওয়্যারটি উইন্ডোজ প্রদর্শনের সঙ্গে সঙ্গে বাইরে থেকে এ তারবিহীন মিনি কী-বোর্ডের মাধ্যমে মেশিনের প্যানেলের অপারেশনের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তখন এটিএম মেশিনের সঙ্গে সেন্ট্রাল সার্ভারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর প্রয়োজনীয় কমান্ড দিয়ে টাকা উত্তোলন করে নেয়। শরীফুলের বিরুদ্ধে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুমিলস্না এলাকায় সাতটি মামলা রয়েছে।