রাজিব শর্মা »
উত্তর চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার মুরাদপুর-হাটহাজারী মহাসড়কের মুরাদপুর রাস্তার পাশে উন্নয়ন কাজের কারণে গাড়ি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। ফলে এ সড়কের গাড়িগুলো অক্সিজেন-ষোলশহর দুই নম্বর সড়ক দিয়ে সাময়িকভাবে চলাচল করেছে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজটের। দুই নম্বর গেট থেকে অক্সিজেনের ২০ মিনিটের দূরত্বে পাড়ি দিতে লাগছে দীর্ঘ সময়।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল সরেজমিনে দেখা যায়, মুরাদপুর রাস্তার মাথা থেকে হাটহাজারী রোডে মাস তিনেক ধরে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় এ সড়কে চলাচলকারী হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও রাঙামাটির যানবাহনগুলো আপাতত দুই নম্বর গেইটের রোড দিয়ে সাময়িকভাবে চলাচল করছে। এতে অফিস শুরু ও ছুটির সময়ে ষোলশহরের দুই নম্বর গেট সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে নিত্য যানজট। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ যানজট আরো তীব্র হয়।
মুরাদপুর, বহদ্দারহাট দুই নম্বর গেট, জিইসি মোড়, লালখানবাজারের এ যানজট নিরসনে ইতিপূর্বে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ (উত্তর) থেকে বেশ কিছু স্থানে ল্যাপলাইনসহ একাধিক নানা উদ্যোগ নেয়ায় যানজট নিরসনে কিছুটা সুফল মিলছে বলে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও এর কোন সুফল মিলছে না বলে জানান ড্রাইভার ও যাত্রীরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মো. রায়হান বলেন, ‘রমজানে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হলেও আমাদের কয়েকটি ডিপার্টমেন্টের ক্লাস ও কোচিং করতে হয়। সকালে বের হলে দুই নম্বর গেট দিয়ে যেতে আমাদের সবচেয়ে বেশি অপচয় হয় সময়ের। অনেকসময় ক্লাসের সময়ও চলে যায়। পুলিশ ল্যাপলেইন দিয়ে যানজট নিরসনের চেষ্টা করছে কিন্তু আমি তো দেখছি না। প্রতিদিনই তো যানজটের মধ্যে ক্লাসে যেতে হয়।’
আমান বাজার থেকে চকবাজার কোচিং করতে আসা তানিমা আক্তার বলেন, ‘আমি চকবাজারে কোচিং করি। সামনে আমার এসএসসি পরীক্ষা। প্রতিদিন আমার তিনটি কোচিং ক্লাস থাকে। কিন্তু আগে মুরাদপুর দিয়ে গেলে আমার কাজ সহজ হতো। মুরাদপুরের রাস্তাটি বন্ধ থাকায় আমাকে দুই নম্বর গেট দিয়ে মুরাদপুর আসতে হয়, সেখান থেকে চকবাজারের গাড়ি ধরতে হয়। এতে সময় চলে যায়। যার ফলে কোচিংয়ে ঠিকমত অংশ নিতে পারি না।’
অক্সিজেনের একটি টেক্সটাইল মিলে কাজ করা শ্রমিক শারমিন আক্তার বলেন, ‘আজ তিন মাস ধরে আমার কাজের সমস্যা হচ্ছে। সময়মতো অফিসে পৌঁছাতে পারি না। আগে মুরাদপুর থেকে যত সহজে কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারতাম এখন আর পারি না। দুই নম্বর গেইট দিয়ে যেতে অনেক দেরি হয়ে যায়।’
উপ কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) জয়নুল আবেদীন বলেন, ল্যাপলেইনের ফলে আগের চেয়ে অনেক যানজট কমে এসেছে। গত রমজানের চেয়ে এই রমজানে যানজট অনেকটা কম। তবে মাঝেমাঝে যেসব যানজট দেখা যায় তা হয়তো ট্রাফিক সিগন্যালের কারণে হয়। তবে আমরা চেষ্টা করছি যানজট নিরসন করতে।
তিন নম্বর ফতেয়াবাদ রোডের চালক মো. জামিল হোসেন বলেন, আমরা আগে মুরাদপুর হয়ে নিউমাকের্ট যেতাম। এখন তা পারছি না। এখন আমাদের মুরাদপুর ১ নম্বর রেলগেইট এলাকায় যাত্রীদের নামিয়ে দিতে হয়। এই এক কিলোমিটার পথ যাত্রীরা হেঁটে বা রিকশায় চলাচল করে। এরপর মুরাদুপরের রাস্তা পার হতে হয়।
বদনা শাহ্ মার্কেটের মালিক সহজ মিয়া বলেন, আজ তিন মাস ধরে পথচারীরা চলাচলের জন্য এই একটি সাঁকো ব্যবহার করছে। এই ছোট সাঁকো দিয়ে তো এতো মানুষ চলাচল করতে পারে না। যাত্রীদের সাময়িক ভোগান্তি হচ্ছে, প্রশাসনের উচিত এটির পাশাপাশি আরেকটি সাঁকো নির্মাণ করা। এই সাঁকো যদি কোনভাবে ভেঙে পড়ে মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।
৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোবারক আলী বলেন, মুরাদপুরের পরিস্থিতি ভয়াবহ। নগরে প্রবেশ করতে একটি সাঁকোর উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। চলাচলের জন্য মোহাম¥দপুর ও চাঁনমিয়া সওদাগর এলাকার রাস্তা রয়েছে কিন্তু তা বড় গাড়ি চলাচলের অনুপযুক্ত। যার ফলে দুই নম্বর গেইটের রাস্তাটির উপর খুব চাপ যাচ্ছে। তাছাড়া মুরাদপুরের পথচারীরা পারাপারে যে সাঁকো ব্যবহার করছেন তাও রাত ১১টার পর বন্ধ করে দেয়া হয়। বর্তমানে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে হঠাৎ মুরাদপুর এলাকায় কোন দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার অবস্থা আর নেই। আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি কিভাবে ঢুকবে তার জন্য বড় কোন রাস্তা নেই। আমরা এই বিষয়ে চসিকের সাথে কথা বলেছি। তাছাড়া ষোলশহরে স্থানীয়দের পাশাপাশি হাটহাজারী, ফতেয়াবাদ, রাউজান থেকে আসা যাত্রীদের ভোগান্তিও চরমে।