আজ ২৬ মার্চ, দেশের ৫৩তম মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে অনন্যসাধারণ একটি দিন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্বাধিকারের দাবিতে জেগে ওঠা নিরীহ বাঙালির ওপর চালিয়েছিল নির্মম হত্যাযজ্ঞ। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের সূচনা ঘটে দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অতর্কিত আক্রমণের পটভূমিতে। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগমুহূর্তে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের আত্মদান, ৩ লাখ নারীর সম্ভ্রম আর বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বিজয়। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের।
আজ আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, স্মরণ করি স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী ৩০ লাখ শহীদকে এবং পরবর্তীতে শহীদ চার জাতীয় নেতাকে।
স্বাধীনতার প্রথম লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের
শৃঙ্খলমুক্তি। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সেটি অর্জিত হয়েছে। দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল একটি গণতান্ত্রিক, ন্যায়ভিত্তিক ও অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠন; যেখানে দেশের প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদা ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত হবে।
দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষার প্রসার, নারী উন্নয়ন, শিশুমৃত্যুর হার কমানো ইত্যাদি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে আমাদের। মাথাপিছু আয় বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হতে যাচ্ছে দেশ। এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। জঙ্গিবাদের অপতৎপরতা ঠেকিয়ে রাখা গেছে।
এ দেশের মানুষ ধর্মের নামে সহিংসতা সমর্থন করে না। তা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে; গড়ে তুলতে হবে রাজনৈতিক ঐকমত্য। সরকারকে মানবাধিকারের প্রশ্নে হতে হবে অঙ্গীকারাবদ্ধ। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে সব বিভেদ ভুলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সেই ঐক্যের ভিত্তিতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো আমরা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো।
স্বাধীনতার এত বছর পরও বৈষম্য কমেনি। কিছু লোকের হাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত। উচ্চ প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও জনসংখ্যার একটা অংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। এর অর্থ হলো উন্নয়নের সুফল সবার কাছে পৌঁছায়নি। যদি একটি ন্যায় ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই, তাহলে উন্নয়নের সুফল সবার কাছে পৌঁছাতে হবে। এর পাশাপাশি বিশাল অঙ্কের খেলাপি ঋণ, শেয়ারবাজারে কারচুপি, সরকারি সম্পদ লুটপাট এবং বিদেশে অর্থ পাচারসহ যেসব অনাচার চলছে, তা কোনোভাবেই স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
শুধু অর্থনীতির সূচকে এগিয়ে থেকেই সন্তুষ্ট থাকলে চলবে না, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন, মানবাধিকার ও বাক্স্বাধীনতার সূচকেও এগিয়ে থাকতে হবে।
স্বাধীনতা দিবস- এই দিনটি আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায়। আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে- এমনটাই প্রত্যশা সবার।
মহান স্বাধীনতা দিবস
আমাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা