স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের জন্য নির্ধারণ করে টাঙ্গানো হলো সাইনবোর্ড
নিজস্ব প্রতিবেদক :
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত যাত্রা মোহন সেনগুপ্তের বাড়িকে অবশেষে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের জন্য নির্ধারণ করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। বাড়িটির অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের উচ্ছেদ করে সেখানে টাঙ্গানো হয়েছে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণের জন্য নির্ধারিত সাইনবোর্ড । গতকাল শনিবার বিকালে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (ভূমি অধিগ্রহণ) বদিউল আলমের নেতৃত্বেজেলা প্রশাসনের একটি টিম বাড়িটি দখলে নিয়ে সাইনবোর্ড টাঙ্গায়।
অভিযানে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (মেট্রো) সুমনী আক্তার, বাকলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম ও কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তৌহিদুল ইসলাম এবং পুলিশ-আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উচ্ছেদ অভিযানে জেলা প্রশাসনের টিম মূল গেটে লাগানো অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। পরে সেখানে অবৈধভাবে অবস্থান করা কয়েকজন নারী-পুুরুষকে বের করে দেওয়া হয়। বাড়ির গেট ও দেয়ালে লাগানো অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের সব সাইনবোর্ড ও ব্যানার খুলে ফেলা হয়। গেটে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণে সংবিধানের ২৪ অনুচ্ছেদের নির্দেশনা সম্বলিত একটি সাইনবোর্ড এবং জাদুঘর নির্মাণে হাইকোর্টের নির্দেশনার একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়।
উচ্ছেদ অভিযান প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (ভূমি অধিগ্রহণ) বদিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘যাত্রা মোহন সেনগুপ্তের এ বাড়িটির সঙ্গে বিট্রিশবিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধ আন্দোলনের অনেক ইতিহাস জড়িত রয়েছে। কতিপয় দুষ্কৃতকারী অবৈধ অনুপ্রবেশ করে এই ঐতিহাসিক বাড়িটি ভাঙচুর করেছে। পরে হাইকোর্টে এ সংক্রান্ত একটি রিট হয় এবং তার ফলে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। সংবিধানের ২৪ নং অনুচ্ছেদে বলা আছে, ঐতিহাসিক সকল স্থাপনা রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সেই সাংবিধানিক দায়িত্বের অংশ এবং হাইকোর্টের রুলের পরিপ্রেক্ষিতে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের সরিয়ে জেলা প্রশাসন এই ঐতিহাসিক স্থাপনা রক্ষার জন্য এর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।’
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণ প্রসঙ্গে উদীচী চট্টগ্রামের সভাপতি শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফী বলেন, যাত্রা মোহন সেনগুপ্তের বাড়িকে সরকার স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের জন্য নির্ধারিত করার আমরা আনন্দিত। এটা খুব ভালো উদ্যোগ। উদ্যোগটি আরো আগে নেওয়া উচিত ছিল। এখন যখন সরকার নিজ উদ্যোগে জাদুঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সেজন্য সরকারকে স্বাগত জানাই। এ বাড়িটি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর হিসেবে এমনভাবে সাজাতে হবে যা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলনে চট্টগ্রামের ইতিহাসকে তুলে ধরবে।
চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্রের সভাপতি আলীউর রাহমান বলেন, আমাদের দাবি হলো জেএম সেনের বাড়িটির সামনের অংশ অক্ষত রেখে পেছনে বহুতল বিশিষ্ট একটি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণের কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক। সরকারের কাছে আমাদের আহবান জাদুঘর নির্মাণের কাজটি অচিরেই শুরু করা হোক, যাতে আর কেউ বাড়িটিকে নিয়ে নতুনভাবে ষড়যন্ত্র করতে না পারে।
গণজাগরণ মঞ্চ চট্টগ্রামের সমন্বয়ক শরীফ চৌহান বলেন, সরকার জনগণের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়েছে, সেজন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। বাড়িটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ জাদুঘর নির্মাণের জন্য যা যা প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার তা যেন অচিরেই গ্রহণ করে। বাড়িটিকে জাদুঘর নির্মাণের জন্য সাইনবোর্ড লাগানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না বরং আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু না হওয়া পর্যন্ত আমারা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
উল্লেখ্য, বিট্রিশবিরোধী আন্দোলনের এই ঐতিহাসিক বাড়িটি এম ফরিদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি কিনেছেন দাবি করেগত ৪ জানুয়ারি দখল করতে যান। সেদিন বাড়িটিকে বুলডোজার দিয়ে সামনের অংশ গুঁড়িয়ে দিলে চট্টগ্রামের সচেতন নাগরিকদের আন্দোলনের মুখে বাড়িটি রক্ষা পায়। এর পর থেকে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও বিভিন্ন স্তরের সচেতন নাগরিকরা বাড়িটিকে রক্ষা করে সেখানে বিট্রিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবীদের জাদুঘর নির্মাণের জন্য সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিলো। সর্বশেষ ৬ জানুয়ারি একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বাড়ি দখল ও অবস্থানের উপরে স্থিতাবস্থা জারি করে হাইকোর্ট।