মিরসরাই-চকরিয়া : সড়কে ঝরল ৪ প্রাণ

নিজস্ব প্রতিনিধি, মিরসরাই ও চকরিয়া »

মিরসরাইয়ে অজ্ঞাত গাড়ির ধাক্কায় তিন বন্ধু নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সুফিয়া রোড এলাকার চট্টগ্রামমুখী লেইনে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন মিরসরাই উপজেলার মায়ানী ইউনিয়নের বড়ুয়া পাড়ার সুরেশ বড়ুয়ার পুত্র শুভ্রজিৎ বড়ুয়া (৪০), সভ্য রঞ্জন বড়ুয়ার পুত্র রুবেল বড়ুয়া (৪০) ও মেগল বড়ুয়ার পুত্র নিপু বড়ুয়া (৪৫)।
জানা গেছে, শুভ্রজিৎ বড়ুয়া (৪০) ছিলেন একটি সিমেন্ট বিক্রির দোকানের কর্মচারী। রুবেল বড়ুয়া (৪৫) কাঠমিস্ত্রি আর নিপু বড়ুয়া কৃষক। তিন বন্ধু সারাদিন কাজ সেরে এসে রাতে পাড়ার এক দোকানে আড্ডা জমাতেন। বৃহস্পতিবার রাতেও একসাথে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন তিনজন। খাওয়া-দাওয়া সেরে এক মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে গাড়ির ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিন বন্ধু।
দুর্ঘটনায় নিহত রুবেল বড়ুয়ার বড় ভাই বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, রুবেল, শুভ্রজিৎ ও নিপু খুব কাছের বন্ধু ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে কোন এক বিয়ে বাড়ীতে নিমন্ত্রণ খেয়ে ফেরার পথে এই দুর্ঘটনার শিকার হয় তারা। তিনজনের লাশ বাড়িতে আনার পর ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে গতকাল শুক্রবার দুপুরে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। রুবেলের স্ত্রী, একটি ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে।
শুভ্রজিতেরও স্ত্রী আর ছয় বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে। নিপ্পুরও স্ত্রী, একটি ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে। বাবা হারিয়ে এই সন্তানরা এখন অসহায় হয়ে গেল। সড়ক দুর্ঘটনায় একসাথে একিই গ্রামের তিন বন্ধুর অকাল মৃত্যুতে গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় ,নিহত নিপ্পু বড়ুয়ার স্ত্রী সঞ্চিতা বড়ুয়া চিৎকার করে বলছেন, ‘আমার সন্তানদের এখন কে দেখবে। আমি সন্তানদের নিয়ে কোথায় যাবো’।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক বোরহান উদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে মিরসরাইয়ের সুফিয়া রাস্তার মাথা এলাকায় অজ্ঞাত গাড়ির ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী তিন ব্যক্তি ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। লাশগুলো নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। দুর্ঘটনায় দুমড়েমুচড়ে যাওয়া মোটরসাইকেলটি আমরা উদ্ধার করে হেফাজতে নিয়েছি।
সুপ্রভাতের চকরিয়া প্রতিনিধি জানায়, চকরিয়ায় মাত্র তিনদিন পর ২০ জানুয়ারি বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা ছিল হুমায়ন কবির প্রকাশ লোকমান (৩০) নামের এক তরুণের।
কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস; বিয়ের পিঁড়িতে বসার আগেই যাত্রীবাহী একটি বাস কেড়ে নিয়েছে হুমায়ন কবিরের জীবন প্রদীপ। গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে কক্সবাজার চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপজেলার ডুলাহাজারা বালুচর রাস্তার মাথা এলাকায় ঘটেছে এ ঘটনা।
নিহত হুমায়ন কবির চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বালুচর এলাকার বশির আহমদের ছেলে। তিনি মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রিষ্টান হাসপাতালের দারোয়ানের দায়িত্বে ছিলেন।
নিহত হুমায়ন কবিরের মামাতো ভাই রেজাউল করিম জানান, আগামী সোমবার হুমায়ন কবিরের বিয়ের দিন ধার্য্য ছিলো। পার্বত্য জেলা বান্দরবানের আলীকদম থেকে সোমবার বরযাত্রী গিয়ে তার নববধূকে নিয়ে আসার কথা ছিলো।
সেজন্য বিয়ের বাজার-সদাই নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন হুমায়ন। ইতোমধ্যে বিয়ের জন্য সব আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবসহ পরিচিতদের নিমন্ত্রণও করে ফেলেছে।
তিনি বলেন, মোটরসাইকেল নিয়ে শুক্রবার বিয়ের কাজের জন্য সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে চকরিয়ার দিকে যাচ্ছিলো। কিন্তু পথিমধ্যে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারমুখী দ্রুতগতির একটি যাত্রীবাহী বাস ওভারটেক করতে গিয়ে হুমায়ন কবিরকে চাপা দেয়।
এতে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায় তিনি। তার মৃত্যুতে পরিবারে ও এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
চকরিয়া উপজেলার মহাসড়কের মালুমঘাট হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.মেহেদী হাসান বলেন, মোটরসাইকেল আরোহী হুমায়ন কবির মহাসড়কের বালুচর রাস্তার মাথা এলাকায় নিহত হয়েছে।
খুব সকালে ঘটনাটি হওয়ায় কীভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে জানতে পারিনি। তবে, শুনেছি যাত্রীবাহী একটি বাস মোটরসাইকেল আরোহী হুমায়ন কবিরকে চাপা দিয়ে পালিয়ে গেছে। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। তিনি বলেন, নিহতের মরদেহ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।