মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানে সে দেশের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চি ও তাঁর দলের শীর্ষনেতারা কারা অন্তরীণ হয়েছেন গত সোমবার সকালে। ওইদিনই গত নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় অর্জনকারী সু চি’র দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)’র নতুন করে ক্ষমতাগ্রহণের কথা ছিল। তার আগেই ঘটে গেল এ সেনা অভ্যুত্থান। মিয়ানমারে ক্ষমতার এই অপ্রত্যাশিত পালাবদলে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশও এই উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সমান অংশীদার।
কারণ, এই সামরিক কর্র্তৃত্ব দেশটিতে অভ্যন্তরীণ নৈরাজ্য সৃষ্টির পাশাপাশি বাংলাদেশের সীমান্তেও অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে অতীতে। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও অভিযানের মুখে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় থাকা ওই রোহিঙ্গারা এখন বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে জীবন কাটাচ্ছে।
মিয়ানমারে এই সামরিক অভ্যুত্থান আরও যে শঙ্কাকে সামনে নিয়ে এসেছে তা হলো দেশটির রাখাইন রাজ্যে থাকা আরও ছয় লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানের দুর্দশা নিয়ে। এদের সে দেশে থাকার মতো পরিবেশ ও নিরাপত্তা ব্যাপকভাবে বিঘিœত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ।
বিশ্ব সংস্থাটির একজন মুখপাত্র এ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক জান্তাদের প্রতি কঠোর মনোভাব প্রকাশ করলেও আরেক বৃহৎশক্তি চীন বিষয়টিকে খুব হালকাভাবে নিয়ে বলেছে, এটি হলো সে দেশের মন্ত্রিপরিষদের বড় ধরনের রদবদল মাত্র। চীন মিয়ানমারের সঙ্গে তার পূর্বেকার সম্পর্ক অব্যাহত রাখবে বলেও জানিয়েছে।
এদিকে আজ (৪ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে মিয়ানমারের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের কথা ছিল। কিন্তু মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে তা অনিশ্চিত হয়ে গেল। তবে বাংলাদেশ থেকে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে যেন বর্তমান ইস্যুর প্রাধান্যে রোহিঙ্গা ইস্যুটি কোনোভাবে চাপা পড়ে না যায়। বিভিন্ন কূটনৈতিক সূত্র থেকে এমন আশাবাদও প্রকাশ পাচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে বিগত সময়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্পন্ন হয়েছে সেদেশের সামরিক শাসনের কালে।
১৯৭৮ এবং ১৯৮২ সালে সংঘটিত ওই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার ধারায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেবার এই সম্ভাবনাকে খুব একটা অমূলকও বলা যাচ্ছে না। জাতিসংঘ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ থেকে কিছুটা অব্যাহতি পেতে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এই কৌশলটি প্রয়োগে এগিয়ে আসতে পারে। সম্ভবত সে কারণেই কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশও এখন প্রবলভাবে তৎপর। মনে রাখতে হচ্ছে, অংসান সু চির সময়ে বর্তমান সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং ও কতিপয় জেনারেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
আমাদের প্রত্যাশা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি অব্যাহত থাকুক এবং মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসুক সে দেশের মানুষের প্রত্যাশার অনুকূলে, যে অভিব্যক্তি তারা প্রকাশ করেছে গত নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে অং সান সু চি কে বিপুলভাবে নির্বাচিত করার মাধ্যমে।
মতামত সম্পাদকীয়