সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক দশকে দেশে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ। তার সঙ্গে বেড়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা। পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ১৩ মাসের হিসাব বলছে, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের ৩২ দশমিক ১৪ শতাংশই মোটরসাইকেল আরোহী। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের ৫ বছরের তথ্য বলছে, দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ৩৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ মোটরসাইকেলের আরোহী। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানির বড় অংশই বয়সে তরুণ, এদের মধ্যে শিশুও আছে।
বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ১৩ মাসে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৫৯৫ জন নিহত হয়েছেন। এসব নিহত মানুষের মধ্যে অন্তত ১ হাজার ৭৯৮ জন মোটরসাইকেল আরোহী ছিলেন; অর্থাৎ নিহতের ৩২ দশমিক ১৪ শতাংশই মোটরসাইকেল আরোহী।
তাদের তথ্য বলছে, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের ৭০ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। ৮০ শতাংশ চালকের কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই। অধিকাংশ চালক, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে হেলমেট ব্যবহার করেন না।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে, গত পাঁচ বছরে দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ১১ হাজার ৮৬৪ জন মোটরসাইকেল আরোহী প্রাণ হারিয়েছেন, যা সড়ক দুর্ঘটনায় মোট প্রাণহানির ৩৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এ সময় আরও প্রায় ১০ হাজার মোটরসাইকেল আরোহী আহত হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মোটরসাইকেলের চালক কিংবা আরোহীদের সুরক্ষা নেই। ফলে দুর্ঘটনায় এই যানের আরোহীদের বেশির ভাগেরই মৃত্যু হয়। আহত ব্যক্তিদের জীবনভর পঙ্গু কিংবা বিকলাঙ্গ হয়ে কাটাতে হয়।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে, গত পাঁচ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ৮০৬টি শিশু মারা গেছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৮৫ শিশু ছিল মোটরসাইকেলের আরোহী; অর্থাৎ নিহত শিশুদের মধ্যে প্রায় ৩৩ শতাংশ মোটরসাইকেলের আরোহী।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সামছুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, বিশ্বব্যাপী এটা প্রতিষ্ঠিত যে স্থিতিশীলতা (স্ট্যাবিলিটি) বিবেচনায় সুশৃঙ্খল সড়কেও সাধারণ যানবাহনের চেয়ে মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ৩০ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশের মতো বিশৃঙ্খল পরিবেশে ঝুঁকি আরও বেশি। স্বভাবজাতভাবেই যেহেতু ঝুঁকি বেশি, তাই দুই পদ্ধতিতে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রথমত, নিবন্ধন নিয়ন্ত্রণ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। পাশাপাশি বিকল্প ব্যবস্থা ও গণপরিবহন সহজলভ্য করতে হবে। যাতে মোটরসাইকেলের ওপর নির্ভরতা কমে যায়।
এটি এখন জাতীয় সমস্যায় রূপ নিচ্ছে। এ প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার কারণে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। মানুষ নিহত হলে বা আহত হলে এর যে অভিঘাত পরিবার ও রাষ্ট্রে পড়ে তার পরিমাণ কম নয়। কাজেই এ সমস্যা নিয়ে এখন জাতীয় সংলাপ সময়ের দাবি।