বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা ছাড়াও ফেনী, নোয়াখালীসহ বিশাল অঞ্চলের সাধারণ মানুষের চিকিৎসার বড় সরকারি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সামর্থবানেরা রাজধানী ঢাকাসহ নানা দেশে নামি-দামি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারলেও নিম্নমধ্যবিত্ত ও সামর্থহীনদের জন্য একমাত্র ভরসা এই হাসপাতাল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এত লোকের চিকিৎসা দেওয়ার মতো সামর্থ্য না থাকা সত্বেও সরকার এর দিকে নজর দিচ্ছে না।
পত্রিকান্তরে জানা গেল, একটি যন্ত্রাংশ পাওয়া না যাওয়ায় দীর্ঘ আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের একমাত্র ম্যামোগ্রাফি মেশিনটি। হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে স্থাপিত মেশিনটি নারীর স্তন ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের কাজে ব্যবহৃত হতো। মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কম খরচে সেবা পাচ্ছেন না দরিদ্র রোগীরা। এ পরিস্থিতিতে নতুন মেশিন কেনার পরিকল্পনা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, রেডিওলজি বিভাগে সিঙ্গেল (একটি) স্তনের ম্যামোগ্রাফ পরীক্ষা ৪০০ টাকা এবং ডাবল (দুটি) স্তনের পরীক্ষা ফি নিত ৮০০ টাকা। তবে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে এই ফি প্রায় চার গুণ নিয়ে থাকে।
রেডিওলজি বিভাগের চিকিৎসকরা বলছেন, ম্যামোগ্রাফি মেশিনটি চালু থাকলে গরিব রোগীরা কম টাকায় সেবা পেতেন। মেশিনটির ৩ বছরের ওয়ারেন্টি সময়সীমা থাকলেও সচল ছিল ২ বছরের কম সময়। তাই রোগীরাও প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে চমেক হাসপাতাল ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য একটি করে মেশিন বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইতালি থেকে আমদানি করা দুটি মেশিনের খরচ পড়ে ৩ লাখ ৮১ হাজার ইউরো। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা তিন কোটি ৩২ লাখ ৩ হাজার ৯২১ টাকা। ওই সময় প্রতিটির মূল্য পড়ে ১ কোটি ১৬ লাখ টাকার বেশি। কিন্তু কোটি টাকা মূল্যের অত্যাধুনিক এ যন্ত্র চমেক হাসপাতালে বাক্সবন্দি ছিল প্রায় বছর ধরে। পরে প্রায় দেড় বছর পর ২০১৮ সালে সেবা চালু হয়। চালু হওয়ার পর থেকে দফায় দফায় বিকল হয়ে যাওয়ায় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।
রেডিওলজি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নষ্ট হয়ে যাওয়া ম্যামোগ্রাফি মেশিনটি স্থাপিত হয় ২০১৮ সালের ১ আগস্ট। কোটি টাকা মূল্যের মেশিনটি ৩ বছর ওয়ারেন্টি সময়ের মধ্যে চারবার নষ্ট হয়ে যায়। ওয়ারেন্টির সময়সীমা ৩ বছর থাকলেও ম্যামোগ্রাফি মেশিনটি সব মিলিয়ে সচল ছিল ১ বছর ১১ মাস ২৯ দিন। এছাড়া বর্তমানে ৪ বছর ২ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। প্রথম দফায় স্থাপনের ৫ মাস ২৬ দিন পরে বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ১ বছর ৫ মাস ১৪ দিন পর চালু হয়। তবে এবার চালু হওয়ার মাত্র ৩ মাস ২৭ দিন পর আবারও বিকল হয়ে যায় মেশিনটি। তারপর বন্ধ ছিল ৬ মাস ২৩ দিন। চালু থাকে ৮ মাস ৬ দিন। বন্ধ থাকার ৪ মাস ৬ দিন পর চালু হলেও এবার স্থায়িত্ব হয় আরো ৬ মাস। এরপর গত ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর থেকে মেশিনটি স্থায়ীভাবে বন্ধ রয়েছে। সেই থেকে টানা প্রায় আড়াই বছর ধরে বিকল পড়ে আছে ম্যামোগ্রাফি মেশিন।
অভিযোগ আছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে কিছু দালাল। সরকারি হাসপাতালে কম টাকায় চিকিৎসাসুবিধা ফেলে বেশি টাকা দিয়ে কেউ বেসরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে যাবে না। এরাই সুকৌশলে হাসপাতালের যন্ত্রপাতি নষ্ট করে রাখে। এর সঙ্গে জড়িত হাসপাতালেরই কিছু অসৎ লোক। এদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা গেলে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সহজ হতো।