মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি »
পাহাড়ে ঘাস, লতাপাতা, সাইলেজ ও ভুট্টাসহ প্রাকৃতিক খাবার আর সেবাযত্নে বেড়ে উঠছে কোরবানি পশু। দেশি জাতের লাল গরুর পাশাপাশি প্রাকৃতিক খাবার নির্ভর এখানকার শাহীওয়াল, ফ্রিজিয়ান গরুর চাহিদা সমতলে বেশি হওয়ায় খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলায় আসন্ন কোরবানির হাটে বেচাকেনার জন্য আড়াই হাজার গরু, ছাগল সেবাযত্নে ব্যস্ত দেড়শ’ খামারী। তবে ছোট ও মাঝারি খামারগুলোতে পালন করা হচ্ছে বড় আকারের গরু। বাজারে গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে লাভ কম!
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয় ও খামার ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলায় ছোট, মাঝারি ও বড় ১৫০ গরু ও ছাগল খামারে এবার কোরবানি উপযোগী গরু ও ছাগল রয়েছে ২৬১০ টি। তবে ছোট ও মাঝারি খামারে মধ্যম সারির ষাঁড় বেশি। বড় গরু হাতেগোনা। প্রাকৃতিক ঘাস, লতাপাতা, সাইলেজ, ভূট্টা ভাঙ্গা খাদ্যে বেড়ে ওঠা এসব গরু ও ছাগলের মাংস স্বাদ হওয়ায় সমতলের কোরবানি দাতারা পাহাড়ের গবাদিপশুর প্রতি আকর্ষণ বেশি। ফলে এ জনপদে খামারিরা প্রতি কোরবানি বাজারে কোটি কোটি টাকার গরু ও ছাগল বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়।
উপজেলার গচ্ছাবিল এলাকার মো. জাবের হোসেন সোহাগের পারিবারিক ছোট একটি খামারে গিয়ে দেখা গেছে, গাভী, বাছুরের পাশাপাশি কোরবান উপযোগী একটি ফ্রিজিয়ান ষাঁড় রয়েছে। নাম রাখা হয়েছে ‘রাজা বাবু’। ‘রাজা বাবু’র গায়ের রং কালো। ওজন আনুমানিক ১৪-১৫ মণ। দাম হাঁকা হয়েছে সাড়ে ৬ লাখ টাকা। ।
একসত্যাপাড়ার মো. আনোয়ার হোসেনের মাঝারি খামারে শাহীওয়াল জাতের গরু রয়েছে ১৫টি। তিনি জানান, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক সবুজ ঘাস, সাইলেজ ও ভুট্টা ছাড়া আর কোন খাদ্য গরুর সামনে দেওয়া হয় না। গত বছর ঠিক এই সময়ে শাহীওয়াল গরুগুলো গড়ে এক লাখ টাকায় ক্রয় করে লালন-পালন করা হচ্ছে। প্রতিটি গরুর গড় মূল্য ৩ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে একাধিক ব্যবসায়ী ২ লাখ টাকা দামে কিনতে চাইছেন।
একই গ্রামের মো. কামাল হোসেন গত ৭/৮ বছর ধরে কোরবানির গরু মোটাতাজা ও বাজারজাতে বেশ সুনাম কুঁড়িয়েছেন। এবার তিনি ১৪টি দেশি, শাহীওয়াল ও ফ্রিজিয়ান ষাঁড় বড় করছেন। তিনি বলেন, আমি প্রাকৃতিক ঘাস ও সাইলেজ খাইয়ে গরু মোটাতাজা করে থাকি। ইতোমধ্যে শহরের অনেক পাইকার গরুর খোঁজ নেওয়া শুরু করেছেন। আশা করি এবারও ঘরে রেখেই গরু বিক্রি করব। আরেক ক্ষুদ্র খামারি মো. আনোয়ার হোসেন আনু তার ঘরে ৫টি সুঠাম শরীরের শাহীওয়াল ষাঁড় বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন। উপজেলার বড় ‘ইকবাল ডেইরি ফার্মে’ এবার অনেক আগ থেকে ৫০০ টাকা লাইফ ওয়েট পদ্ধতিতে নানা জাতের গরু বিক্রি চলছে। ম্যানেজার মো. একরামুল করিম বলেন, ইতোমধ্যে শতাধিক শাহীওয়াল ও ফ্রিজিয়ান ষাঁড় বিক্রি হয়ে গেছে। আর ২৫-৩০ টি ষাঁড় আছে। তবে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, গত ৩/৪ বছর ধরে বাজারে গো-খাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে খামারিরা লোকসানের শিকার হচ্ছে বেশি। যাদের নিজস্ব ঘাস, ভূট্টা চাষ আছে তাঁরাই কেবল লাভবান।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘পাহাড়ে প্রাকৃতিক খাদ্যে গরু লালন-পালন করার সুযোগ রয়েছে। তা না হলে গো-খাদ্যের আকাশচুম্বী মূল্যে গরু পালন কষ্টসাধ্য! এবার উপজেলার ছোট, মাঝারি ও বড় দেড়শ’ খামারে ২৬১০ টি গরু ও ছাগল কোরবানির উপযোগী। নিয়মিত খামার নজরদারিসহ রোগমুক্ত পশু বাজারজাতকরণে আমরা খামারিদের পাশে আছি।’