সুপ্রভাত ডেস্ক »
একটা সময় হারই চোখ রাঙাচ্ছিল। মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের পর ম্যাচটা পুরোপুরি হেলে যায় ভারতের দিকে। একটা সময় স্কোর ছিল ৯ উইকেটে ১৩৬! তখনও ভাবা যায়নি হেরে যাওয়া ম্যাচটাও এভাবে জেতা সম্ভব। দশম উইকেটে মোস্তাফিজের সঙ্গে রেকর্ড জুটি গড়ে সেটা সম্ভব করে ছেড়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। রবিবার মিরপুরে মিরাজের ব্যাটিং বীরত্বেই ভারতের বিপক্ষে ১ উইকেটের অবিশ্বাস্য জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে ৩ ম্যাচের সিরিজ ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো বাংলাদেশ। খবর বাংলাট্রিবিউনের।
এই মুহূর্তে গোটা পৃথিবী ফুটবল উন্মাদনায় বুঁদ হয়ে আছে। বাংলাদেশ বিশ্বকাপের মঞ্চে না খেললেও ফুটবল নিয়ে চর্চাও কম নয়। বিশেষ করে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল ফুটবল দল নিয়ে বাংলাদেশি সমর্থকদের ভিন্নরকম আবেগ কাজ করে। ফুটবল বিশ্বকাপের ডামাডোলের মাঝেই রোববার শুরু হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ওয়ানডে সিরিজ। ফুটবল বিশ্বকাপের কারণে দর্শকদের আগ্রহে ভাটা পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছিল। কিন্তু সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের দর্শকরা গ্যালারিতে উল্লাস করেছেন। শ্বাসরুদ্ধকর এমন জয়ের পর নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, ফুটবল উন্মাদনা ছাপিয়ে ক্রিকেট উন্মাদনায় মেতে উঠবে দেশের ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকরা।
মাহেন্দ্র সিং ধোনির বিপক্ষে সাত বছর আগে সিরিজ জয়ের ইতিহাস থাকলেও ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশকে কোনওভাবেই এগিয়ে রাখার সুযোগ নেই। সেই ভারতকেই নাস্তানাবুদ করেছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। তবে মিরপুরের স্লো উইকেটে ভারতকে অল্প রানে বেঁধে ফেলার পরও ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য সহজ হয়নি। টপ অর্ডার ও মিডল অর্ডারের ব্যর্থতার পর বাংলাদেশ দল ১৩৬ রানে হারায় ৯ উইকেট। তখনও জয় থেকে ৫১ রান দূরে বাংলাদেশ। শেষ উইকেটে মেহেদী হাসান মিরাজ ও মোস্তাফিজুর রহমানের দৃঢ়তায় ২৪ বল আগেই ম্যাচ জিতে যায় বাংলাদেশ।
পাক্কা ৩৯ বল, টেলঅ্যান্ডার মোস্তাফিজকে নিয়ে লড়াই করেছেন মিরাজ। তার অবিশ্বাস্য ৩৮ রানের অপরাজিত ইনিংসের উপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ দল জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায়। ৩৯ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৩৮ রানের ইনিংস খেলেন মিরাজ। ১১ বলে ১০ রান করে মিরাজকে যোগ্য সঙ্গ দেন মোস্তাফিজ।
অথচ এই ম্যাচটি এত কঠিন ছিল না। ১৮৭ রানের জবাবে খেলতে নেমে ২৬ রানে দুই উইকেট হারালেও সাকিব ও লিটন মিলে জুটি গড়েন। তাদের ৪৮ রানের জুটিতে প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশ। লিটনের আউটের পর সাকিব (২৯), মুশফিক (১৮), মাহমুদউল্লাহ (১৪) নিজেদের ইনিংস গড়তে পারেননি। বিশেষ করে ৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে হারের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে মিরাজ ও মোস্তাফিজ দলকে জেতালেন। মিরপুরে অবিশ্বাস্য এই জয় বাংলাদেশের ক্রিকেটে ইতিহাসে অনন্য হয়ে থাকবে।
এর আগে ভারতের শক্ত ব্যাটিং লাইনআপকে গুড়িয়ে দেন সাকিব আল হাসান ও এবাদত হোসেন। সাকিবের বাঁহাতি স্পিনের সঙ্গে এবাদতের গতিময় বোলিংয়েই মূলত খেই হারিয়েছে সফরকারীরা। লোকেশ রাহুলের একার লড়াইয়ে ভারত ১৮৬ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায়। ৭০ বলে ৫ চার ৪ ছক্কায় ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন লোকেশ। বাকি ব্যাটারদের মধ্যে কেবল তিনজন তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পেরেছেন। রোহিত শর্মা (২৭), শ্রেয়ার আয়ার(২৪)ও ওয়াশিংটন সুন্দর (১৯) রানের ইনিংস খেলেন।
শক্ত ব্যাটিং লাইনআপকে আটকে রাখতে সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা রেখেছেন সাকিব আল হাসান। তার স্পিন জাদুতে ভারতীয় ৫ ব্যাটার খেই হারায়। বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে ভারতের বিপক্ষে সবচেয়ে কম রানে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখান তিনি। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলির পর ওয়াশিংটন সুন্দর, শার্দুল ঠাকুর ও দীপক চাহারের উইকেট নিজের নেন সাকিব। বাঁহাতি স্পিনারদের যোগ্য সঙ্গ দেন পেসার এবাদত হোসেন। তার গতিময় বোলিংয়ের কাছেও পরাস্ত হয় ভারতের ব্যাটাররা। সাকিব ক্যারিয়ারের চতুর্থ ৫ উইকেট তুলে নিলেও এবাদত ৪ উইকেট নিয়ে করেছেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৪১.২ ওভারে ১৮৬ (রাহুল ৭৩, রোহিত ২৭, আইয়ার ২৪, ওয়াশিংটন ১৯; সাকিব ৫/৩৬, এবাদত ৪/৪৭)।
বাংলাদেশ: ৪৬ ওভারে ১৮৭/৯ (মিরাজ ৩৮*, লিটন ৪১, সাকিব ২৯; সিরাজ ৩/৩২, কুলদীপ ২/৩৭, ওয়াশিংটন ২/১৭)