মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি »
এক সময়ের জংলি ফল লটকন। পাহাড়ের ঢালু আর বনে-জঙ্গলে জন্ম নেওয়া গাছে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকতো এ ফল। সময়ের ব্যবধানে পাহাড়ের বিভিন্ন জনপদে দিন দিন ব্যাপকহারে চাহিদা বাড়ছে টক-মিষ্টি ফলটির। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাহাড়ি বাজার ছাড়িয়ে সমতলের বিভিন্ন জেলায় লটকনের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে।
উচ্চ ফলনশীল এই কৃষিপণ্য গাছের গোড়া থেকে শুরু করে প্রতিটি ডালে থোকায় থোকায় ঝুলতে দেখা যায়। পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ টক-মিষ্টি লটকন ছোট-বড় সবার কাছেই অনেক প্রিয়। পাহাড়ে আম-লিচুর বাণিজ্যিক চাষাবাদ হলেও বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ থেকে পিছিয়ে আছে লটকন। পার্বত্য খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলায় অপরিকল্পিতভাবে স্বল্প-পরিসরে ব্যক্তি উদ্যোগে লটকনের চাষাবাদ হচ্ছে। বাড়ির আঙিনা আর পাহাড়ের ঢালুতে গাছে গাছে ঝুলছে লটকনের সবুজ ও সোনালী রঙের থোকা। উপজেলার রাঙ্গাপানি এলাকার মালিহা গার্ডেনে পাহাড়ের ঢালে ব্যক্তি উদ্যোগে লটকন চাষ করে সফল হয়েছেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ও সফল কৃষি উদ্যোক্তা মো. মাঈন উদ্দিন। তাঁর সৃজিত মিশ্র ফলদ বাগানের চারপাশে ২০২০ সালে নরসিংদী থেকে ১৫০টি লটকনের চারা এনে লাগিয়েছিলেন তিনি। যা থেকে গত দু’বছর যাবৎ ফল সংগ্রহ করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি গাছের গোড়া থেকে শুরু করে ডালপালায় ঝুলে আছে অসংখ্য লটকন। গেলো বছরের তুলনায় এছর দ্বিগুণ ফলন এসেছে। স্থানীয় বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যাপক চাহিদা সম্পন্ন টক-মিষ্টি ফল লটকন প্রতি কেজি ১০০-১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্বল্প পরিশ্রম আর কম পুঁজিতে বেশি লাভের সুযোগ থাকায় লটকন চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই।
পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া লটকন চাষের জন্য বেশ উপযোগী জানিয়ে লটকন চাষি মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, প্রথমদিকে শখ করেই আমার মিশ্র ফল বাগানের চারপাশে ১৫০টি লটকনের চারা লাগিয়েছিলাম। গেলো বছর থেকে সবকটি গাছেই ফলন আসছে। গেলো বছরের তুলনায় এবছর অধিক ফলন এসেছে। লটকন চাষে তেমন কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। কম পুঁজি ও কম পরিচর্যায় ভালো ফলন পাওয়া যায়। কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হবে বেচা-বিক্রি। একেকটি গাছের লটকন তিন থেকে চার হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবো। ক্ষুদ্র ও বানিজ্যিক চাষিরা পাহড়ের ঢাল কিংবা অনাবাদি জায়গায় লটকন চাষে এগিয়ে আসতে পারেন।’ উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো ইউনুছ নূর জানান, পার্বত্য এলাকার মাটি লটকন চাষের জন্য বেশ উপযোগী। বাজারের চাহিদাও বেশি। উচ্চ ফলনশীল এই ফসল উৎপাদনে কৃষকদের আরও আগ্রহী করা প্রয়োজন।’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (অ.দা) ওঙ্কার বিশ্বাস জানান, ‘মানিকছড়ি উপজেলায় ব্যাক্তিগত উদ্যোগে প্রান্তিক পর্যায়ে ৮ হেক্টর টিলা ভূমিতে লটকট চাষ হয়েছে। লটকনের ফলনও ভালো হয়েছে। বেশি পরিমাণে গাছপালা ও ছায়া থাকায় পাহাড়ি এলাকার মাটি লটকন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। কম পুঁজি ও পরিশ্রমে বেশি লাভবান হওয়ায় কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।’