কক্সবাজারে মাদকদ্রব্য ধ্বংসকালে স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর কক্সবাজার রিজিয়ন কর্তৃক গত ১ বছরে বিভিন্ন সময়ে উদ্ধারকৃত ৩৯৫ কোটি ৭৬ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭৫ টাকার মাদকদ্রব্য ধ্বংস করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর কক্সবাজার রিজিয়ন মাঠে এসব মাদকদ্রব্য ধ্বংস করেন তিনি।
এসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি রয়েছে। সে জন্য বিজিবিকে আরো শক্তিশালী করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শুধু বিজিবি কিংবা কোস্টগার্ড নয়, আপনাদেরও দায়িত্ব আছে। তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন। তাহলে মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে। কারবারিদের চিহ্নিত করে ধরিয়ে দিন। মাদকবিরোধী চ্যালেঞ্জে আমাদের জিততে হবে। মাদকের সঙ্গে জড়িতরা যে দলেরই হোক, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করতে বলেছেন সেভাবেই চলছি। সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, সর্বস্তরের মানুষ সহযোগিতা করলে এই চ্যালেঞ্জে শতভাগ সফল হবো বলে আশা করছি।
কক্সবাজারের বিজিবির প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেছেন, তারা দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছে বলে আজকে বিশাল অংকের মাদকদ্রব্য ধ্বংস করা সম্ভব হচ্ছে। যেভাবে মাদকদ্রব্য আসছে তার কিছুটা হলেও প্রতিরোধ করতে পারছি বলে এই সফলতা।
মাদকদ্রব্য ধ্বংসকরণ অনুষ্ঠানের শুরুতে বিজিবি’র অভিযানিক কার্যক্রম নিয়ে ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। এরপর বিজিবি’র কক্সবাজার রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজম-উস-সাকিব স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন এবং বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ বক্তব্য রাখেন।
বিজিবি মহাপরিচালক তার বক্তব্যে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন ও সার্বজনীন প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। সীমান্তে মাদকপাচার রোধে বিজিবি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত বলে তিনি সকলকে আশ্বস্ত করেন। বিজিবিকে বিশ্বমানের একটি আধুনিক ত্রিমাত্রিক ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন এবং একইসাথে প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজিবি’র পাশে থেকে সাহস জোগানোর জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও ধন্যবাদ জানান।
মাদকদ্রব্য ধ্বংসকরণ অনুষ্ঠানে কক্সবাজার রিজিয়নের অধীনস্থ ব্যাটালিয়নসমূহ কর্তৃক বিগত ১ বছরের মালিকবিহীন আটককৃত ৯০,৮০,৪৭৭ পিস ইয়াবা, ২৩,৭৫২ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস, ৬,৭৬৭ ক্যান বিয়ার, ১,৩৩৯ বোতল মদ, ১৫৪ বোতল ফেন্সিডিল, ২০৬ লিটার বাংলা মদ, ১৭ কেজি গাঁজা, ৪৮,০১৯ পিস বিভিন্ন প্রকার ট্যাবলেট, ১০,৯৮৪ প্যাকেট সিগারেট এবং ০৭ বোতল এ্যামোনিয়াম সালফার ধ্বংস করা হয়েছে।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে আটককৃত ১৯৭৯ জন আসামিসহ ১,২৪,০০,৪৩০ পিস ইয়াবা, ২৭.৪৪৮ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস, ১,৩০৫ ক্যান বিভিন্ন প্রকার বিয়ার, ৯৮ বোতল বিভিন্ন প্রকার মদ, ১৩৭ বোতল ফেন্সিডিল, ৫৮৬.৮০০ লিটার বাংলা মদ, ২২.৯৯৫ কেজি গাঁজা, এবং ৩,১৫০ কেজি আফিম মামলার মাধ্যমে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। হস্তান্তরকৃত মাদকদ্রব্যসমূহের আনুমানিক সিজারমূল্য প্রায় ৫১০,৯০,১৩,৫৭২ (পাঁচশত দশ কোটি নব্বই লাখ তের হাজার পাঁচশত বাহাত্তর) টাকা।
অনুষ্ঠানে কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা মোস্তাক, রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মো. ফখরুল আহসান, কক্সবাজার ত্রাণ ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কমিশনার রেজোয়ান হায়াত, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ, কক্সবাজার পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানসহ উচ্চপদস্থ সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।