সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক »
১ বলে প্রয়োজন ২ রান। মোহাম্মদ নওয়াজ ব্যাট হাতে প্রস্তুত। মাহমুদউল্লাহর বলটি পিচ করার পর নওয়াজ হাত উঠিয়ে জানালেন, তিনি প্রস্তুত নন। ততক্ষণে বল লেগ স্টাম্প ভেঙে দিয়েছে। ফিল্ড আম্পায়ার তানভীর আহমেদ বলটি ‘ডেড’ ঘোষণা করেন। মাহমুদউল্লাহও জোরালো কোনও আবেদন করলেন না! ফলে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই বহাল থাকলো। এরপর শেষ বলে চার মেরে পাকিস্তান টানা তিন টি-টোয়েন্টি জিতে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা দিলো।
নিয়ম অনুযায়ী, বল পিচ করার আগে ব্যাটার যদি মনে করেন কোনও কারণে তার বলটি খেলতে অস্বস্তি হচ্ছে, তাহলে তিনি বোলারকে থামিয়ে দিতে পারবেন। কিন্তু ভিডিওতে দেখা গেছে, মাহমুদউল্লাহর এই বলটি পিচ করার পরই নওয়াজ থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবু ফিল্ড আম্পায়ার সেটি ‘ডেড বল’ দেন। মূলত এসব ক্ষেত্রে মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
সেই বলটি নিয়ে মাহমুদউল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘একদম শেষ মুহূর্তে সে (নওয়াজ) সরে গেছে। তো আম্পায়ারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, বলটা বৈধ কিনা। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আমরা আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে সম্মান করি।’
টিভি আম্পায়ার শরফউদ্দৌলা সৈকত ওই ডেলিভারিটি নিয়ে বলেছেন, ‘তর্ক হলে হতে পারে। ব্যাটার যদি উইথড্র করে তাহলে ডেড বল হতেই পারে। টিভিতে হয়তো দেখা গেছে একটু লেট, তবে ডেথ বল ডাকার রাইট আম্পায়ারের। কোনও কারণে, ধরেন সামনে দিয়ে পাখি যেতে পারে… হয়তো টিভিতে অন্যরকম দেখা গেছে। কিন্তু আম্পায়ার ডেড বল ডেকেছে।’
বল পিচ করার পর ‘ডেড’ ডাকা যায় কিনা, এমন প্রশ্নে এই আম্পায়ার বলেছেন, ‘না, বল পিচ করার পর শুধু নয়, ইভেন বল মোকাবিলা করার আগেও যদি অপ্রস্তুত হয় তাহলেও। ধরেন ওই সময়ে যদি পাখি চলে যেতো চোখের সামনে দিয়ে, তাহলে কি করতো? ব্যাপারটা ওই রকমই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনটা হয়। ওটা মাপতে গেলে আসলে কঠিন। এটা রাইটলি স্পোর্টিংলি একসেপ্ট হয়েছে, দ্যাট ইজ ফাইন।’
শেষ ওভারে বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৮ রান। বোলিংয়ে আসেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। প্রথম বল খেলতে পারেননি সরফরাজ আহমেদ, দ্বিতীয় বলে জোরে শট করলেও মোহাম্মদ নাঈমের তালুবন্দি হন তিনি। পরের বলে হায়দার আলীকে ফিরিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন মাহমুদউল্লাহ। যদিও চতুর্থ বলে ইফতিখার আহমেদ বিশাল ছক্কা মারলে ম্যাচ চলে যায় পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু পঞ্চম বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ইয়াসির আলীকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ইফতিখার। তখন শেষ বলে জয়ের জন্য প্রয়োজন হয় ২ রানের। কিন্তু শেষ বলে ‘বিরল’ এক ঘটনায় ম্যাচ হারে বাংলাদেশ!
এই ঘটনা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। অনেক সমর্থক বলছেন, টানা হারের বৃত্তে থাকা দলের অধিনায়ক এমন স্পোর্টিং আচরণ না করলেই পারতেন। মাহমুদউল্লাহ কেন আউটের আবেদন করেননি, সেটি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। তবে অনেকেই আবার মাহমুদউল্লাহর স্পোর্টিং মনোভাবের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোতে তাহের নামের একজন লিখেছেন, ‘নওয়াজ যা করেছে ভুল ছিল। মাহমুদউল্লাহর বড় ভুল হয়েছে এটা মেনে নেওয়া। আমার চোখে বাংলাদেশ জিতেছে।’
সামির শাহদাব নামের একজনের বক্তব্য, ‘মাহমুদউল্লাহ, আপনি রিভিউ না নিয়ে ভারত থেকে অনেক ভক্ত পেয়েছেন। আপনি যখন অবসরে যাবেন, এটা আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা মূহূর্ত হবে। ওয়েলডান।’
সাঈদ শাহ আলম নামের আরেকজন স্পষ্ট করেই বলছেন, ‘নওয়াজকে অবশ্যই আউট দেওয়া উচিত ছিল। যখন তিনি দেখলেন বলটি তিনি খেলতে পারবেন না, তখন বোলারকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এটা তার কৌশল ছিল।’