এম আনোয়ার হোসেন »
গত শতাব্দীতে পৃথিবীর মানুষ দুবার মহাবিপদের সম্মুখীন হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধ ছিল তার জ্বলন্ত প্রমাণ। এরপর বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন সময় ধ্বংসযজ্ঞ হলেও সমগ্র বিশে^ একসাথে আর কখনো এমনটি ঘটেনি।
বিশ^বাসীর জন্যে দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, আজ কোনো তৃতীয় বিশ^যুদ্ধ নয়, মাত্র একটি জীবাণুই মহাবিপদ ডেকে এনেছে। বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ সোপানে আরোহণ করেছে বিশ^। সেই বিশ^ব্যবস্থাকে তছনছ করে দিয়েছে একটি জীবাণু। এটি করোনাভাইরাস হলেও চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এর নাম কোভিড-১৯। চীনের উহান শহর থেকে ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীব্যাপী। পৃথিবীজুড়ে এই জীবাণুতে আক্রান্ত হয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। প্রায় ৫ লাখ মানুষ নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করছে।
আমাদের দেশও তার ভয়াবহ আক্রমণের শিকার হয়েছে। তৃতীয় বিশ^যুদ্ধ হলে মারণাস্ত্রে আঘাত হানার ক্ষেত্রে পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন দেশের অবস্থান থাকতো।
কিন্তু সে রকম কোনো কিছু হয়নি। বরং গোটা বিশে^র মানুষ ‘বাঁচো এবং বাঁচাও’ নীতিতে একপক্ষ নিয়েছে। আর জীবাণুুটি মৃত্যুযজ্ঞে অন্যপক্ষ নিয়েছে। প্রথমদিকে বিশ^কে স্তব্ধ করে দিয়েছিল ভাইরাসটি। বিশে^র আকাশপথ, নৌপথসহ সড়ক যোগাযোগ প্রায় একসাথে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আর বিশ^বাসী নিজ নিজ ঘরে ঢুকে পড়েছে এ সময়। তারা জীবন বাঁচাতে এক অভিনব কায়দায় সংগ্রাম করেছে।
করোনার কারণে বিশ^ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ সকল ক্ষেত্রে বিশাল এক ধাক্কা লেগেছে।
উদ্বেগ, আতঙ্ক, হতাশা, মানসিক যন্ত্রণা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথী হয়ে চলেছে। ভ্যাকসিন আবিষ্কার হওয়া মাত্রই যে আমরা নিরাপদ হয়ে যাব তা কিন্তু নয়। ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলে গোটা পৃথিবীতে হঠাৎ ছড়িয়ে পড়বে তাও সহজ নয়। অথচ আমরা ভ্যাকসিনের অপেক্ষায় দিন গুনছি। অবশ্যই কভিড-১৯ কে দূরীভূত করতে হলে ¯্রষ্টার রহমত দরকার। দরকার ভ্যাকসিনের। দৈনন্দিন জীবনে নিজেদেরকে ঝুঁকিমুক্ত থাকার প্রাণপণ চেষ্টা করা প্রয়োজন।
আজকের কভিড-১৯ এর আক্রমণকেও আমাদের জীবনের একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। করোনাকাল হয়তো খুব সহজে শেষ হবে না, তাই নিতে হবে প্রোটেকশন এবং নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে হবে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এখন আমাদের জন্যে অপরিহার্য। সাবান পানি বা হ্যান্ড স্যনিটাইজার ব্যবহার করা, মুখে মাস্ক পরা সংক্রমণ থেকে বাঁচার অন্যতম উপায়। এতে করে যেমন সংক্রমিত কারো থেকে অন্য কারো নাকে-মুখে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটাতে পারবে না, ঠিক তেমনি সংক্রমণ থেকে নিজেরা সুরক্ষা পেতে পারেন। গত কিছুদিন ধরে সরকার মাস্ক ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। কোথাও কোথাও মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। এখানে সবচেয়ে যে বিষয়টা লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন, তা হলো- সঠিকভাবে মাস্ক পরিধান করা এবং মাস্ক পরিধান করা অবস্থায় এর উপরে হাত না লাগা, ঘরে এসে মাস্কটি সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা, ওয়ান টাইম হলে সেটি নিরাপদ স্থানে ফেলে দেয়া। ঘরে বা বাসায় এসে সাবান পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করা ইত্যাদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে হয়তো প্রাণঘাতি ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করা যাবে। এ ছাড়াও ঝুঁকিমুক্ত থাকা একান্তই প্রয়োজন। আসুন মাস্ক ব্যবহার করি, ঝুঁকিমুক্ত হই। বৈশি^ক এ মহামারি থেকে নিজে বাঁচি এবং অন্যকে বাঁচাই।
লেখক : কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক