মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে কিছু মানুষের ‘উষ্মা’ দুঃখজনক 

ভূমিসেবা সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী

সুপ্রভাত ডেস্ক »

মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটার প্রশ্নে কিছু মানুষের উষ্মা খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

শনিবার দুপুরে নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম হলে জেলা প্রশাসন আয়োজিত ভূমিসেবা সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। খবর বিডিনিউজের।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে এই বাংলাদেশ দিয়ে গেছেন আমাদেরকে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাদের যে পরবর্তী প্রজন্ম, যারা সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করেন বলে আমরা ধারণা করে থাকি- সেই মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক কোটার বিষয়টা ছিল।

সেটা যথাযথভাবে পালনের জায়গায় অনেক ক্ষেত্রে অমনোযোগিতা হয়েছে, অনেক জায়গায় সেটাকে মান্য করা হচ্ছে না। সে বিষয়ে উচ্চ আদালত থেকে একটা নির্দেশনা এসেছে। আমরা সকলকে অনুরোধ জানাব, উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি এবং নির্দেশনার প্রতি সবাই যথাযথভাবে সম্মান দেখাবেন।

আদেশটি এখনো হাতে না আসায় সুনির্দিষ্ট মন্তব্য করছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের এত বছর পর এসে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের কোটার প্রশ্নে কিছু মানুষের যে এত উষ্মা- এটা আসলে আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক।

আমাদের দেশ যারা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, তাদের ক্ষেত্রে এটা দ্বিতীয়বার যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয় কোনো আলোচনার মাধ্যমে, সেটা কাম্য নয়।’

অন্য এক প্রশ্নে নওফেল বলেন, ‘বাংলাদেশ বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি অতীতে দীর্ঘদিন ধরে সরকারের আনুকূল্য পেয়ে ফুলে ফেঁপে একটা পর্যায়ে পৌঁছেছে। সেই গোষ্ঠীগুলো যে একটা পর্যায়ে অনেক বড় হয়নি, এটা তো বলা যেতে পারে না। তারা রাজনীতিতে বিদ্যমান, সমাজে বিদ্যমান এবং অর্থনীতিতে খুবই শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে। এই শক্তিটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধিতা অবশ্যই করবে।

এখনও কিছু রাজনৈতিক দল বলছে যে, পাকিস্তানের সময় নাকি ভালো ছিল। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, পাকিস্তানের সময় নাকি পরিস্থিতি ভালো ছিল। কতটুকু পাকিস্তান প্রেম একটি দলের মহাসচিবের থাকতে পারে সেটা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। এমন একটা পরিস্থিতিতে আমরা আছি।’

পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে স্বাধীনতার এত বছর পরেও ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ শক্তি এভাবে আছে কিনা জানা নেই বলেও মন্তব্য করেন নওফেল।

এই গোষ্ঠী শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে বিচ্যুত করে এক ধরনের সাম্প্রদায়িকীকরণের চেষ্টা করে বলেও মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী। বলেন, ‘আমরা সব সময় বলে এসেছি, শিক্ষা ব্যবস্থা ও পাঠ্যক্রমের মধ্যে সব ধর্মের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধার জায়গাটাতে থাকব।’

কর্ণফুলীর চরে বর্জ্য শোধনাগার ‘যথাযথ নয়’

কর্ণফুলী নদীর চর বাকলিয়ায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের যে বর্জ্য শোধনাগার করতে চাইছে, সে বিষয়ে এক প্রশ্নে চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য নওফেল বলেন, ‘পরিবেশের ক্ষতি হবে, সে রকম কোনো কাজ যাতে আমরা না করি।

কেউ যদি পরিকল্পনা করে থাকে, নদীর মধ্যবর্তী জায়গায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হবে সেটা কখনোই নদীর জন্য ভালো ফল বয়ে আনতে পারে বলে আমি মনে করি না।’

এই বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবেন জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমি পরিবেশের সঙ্গে কথা বলব। সারা বাংলাদেশের মানুষের দৃষ্টি থাকে কর্ণফুলী নদীর উপরে। সেই কর্ণফুলী নদীর মাঝখানে চরে বর্জ্য ফেলা হবে, বর্জ্য থেকে কী করা হবে, সেটা পরিবেশের জন্য কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, সেটা ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে। তবে আমার মনে হয় না, এটা পরিবেশের দিক থেকে কখনই যথাযথ হতে পারে না।

‘বিশেষ করে নদীর ব্যবস্থাপনা ও নদীর পানির বিশুদ্ধতা, সেটা দূষণমুক্ত রাখা এবং নদী চলাচলের উপযুক্ত রাখা, সে বিষয়ে শুধু নির্বাহী বিভাগ নয়, বিচার বিভাগ থেকেও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে। নদীকে রক্ষা করতে হবে। নদীর প্রাণ আছে সেভাবে করেই আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতিতে আমরা নদীকে সম্মান করি।’

নতুন বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম নয়, কক্সবাজারে

চট্টগ্রাম অঞ্চলে নতুন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘দক্ষিণ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবান মিলিয়ে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নেই। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত সম্মতির জন্য আমরা প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি।

‘কক্সবাজারে মূলত সেই বিশ্ববিদ্যালয় যাতে হয়। তাহলে আমাদের কক্সবাজার জেলা, বান্দরবান এবং দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে শিক্ষার্থীরা আসতে পারবে। সেভাবে করে জায়গাটা নির্ধারণ করা হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টি হবে কক্সবাজারে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।

বিশেষ অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি সঞ্জয় সরকার, জেলা পুলিশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আহমেদ।