মেয়রের বক্তব্যে জনমতের প্রতিফলন আছে

শহরের সব পাহাড় কেটে ফেলা হচ্ছে। খাল-নালা দখল করে স্থাপনা উঠছে। পুকুর-জলাশয় ভরাট করছে একটি দুষ্টচক্র। পাহাড় কাটার ফলে পাহাড়ের মাটি গিয়ে নালা ভরাট হয়ে যাচ্ছে, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে ও মশার প্রজননক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে দেখেছি, নালাগুলোতে পলিথিন এবং কর্কশিটের কারণে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে জনগণ ভোগান্তিতে পড়েছে। বায়েজিদে চন্দ্রনগরে একসময় বিশাল নাগিন পাহাড় ছিল। কাটতে কাটতে এটাকে অস্তিত্বহীন করে ফেলেছে। সোমবার ওখানে নির্মাণাধীন একটি ভবনের দেয়াল চাপা পড়ে একজন মারা গেছেন। এই ভবনের অনুমোদন আছে কিনা তা দেখতে হবে। পাহাড় কেটে বা নদী-নালা-খাল ভরাট করে কেউ বাড়ি বানাতে চাইলে সে বাড়ির অনুমোদন দেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে সিডিএকে আরো তৎপর হতে হবে।
উপর্যুক্ত বক্তব্য পড়ে অনেকে ধারণা করবেন এ যেন কোনো নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি বা নগরের ভুক্তভোগী কারো বক্তব্য। আসলে তা নয়। এই বক্তব্য খোদ নগরপিতা তথা সিটি মেয়রের। দীর্ঘদিন ধরে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে এ কথাগুলোই উচ্চারিত হয়েছে। মানববন্ধন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফোরামে নগরবাসীর পক্ষ থেকে পরিবেশবিদ, নগরবিদ এসব সমাধানে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তাতে যে ফললাভ হয়নি তার প্রতিফলন ঘটেছে মেয়রের বক্তব্যে।
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ৪০তম সাধারণ সভায় মেয়র উক্ত কথাগুলো বলেছেন। লালদিঘি পাড়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় নগরে পাহাড় কাটা ও পুকুর-জলাশয় ভরাটের পাশাপাশি দুষ্কৃতকারীরা গাছপালা কাটলেও এসব অপরাধ দমনে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। সংস্থাটির কার্যক্রম নিয়ে অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়ে লিখবেন বলেও জানান তিনি। মেয়র নগরে পলিথিনের ব্যবহার বৃদ্ধি ও পাহাড় নিধন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি পাহাড় কাটা বন্ধ এবং নদী-নালা-খালের ভূমি রক্ষাসহ চট্টগ্রামের পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান। সভায় বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে সিডিএকে অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
এ সময় মেয়র আরও বলেন, আমরা এ মৌসুমে পাঁচ লক্ষ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। তবে চট্টগ্রামের পরিবেশ রক্ষা করতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনে আমরা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করব, চিঠি দেব।
মেয়রের এই বক্তব্য ও ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানাতে হয়। কারণ সিটি করপোরেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান যখন জনগণের ভাষা বুঝতে পারেন, দেশ, পরিবেশ নগর নিয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে বলেন তখন আমরা সাধারণ মানুষ আশান্বিত না হয়ে পারি না। আমরা দেখতে চাই মেয়রের কথাগুলো শুধু কথার ফুলঝুরি হবে না। বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটবে। কারণ রাজনীতিবিদরা জনগণের কাছে অনেক ওয়াদা করেন কিন্তু চেয়ারে বসে তা ভুলে যান। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, মেয়র ভুলে যাওয়ার জন্য কথাগুলো বলেননি।