চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাস করে প্রায় ৬০ লাখ লোক। এর মধ্যে ৪০ লাখেরও বেশি নগরের বাইরের লোক, অন্যান্য অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দা। প্রতিদিন অন্তত দেড় থেকে দুই লাখ মানুষ ৩০ হাজারের বেশি যানবাহনে চট্টগ্রামে আসা যাওয়া করে।
প্রতিদিন ছয় হাজারের বেশি আন্তঃজেলা বাস ও ট্রাক চট্টগ্রাম শহরে আসা যাওয়া করে। কিন্তু স্থায়ী বাস টার্মিনাল আছে মাত্র দুটি আর ট্রাক টার্মিনাল একটি। বাস টার্মিনালের অভাবে নানা সমস্যা আর ভোগান্তিতে পড়তে হয় পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীদের। স্থায়ী কোনো বাস টার্মিনাল না থাকায় দক্ষিণের গুরুত্বপূর্ণ শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বরকে অঘোষিত টার্মিনাল বানিয়ে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে ওঠানামা করানো হচ্ছে যাত্রীদের। নগরীতে এ রকম অন্তত ২০টির বেশি অস্থায়ী বাস স্ট্যান্ড রয়েছে।
চট্টগ্রামে প্রথম বাস টার্মিনাল চালু হয় ১৯৬৬ সালে নগরীর কদমতলী মোড়ে। দ্বিতীয়টি ১৯৯৩ সালে বহদ্দারহাট এলাকায় নির্মিত হয়। উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে চট্টগ্রামগামী বাসগুলো আগে কদমতলী বাস টার্মিনাল থেকে চলাচল করত। তবে এখন এই টার্মিনাল থেকে শুধু নোয়াখালীগামী বাস চলাচল করে। বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালে চট্টগ্রাম নগরীর এবং জেলার দক্ষিণ অংশে অবস্থিত ৭ উপজেলা এবং কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার মধ্যে চলাচলকারী বাসগুলো অবস্থান করে। কিন্তু বাস টার্মিনাল না থাকায় জেলার উত্তর অংশে অবস্থিত অন্যান্য ৮ উপজেলা এবং রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এবং দেশের অন্যান্য জেলার মধ্যে চলাচলকারী বাসগুলোকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
দ্বিতীয় টার্মিনাল নির্মাণের ৩০ বছর পর নগরীর উপকণ্ঠে একটি বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এটি বন্দরনগরীর তৃতীয় বাস টার্মিনাল হতে যাচ্ছে। কুলগাঁওয়ে প্রকল্প এলাকায় জমি উন্নয়নের জন্য চসিক ইতোমধ্যে দরপত্র আহ্বান করেছে। ২০১৮ সালে একনেকে অনুমোদিত হওয়ার ৫ বছর পরে প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে। ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের করা চট্টগ্রাম সিটি মাস্টার প্ল্যানে কুলগাঁও এলাকায় মোট ২৮ একর জমি একটি বাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। চসিক অবশ্য প্রাথমিকভাবে ৮ দশমিক ১০ একর জমির উন্নয়ন করে টার্মিনাল নির্মাণ করবে।
এখন নগরীর অক্সিজেন মোড় থেকে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ির প্রত্যন্ত অঞ্চল ছাড়াও উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী, নাজিরহাট, ফটিকছড়ি, রাউজান, রাঙ্গুনিয়াসহ ৩২টি রুটের বাস ছেড়ে যায়। এই রুটে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ বাস চলাচল করে। এতে প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করেন।
যানজট নিরসনে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সিটি কর্পোরেশনকে নগরে আরও বাস ও ট্রাক টার্মিনাল করার জন্য প্রস্তাব দিয়ে চিঠি দিয়েছে। পুলিশের মতে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালে গাড়ি রাখার সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। তাই সকল বাস নতুন ব্রিজ এলাকাজুড়ে পার্কিং করার ফলে সেখানে যানজট হচ্ছে। ওই চিঠিতে অলংকার মোড় অথবা সিটি গেট সংলগ্ন সুবিধাজনক স্থানে ঢাকামুখী ও দেশের অন্যান্য স্থান থেকে আগত বাসের জন্য টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয়। এছাড়া বন্দরের টোল রোডের পাশে, বন্দর সংলগ্ন স্থান ও স্টিল মিল ৭ নং সল্টগোলা খালি জায়গার যেকোনো একটিতে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, ট্যাংকলরি, লংভেহিকেল ও প্রাইমমুভারের জন্য টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তুত করা হয়। নির্মাণাধীন চাক্তাই খালের উপর সংযোগ সেতু এলাকার পূর্ব দক্ষিণাংশে দ্বিতীয় শাহ আমানত সেতুর গোড়ায় সড়ক ও জনপদ বিভাগের পরিত্যক্ত জায়গায় দক্ষিণ চট্টগ্রামমুখী নিকটবর্তী উপজেলার বিভিন্ন রুটের মিনিবাসের টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়।
শহরের ভিতরে বড় যানবাহনের চাপ কমাতে মহানগরীর সব গুরুত্বপূর্ণ প্রান্তে বাস ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করা প্রয়োজন। যানজট নিরসন ও যাত্রী দুর্ভোগ লাঘবে একাধিক আধুনিক বাস টার্মিনাল নির্মাণের কোন বিকল্প নাই।
এ মুহূর্তের সংবাদ