নিজস্ব প্রতিবেদক »
প্রশাসনের পক্ষ থেকে রমজানে যানজট নিরসনে নানান পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেয়া হলেও কোনভাবে কমানো যাচ্ছে না। এবার সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা মাঠে থাকবেন বলে আশ্বাস দেয়া হয়।
বরাবরের মতো এবারো ফুটপাত-সড়ক দখল করে দেদার চলছে বেচাবিক্রি। পাশাপাশি বসছে দোকানপাটও; বরং ফুটপাত-রাস্তার ব্যবসা যেন আরও জমে উঠেছে ঈদকে সামনে রেখে। ফলে সিএমপির আশ্বাস সহনীয় পর্যায়ের যানজটের বিষয় কোনভাবে মিলছে না। বরং যানজটে মানুষের ভোগান্তি বেড়ে চলেছে।
গতকাল শনিবার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে এই চিত্র আরও নাজুক আকার ধারণ করে। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। বিশেষ করে গার্মেন্টস ও অফিস ছুটির পরপরই যানজট প্রকট আকার ধারণ করে নগরীতে। অফিস ছুটি শেষে ইফতারের আগ পর্যন্ত সময়ে সড়কে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হচ্ছে। প্রধান সড়ক পেরিয়ে অলিগলি, উপসড়কেও ছড়িয়ে পড়ছে যানজটের প্রভাব।
গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর কোতোয়ালীর আমতল ও নিউমার্কেট থেকে চলাচলকারী অটো টেম্পো, বাস ও মিনিবাসগুলো যত্রতত্র পার্কিং করে আছে। শাহ আমানত মার্কেটের সামনে তিনপুলের মাথা ও আশপাশের এলাকায় রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি ও মোটরসাইকেলের দীর্ঘ জ্যাম। নিউমার্কেটের মোড়ের সামনে দেখা যায়, এনায়েত বাজার হয়ে আসা ৩ নম্বর রোড়ের গাড়ি, আগ্রাবাদগামী ৬ নম্বর ও ৭ নম্বর রোড়ের গাড়িগুলো যত্রতত্র দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। মাঝেমাঝে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশকে গাড়িগুলো সরানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়। যাত্রী নিয়ে গাড়ি চলে যাওয়ার পুলিশ নির্দেশ দিলে একটু সামনে এগিয়ে আবার সেই একই কাজ করছেন চালকরা। তাছাড়া ওইসব এলাকায় ট্রাফিক প্রশাসনের নির্দেশনাকে অমান্য করে হকার বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি।
অন্যদিকে স্টেশন রোড রেয়াজউদ্দিন বাজার ও গোলাম রসুল মার্কেটের প্রবেশ মুখে সব্জি, ফলমূল ও অন্যান্য পণ্যদ্রব্য সকাল ৮টার মধ্যে লোড-আনলোড করার সিএমপি’র ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশ থাকলেও ওই স্থানগুলোতে বরং ঠিক উল্টো চিত্র দেখা যায়। স্টেশন রোডের ফুটপাতগুলো দখল হয়েছে ভাসমান দোকানে। এমনকি সিএমপি নির্দেশনা উপেক্ষা করে বিকালেই মহাসড়কের উপর ফল লোড-আনলোড করছেন স্টেশন রোডের ফল আড়তদাররা।
জানতে চাইলে স্টেশন রোডের ফল আড়তদার এডি বাণিজ্যালয়ের ইনচার্জ ইসলাম উদ্দিন বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে রাস্তায় মালামাল না রাখতে। সকালে ম্যাজিস্ট্রেট এসেও নিষেধ করে যান। স্থানের স্বল্পতার কারণে আমরা রেখেছি। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি আইন মেনে চলতে।
এদিকে ফুটপাত ও সড়কে নিরবচ্ছিন্ন চলাচল নিশ্চিতে অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদে মার্কেটকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীদের সিএমপি নির্দেশনা দিলেও নগরীর প্রায় মার্কেট কর্তৃপক্ষ তেমন কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না। গতকাল টেরিবাজার, নিউমার্কেট, রেয়াজউদ্দিন বাজার, আন্দরকিল্লার মার্কেটগুলোর সামনের অংশ অবৈধ-ভ্রাম্যমাণ দোকানদারদের দখলে। ফুটপাত দখল করার পর তারা রাস্তা দখল করে বিক্রি করছে ঈদ-কেনাকাটার নানাসামগ্রী। এতে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের জিম্মির মুখে পড়েছেন বলে দাবি মার্কেটকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা। তারা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।
নগরীর বিপণি বিতান মার্চেন্টস ওয়েলফেয়ার সমিতির সভাপতি মো. সগির বলেন, ট্রাফিকের পক্ষ থেকে আমাদেরকে বলছিল যে মার্কেটের সামনে থেকে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের সরাতে। দুঃখের বিষয় হলো আমরা ভ্রাম্যমাণ হকার্সদের কাছে জিম্মি হয়ে গেছি।
অন্যদিকে রমজান মাস শুরুর আগেই চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে রমজান মাসে যানজট সহনীয় রাখতে ১৫টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মাঠপর্যায়ে সেই নির্দেশনারও ঠিকমতো কোন ধরনের বাস্তবায়ন তেমন দেখা যাচ্ছে না।
সিএমপির ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের নির্দেশনায় এক নম্বরে ছিল নগরীর নিউ মার্কেট, টেরীবাজার, বক্সির হাট, রেয়াজউদ্দিন বাজারসহ বড়-ছোট সকল মার্কেট ও শপিংমল কেন্দ্রিক যানজট নিরসনের লক্ষ্যে রাস্তা ও মার্কেটের সামনে পার্কিং করা যাবেনা। কিন্তু ওই স্থানগুলোতে যানজট বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। ট্রাফিক প্রশাসনের এই নির্দেশনার তোয়াক্কা করছেন না চালকরা।
ট্রাফিক প্রশাসনের দ্বিতীয় নির্দেশনায় ছিল নগরীর মার্কেটকেন্দ্রিক এলাকার সামনের রাস্তার প্রবেশ পথ নিজস্ব জনবল দিয়ে পরিষ্কার রাখা ও আগত যানবাহনে শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ মার্কেটের সামনে ফুটপাত দখল করে আগের চেয়ে ভ্রাম্যমাণ দোকানের উপস্থিতি আরো বেড়েছে।
রিকশা-সিএনজি অটোরিকশা ও হকারমুক্ত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। রাস্তা দখল করে দাঁড়ানো কিংবা ডাবল লাইনে পার্ককৃত যানবাহন অপসারণ করা হবে বলে নির্দেশনায় থাকলেও তা মাত্র কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। রমজান উপলক্ষে নগরীর নিউমার্কেট থেকে টেরিবাজার, আন্দরকিল্লার অলিগলি, ফুটপাত দখল হওয়ার পর প্রধান সড়কগুলোও দখলে চলে গেছে ভ্রাম্যমাণ দোকানদারদের।
আন্দরকিল্লা এলাকার মো. আসিফ নামে এক ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী বলেন, নিউমার্কেট থেকে আন্দরকিল্লা, টেরিবাজার, লালদিঘী এলাকাতে ফুটপাতের উপর বসা ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলো থেকেও হকার সমিতির নামে একাধিক চক্রের সদস্যরা নিয়মিত চাঁদা উঠানো হয়। এই ঈদে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী আরো বেড়েছে। এসব কর্মকা-ে জড়িত মূল ব্যবসায়ীরাও। তারা ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদেরকে দৈনিক নির্দিষ্ট ভাড়ার মাধ্যমে রাস্তায় বসতে দেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেরিবাজার-আন্দরকিল্লা হকার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক লোকমান হাকিম বলেন, আমরা প্রশাসনের নিয়ম মেনে চলছি। দুয়েকটি ভ্রাম্যমাণ দোকান বসলে তা সরাতেও আমরা কাজ করছি। তাছাড়া হকাররা যাবে কোথায়? তারা যদি দুয়েক টাকা আয় না করে পরিবার নিয়ে চলবে কিভাবে?
চাঁদা আদায়ের বিষয়ে স্বীকার করে তিনি বলেন, আমরা দিনে ১০ টাকা করে চাঁদা নিয়ে থাকি। তা হকার্সদের উন্নয়নের জন্য। তাদের বিপদে তা ব্যয় করা হয়।
যানজট নিয়ন্ত্রণে বাড়তি প্রস্তুতি হিসেবে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এবার রমজানে যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখবে। এবং তার জন্য সড়ক ও ফুটপাত দখল করে কোনো ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য, বেচাকেনা করতে দেওয়া হবে না। রাস্তা দখল করে কোনো হকার বা ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা থাকবে না। এ জন্য নগরীতে ট্রাফিক প্রশাসনের উচ্চ প্রদস্ত কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কাজ করবে। অথচ এসব নির্দেশনার একটাও মানছে না হকার, ভ্রাম্যমাণ দোকানদার ও চালকরা।
নিউমার্কেট এলাকায় দায়িত্বরত এক ট্রাফিক পুলিশ বলে, ‘কিছু দূরে দূরে পুলিশ থাকাতো সম্ভব নয়। আর এই সুযোগটা নিচ্ছেন চালকরা। পুলিশ সামনে পড়লে গাড়ি চলমান রাখে, আড়ালে গেলে একই ঘটনা ঘটায়।