নিজস্ব প্রতিবেদক »
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা তিনদিনের অবরোধের প্রথম দিনে গতকাল (মঙ্গলবার) নগরীর ইপিজেড সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় এবং বায়েজিদ থানাধীন বালুচরায় বাসে আগুন লাগিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া সিটিগেট এলাকায় প্রাইভেট কার ভাঙচুর করে বিএনপি কর্মীরা। এ ঘটনায় ১৪ জনকে আটক এবং ৭টি ককটেল উদ্ধার করা হয়।
বাসে আগুন দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে নগরের ইপিজেড থানার সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় সী-ম্যান্স হোস্টেল রোডে শ্রমিক পরিবহনের একটি বাসে আগুন লাগানো হয়। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ইপিজেড থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘যাত্রীবেশে দু’জন খালি বাসে উঠে আগুন লাগিয়ে দ্রুত নেমে পড়ে। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাই। ফায়ার সার্ভিসের লোকজনও ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের চেষ্টায় ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।’
ঘটনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘যে বাসে আগুন লাগানো হয়েছে, বাসটির চালকের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তিনি এ ঘটনায় দুজন জড়িত থাকার কথা জানিয়েছেন। জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেফতার অভিযান চলছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনা পরবর্তী পুলিশি টহল আরও জোরদার করা হয়েছে।’
এদিকে, একইদিন বালুচরা ট্যানারি বটতলা এলাকায় রাত সাড়ে তিনটায় আরেকটি খালি বাসে আগুন দেওয়া হয়। এ ঘটনায়ও কেউ হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা অবরোধের জের ধরে সোমবার (৩০ অক্টোবর) রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে নগরের জিইসি মোড়ে এলাকার কে কনভেনশন সেন্টারে পটিয়া থেকে বরযাত্রী নিয়ে আসা একটি বাসে আগুন লাগায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় দাঁড়িয়ে থাকা বাসটিতে কোনো যাত্রী ও চালক না থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ভাঙচুর, ককটেল উদ্ধার
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টায় অবরোধের সমর্থনে নগরের সিটি গেট এলাকায় বিএনপি একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি সিটি গেট প্রবেশ করার আগে গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ তাদের প্রতিহত করে। এ ঘটনায় ১৪ জন বিএনপি কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পাকা রাস্তার মাথার এলাকার একটি গ্যারেজ থেকে সাতটি ককটেল উদ্ধার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার স্পিনা রানী প্রামাণিক বলেন, ‘আকবর শাহ থানার সিটি গেট এলাকা থেকে সন্দেহভাজন ১৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে আটক করা হয়। পরবর্তীতে তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে সিটি গেটের পার্শ্ববর্তী পাকা রাস্তার মাথা এলাকা থেকে ৭টি ককটেইল উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, অবরোধে সহিংসতা ঘটানোর উদ্দেশ্যে দুর্বৃত্তরা এসব ককটেল লুকিয়ে রেখেছিল। তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে।’
নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসন
গতকাল (মঙ্গলবার) নগরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। পাশাপাশি গাড়ি নিয়ে টহলেও দেখা যায় পুলিশের থানাভিত্তিক দলকে। এছাড়া নগরের বাইরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) টহল দেখা যায়।
নগরজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা প্রসঙ্গে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে এমন আশংকা সব জায়গায় ছিলো। সেটা মাথায় রেখে আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি পুরো নগরজুড়ে। সাদা পোশাকেও আমাদের বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা কাজ করছি।
ককটেল উদ্ধার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে এখানে একটি গ্রুপ এসে বাস ভাঙচুর করার চেষ্টা করেছিলো। আতঙ্ক সৃষ্টি করতে মানুষের জান-মালের ক্ষতি হয় এমন একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিলো। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ খবর পেয়ে তাদের প্রতিরোধ করে। ঘটনাস্থল থেকে তাদের ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তি মতে, পার্শ্ববর্তী একটি গ্যারেজ থেকে ৭টি তাজা ককটেল উদ্ধার করা হয়। এগুলো উদ্ধার করা না হলে হয়তো জীবনহানির ঘটনা ঘটত।’