বাড়ছে করোনা সংক্রমণ
চলছে জেলা প্রশাসনের অভিযানও
নিজস্ব প্রতিবেদক
‘বাবা, মাস্ক পরলে কান ব্যথা হয়ে যায়, তাই মাস্ক পরি না’ এমনই সরল স্বীকারোক্তি ৬০ বছরের সামসুল আলমের। তার মতো হাজারও মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছে না। মাস্ক ব্যবহার না করার প্রবণতা বাড়তে থাকলে শীতে করোনার প্রকোপ দ্রুতগতিতে বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরকার মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করলেও নগরের বাসিন্দারা সরকারের কঠোর বিধিনিষেধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিনিয়ত রাস্তা-ঘাট, গণপরিবহন, হাট-বাজার, মার্কেট, শপিং মল ও পার্কে মাস্ক ব্যবহার না করে চলাফেরা করছে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার শংকা।
নগরে গত কয়েকদিনে করোনার আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হারে বাড়লেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে উদাসীন মানুষ। মাস্ক ব্যবহার না করে রাস্তা-ঘাট, গণপরিবহনে চলাচল, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বিভিন্ন সভা সেমিনারে গণজমায়েত ও পার্কে আড্ডা দেওয়া নগরবাসীর নিত্য অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। থেমে নেই ক্লাবে বিয়ের আয়োজন, সেখানেও মাস্কের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে না।
নগরের শাহ আমানত সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা যাত্রী ও উপজেলাগামী যাত্রীদের অধিকাংশের মুখে মাক্স নেই। এছাড়া গণপরিবহনের চালক ও হেলপারের অধিকাংশই মাস্ক ব্যবহার করছে না।
মাস্ক ব্যবহার না করার কারণ জানতে চাইলে লোহাগাড়াগামী বাসের চালক মোহাম্মদ আমির বলেন, পকেটে মাস্ক আছে, গরমের জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে পারি না, অটো টেম্পু চালক মোহাম্মদ মুহিনউদ্দিন বলেন, যাত্রী ডাকতে হয়, মাস্ক পরলে যাত্রীরা শুনে না, তাই মাস্ক ব্যবহার করি না।
কোতোয়ালী মোড়ের ৬০ বছরের রিকশাচালক হযরত আলী কিছুটা পরামর্শের সুরে বলেন, বাবা সবার মাস্ক তো পরতে হবে, বাসায় মাস্ক ফেলে এসেছি, তাই মাক্স পরি নাই। জহুর হকার্স মার্কেটে গিয়ে দেখা যায় দোকান মালিক ও বিক্রেতাদের বেশিরভাগ মাস্ক ব্যবহার করছে না।
৫৬ বছরের ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন বলেন, সবসময় মাক্স ব্যবহার করি, পকেটে আছে, পরা হয়না আরকি।
নগরের বহদ্দারহার, ষোলশহর, কাজির দেউড়ি, রিয়াজউদ্দিন বাজার কাঁচাবাজারে গিয়েও একই চিত্র দেখা যায়। কেন মুখে মাক্স নেই তা জানতে চাইলে রিয়াজউদ্দিন বাজারের সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ বশর বলেন, নিশ্বাস নিতে পারি না, তাই মাক্স ব্যবহার করিনা। চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যাত্রী মোজাম্মেল হকের কাছে মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে বলেন, ক্লান্ত লাগে, তাই মাস্ক ব্যবহার করছি না।
বর্তমান মাস্ক বিক্রি কেমন এ বিষয় জানতে চাইলে বহদ্দারহাটের চান্দগাঁও ফার্মেসির মোহাম্মদ সৈকত বলেন, মাস্ক বিক্রি খুবই কম, এখন মাস্ক বিক্রি হয় না বললে চলে। করোনার শুরু থেকে রাস্তার পাশে মাস্ক বিক্রি করে আসছে মুহাম্মদ আরফাত। বর্তমানে মাস্ক বিক্রির অবস্থা জানতে চাইলে বলে, আগের চেয়ে মাস্ক বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। আগে যেখানে দৈনিক দুই হাজার টাকা বিক্রি করতাম, বর্তমানে তা ৮শ থেকে ৯শ টাকা।
মাস্ক ব্যবহার না করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি কেমন এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, আমরা শীতে যে ওয়েবের কথা বলছি, তার সাথে সরাসরি মাস্ক ব্যবহার জড়িত। জনগণ যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলে তাহলে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলবে। জনগণকে নিজ থেকে সচেতন হতে হবে, আমরা শুধুই সচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রচার করতেই পারব, সবশেষে জনগণকেই মাস্ক পরতে হবে।
মাস্ক না পরায় জেলা প্রশাসনের অভিযানে জরিমানা
বাধ্যতামূলক মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্টে ৬৯ জনকে ৩৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টা থেকে থেকে জেলা প্রশাসনের ৫জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে নগরের চকবাজার, রিয়াজউদ্দিন বাজার, টেরিবাজার, আগ্রাবাদ ও কাজির দেউড়ি এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী হাসান, মো. জিল্লুর রহমান, এস এম আলমগীর সোহেল, মো. আশরাফুল আলম ও মারজান হোসেন নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। অভিযানে মাস্ক ব্যবহারে সরকারি নির্দেশনা জানানো ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্নজনকে প্রায় এক হাজার মাস্ক বিতরণ করা হয়। অভিযান পরিচালনায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সহায়তা করেন।