মায়ের দোয়াই ছিলো সাফল্যের মূলমন্ত্র

‘সি’ ইউনিটে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন আরমান

আহমেদ জুনাইদ, চবি »

চুপচাপ কৌতূহলী তরুণ আরমান হোসাইন। স্বভাবে শান্ত হলেও জানার আগ্রহ সবসময়ই ছিলো প্রবল। অদম্য মেধা দিয়ে স্কুল জীবনেই শিক্ষকদের নজর কাড়েন। প্রতিটি ক্লাসেই তার অবস্থান ছিলো প্রথম থেকে তৃতীয় স্থানের মধ্যে। মেধাবী এই তরুণের জীবন সহজ ছিলো না কখনোই। দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করে চালিয়ে গিয়েছেন পড়ালেখা।

বাবা মাজহারুল ইসলাম চট্টগ্রামে ফলের ব্যবসা করেন। স্কুল জীবন থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার দোকানে বসতেন তিনি। তবে এসব কিছুই বাধা হতে পারেনি আরমানের সাফল্যে। লড়াই করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ সেশনের ভর্তি পরীক্ষায় ‘সি’ ইউনিটে অর্জন করেছেন প্রথম স্থান। ২২৬৪ জন শিক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে রেখেছেন নিজের মেধার স্বাক্ষর। আরমানের সব কিছুর পেছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে ছিলো তার মা মর্জিনা বেগম। পেশায় গৃহিণী মর্জিনা বেগম সবসময় উৎসাহ দিতেন ছেলেকে। তার বিশ্বাস ছিলো আরমান ভালো কিছু করতে পারবে। তবে প্রথম হবে সেটা ভাবেননি তিনি। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি জানান, ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার প্রতি আরমানের অনেক আগ্রহ ছিলো। কষ্টের সংসারে সবসময় চেয়েছি ছেলের পড়তে যেন অসুবিধা না হয়। তবে প্রয়োজন অনুসারে প্রাইভেট টিচার দিতে পারিনি। আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, আল্লাহ ছেলেকে সম্মানিত করেছে।

জানা গেছে, আরমান তার পরিবারের বড় সন্তান। পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম কমার্স কলেজে। মেধাবী এই ছাত্র মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক উভয় পরীক্ষাতেই জিপিএ ৫.০০ পেয়েছেন। এই দুই পরীক্ষার জিপিএ মিলে ২০ এবং ভর্তি পরীক্ষায় ৭৪ দশমিক ৭৫ নম্বর পেয়েছেন তিনি। ১২০ নম্বরের পরীক্ষায় মোট ৯৪ দশমিক ৭৫ নম্বর পেয়েছেন তিনি। প্রথম হওয়ার অনুভূতি জানিয়ে আরমান বলেন, চট্টগ্রামে বড় হয়েছি। তাই চবি সবসময় পছন্দের শীর্ষে ছিলো। রেজাল্ট পেয়ে বিশ্বাস হচ্ছিলো না। ভালো পরীক্ষা দিয়েছিলাম। কিন্তু ভাবিনি এতো ভালো করবো। চেষ্টা করেছি নিয়মিত পড়াশোনা করতে। ভর্তি পরীক্ষার সময় প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা করে পড়ার চেষ্টা করতাম। অনেক সময় হতাশ হয়ে যেতাম। ভাবতাম চান্স হবে না। তখন মা অনুপ্রেরণা দিতো।

আরমান কে তার বন্ধুরা অলরাউন্ডার হিসেবে জানতো। সে কখনোই শুধু পড়াশোনাতে নিজেকে ব্যস্ত রাখেনি। পড়ার পাশাপাশি নিয়মিত বন্ধুদের সাথে খেলতেন তিনি। তার প্রিয় খেলা ফুটবল। পছন্দের ফুটবলার লিওনেল মেসি। আরমানের মতে তার সাফল্যের অন্যতম কারণ তিনি সময়ের অপচয় করতেন না। ভর্তি পরীক্ষার সময় ডিঅ্যাক্টিভ রেখে ছিলেন ফেইসবুক আইডি।

আরমানকে এতোদূর আসতে সাহায্য করেছে কোচিং শিক্ষক ওমর ফারুক। তার মতে আরমানের মধ্যে প্রচ- ইচ্ছাশক্তি ছিলো। সে কখনোই ক্লাসের পড়ায় ফাঁকি দিতো না। কোচিং এর পরীক্ষায় আরমান চেষ্টা করতো ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য।

নবীন শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিয়ে আরমান বলেন, ভালো করার জন্য প্রয়োজন ইচ্ছাশক্তি। সাথে বাবা-মায়ের দোয়া। পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে যেন সময়ের অপচয় না হয়। আর স্রষ্টার কাছে চাইতে হবে সাহায্য।