সুপ্রভাত ডেস্ক »
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, যখন কোন দেশ এগিয়ে যেতে থাকে তখন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শক্তি সেই দেশের পা টেনে ধরতে চায়। সেই দেশের পা টেনে ধরার জন্য তখন মানবাধিকারসহ বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে আসে। অথচ তাদের দেশে মানবাধিকারের কোন খবর নেই। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিখোঁজ হয়, গুলিতে মারা যায়। সেগুলো নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো কখনো বিবৃতি দেয় না। ক’দিন আগে জাতিসংঘের ইন্ডিপেন্ডেন্ট হিউম্যান রাইটস এক্সপার্ট যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহবান জানিয়েছে, গুয়েন্তনামা-বে’তে যে বন্দি নির্যাতন হচ্ছে, সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, সেই কারাগার বন্ধ করে দেয়ার জন্য। সেটি নিয়ে তো কোন মানবাধিকার সংগঠন বিবৃতি দেয়নি।
শনিবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে নবীন আইনজীবীদের বরণ ও কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ড.হাছান বলেন, যারা আজকে র্যাবের ভূমিকা নিয়ে কথা বলছেন, তারা আসলে চান এখানে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্য হোক এবং মাদক আরো ছড়িয়ে পড়ুক। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে এভাবে তারা ঢালাওভাবে কথা বলতে পারেন না। তিনি বলেন, ‘র্যাবের কোন সদস্য যদি ভুল করলে তাদের বিচার হয়। যেকেউ ভুল করতে পারে, তাদের বিচার হয়, তদন্ত হয়, শাস্তিও দেয়া হয়। র্যাবকে অব্যাহতভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমের অনেক দেশ কারিগরি সহায়তা দিয়েছে। ২০০৪ সালে বেগম খালেদা জিয়াই র্যাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তারা যখন সহায়তা দিয়েছে র্যাব তো তখন থেকে কাজ করছে, তখন তো এ প্রসঙ্গগুলো আসে নাই। হঠাৎ এখন কেন আসছে, এটার পেছনে নিশ্চয়ই কিন্তু আছে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, জিয়াউর রহমান ও এরশাদের নেতৃত্বে দেশে আইনের শাসনের ব্যত্যয় ঘটেছে। মানুষের ওপর সামরিক শাসন ও আইন জারি করে দেয়া হয়েছিল। আজকে সেই জিয়াউর রহমানের দল আইন, ন্যায় এবং গণতন্ত্রের কথা বলে। জিয়াউর রহমান ও এরশাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশে যে সামরিক শাসন জারি করা হয়েছিল, তখন যে ক্যাঙ্গারো কোর্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, সেখানে কোন আইনের তোয়াক্কা করা হতো না। ইচ্ছা ও ফরমায়েশের ওপর সেখানে বিচার ও রায় হতো। বিচারের রায়ে ফাঁসি থেকে যাবজ্জীবন সবকিছু কার্যকর করা হতো।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার দেশে ন্যায় ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য, ন্যায় ও জ্ঞানভিত্তিক বহুমাত্রিক গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। যারা বন্দুক উঁচিয়ে গণতন্ত্র হরণ করে মানুষের লাশের ওপর পা দিয়ে ক্ষমতা দখল করে দেশ পরিচালনা করেছে তারা যখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলে তখন আবার সেই অস্ত্রের ঝনঝনানি শুনতে পাওয়া যায়, মানুষ আতঙ্কিত হয়।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘দেশে বহুবার গণতন্ত্রকে বাক্সবন্দি করা হয়েছে। বাংলাদেশে বার বার সামরিক শাসন জারি করে ক্যাঙ্গারো কোর্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। যেখানে সামারি ট্রায়ালের মাধ্যমে মানুষকে বিচার করে ফাঁসি দেয়া হতো। জিয়াউর রহমানের সময় অনেক সেনা অফিসার ও জওয়ানদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে। কারাগারের মধ্যে সেনা সদস্য বন্দি, তাকে হঠাৎ লক খুলে ভোর রাতের আগে যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তিনি প্রশ্ন করেছেন, তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ ? প্রতিউত্তরে বলা হয়েছে, ফাঁসি দিতে। সেনা অফিসাররা তখন বলতেন, আমার তো কোন বিচার হয়নি। প্রতিউত্তরে বলা হতো বিচার হয়ে গেছে। এরকম বহুজনকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে।’
নতুন আইনজীবীদের অভিনন্দন জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আইন পেশাটা শুরুতে খুব কুসুমাস্তীর্ণ নয়, অনেক টানাপোড়েন থাকে। শুরুতে যারা অর্থের পেছনে দৌড়াবেন তারা ভাল আইনজীবী হতে পারবেন না। অর্থের পেছনে দৌড়ালে অনিয়মের সাথে যুক্ত হয়ে যেতে হয়। সেটি ভালো আইনজীবী হবার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। সেজন্য আইন পেশাটা শুরুতে খুব কষ্টের। বাড়ি থেকে টাকা এনে চলতে হবে। এটি কিন্তু বাস্তবতা। কিন্তু যিনি ধৈর্য্য ধরে এ পেশায় লেগে থাকেন তিনি কিন্তু পরবর্তীতে ভালো আইনজীবী হন।
হাছান মাহমুদ বলেন, দেশে আইনের শাসন, ন্যায় প্রতিষ্ঠা, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আইনজীবীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আইনজীবীরা সমাজের স্বাভাবিক নেতা। আবার মানুষকে আইনগত সহায়তা দিয়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আইনজীবীরা যে ভূমিকা রাখেন, সেই ভূমিকার ওপর অনেকটা নির্ভর করে সমাজে ন্যায় ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। সেজন্য আইনজীবী পেশায় সৎ থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মুহাম্মদ এনামুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এডহক কমিটির সদস্য মো. মুজিবুল হক। এডভোকেট আবদুল্লাহ আল মামুনের পরিচালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচএম জিয়াউদ্দিন।