বিচিত্র কুমার »
এক ছিল ছোট্ট এক ছেলে, নাম তার রাফি। বয়স মাত্র আট, কিন্তু কাজকর্মে যেন দশ-বারো বছরের ছেলের মতো। তার মা মালতি বেগম ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষিকা। বাবা মারা গেছেন অনেক আগে, তাই মা-ই রাফির একমাত্র ভরসা।
রাফি ছোটবেলা থেকেই খুব ভদ্র, পরিশ্রমী আর বাধ্য ছেলে ছিল। সে মায়ের সব কথা মন দিয়ে শুনত, এবং চেষ্টা করত সব কাজ নিজে নিজে করতে। সকালে উঠে নিজে বিছানা গুছিয়ে নিত, দাঁত মাজত, মায়ের সঙ্গে বসে নাশতা করত। তারপর স্কুলের জন্য ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে যথাসময়ে স্কুলে যেত।
স্কুলে সে সবার প্রিয়। শিক্ষকরা তার শৃঙ্খলা আর মনোযোগ দেখে অবাক হতেন। বন্ধুরা যখন খেলায় ব্যস্ত থাকত, রাফি তখন হোমওয়ার্ক শেষ করে তারপর খেলত। কখনো মায়ের ওপর কোনো চাপ দিত না, বরং মা যেন কষ্ট না পান সেই চেষ্টাই করত সবসময়।
একদিন বিকেলে মা স্কুল থেকে ফিরে দেখলেন, রান্নাঘরে ভাত বসানো, কাপড় শুকাতে দেওয়া আর ঘর ঝাঁট দেওয়া সবই হয়ে গেছে। তিনি বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করলেন,
রাফি, এসব কে করলো?
রাফি হেসে বলল,
আমি মা। তুমি তো ক্লান্ত হয়ে এসো, তাই ভেবেছি, একটু সাহায্য করি।
মায়ের চোখে জল এসে গেল। তিনি ছেলেকে বুকে টেনে বললেন,
তুই সত্যিই আদর্শ ছেলে রাফি। তোর বাবার মতো দায়িত্ববোধ তোর ভেতর দেখতে পাই।
একদিন স্কুলে ‘আদর্শ সন্তান’ বিষয় নিয়ে একটি প্রতিযোগিতা হলো। সবাইকে নিজের পরিবার ও দায়িত্ব নিয়ে একটি গল্প লিখতে বলা হয়েছিল। রাফি লিখেছিল তার মায়ের কথা যে কীভাবে একা হাতে তাকে মানুষ করছেন, কীভাবে কঠোর পরিশ্রম করেও সবসময় হাসিমুখে তাকে আগলে রাখেন। গল্প শেষে সে লিখেছিল
‘আমি যদি প্রতিদিন নিজের কাজ নিজে করতে পারি, ভালো ব্যবহার করি, সময়মতো পড়ালেখা করি এবং মাকে সাহায্য করি তবেই আমি একজন আদর্শ ছেলে হতে পারব।’
সেদিন স্কুলের প্রধান শিক্ষক তার লেখা পড়ে দাঁড়িয়ে করতালি দিয়েছিলেন। রাফির গল্প ছিল সবচেয়ে মর্মস্পর্শী, আর সে-ই পেয়েছিল প্রথম পুরস্কার।
পুরস্কার পেয়ে সে দৌড়ে এসে মায়ের হাতে তুলে দিয়েছিল সার্টিফিকেটটি। বলেছিল,
মা, এটা তোমার জন্য। কারণ তুমি না থাকলে আমি কখনো আদর্শ হতে পারতাম না।
মা চোখ মুছে বলেছিলেন,
আদর্শ সন্তান শুধু পরীক্ষায় ভালো নম্বর পায় না, সে পরিবারের দায়িত্ব বোঝে, অন্যদের সাহায্য করে, আর ভালো মানুষ হয়ে ওঠে। তুই সেটাই করছিস রাফি। আমি গর্বিত।
রাফির এই গল্প শুধু তার স্কুল নয়, সারা পাড়ার ছেলেমেয়েদের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছিল। সবাই বলত,
‘রাফি হলো আমাদের ছোট্ট নায়ক, আদর্শ ছেলের আসল উদাহরণ।’




















































