চট্টগ্রাম মহানগরীতে ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে, পত্রিকান্তরে প্রকাশ, গত ৫ বছরে ধর্ষণের ঘটনা ৩গুণ বেড়েছে। ২০১৫ সালে নগরীর ১৬ থানায় এ ধরণের অপরাধের মামলা ছিল ৭৮টি। ২০২০ সালে নভেম্বর পর্যন্ত মামলা হয়েছে ২২৭টি। জাতীয় দৈনিকটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের প্রায় ৬৪ শতাংশ শিশু-কিশোর, এদের বেশিরভাগ ছিন্নমূল, নি¤œবিত্ত পরিবারের। বেশ কিচু মামলার নথি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্বৃত্তরা প্রেম, বিয়ে ও ফাঁদে ফেলে কিশোরী ও তরুণীদের প্রতারণা করে ধর্ষণের মতো নারকীয় অপরাধ ঘটাচ্ছে। ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করা হলেও ধর্ষণের ঘটনা কমেনি, বরং এই করোনাকালেও তা বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি ঢাকার কলাবাগানে স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ ধর্ষণের ঘটনাই গণমাধ্যমে বিশেষভাবে আসে না। দরিদ্র পরিবারের অভিভাবকেরা আইনি জটিলতা, সামাজিকভাবে হেয় হওয়া, অপরাধীদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা অজুহাত, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া-এসব কারণে থানা পুলিশ কোর্ট পর্যন্ত যেতে চান না।
চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৭টি। প্রতিটিতে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা বিচারাধীন বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। মামলা হলেও আসামি গ্রেফতারে দীর্ঘ সময় লেগে যায়, আইনি প্রক্রিয়া জটিল, দীর্ঘ, ভুক্তভোগীদের জন্য ব্যয়বহুল। আবার দেখা গেছে, আসামি ভুক্তভোগী পরিবারের আত্মীয় বা প্রতিবেশি। মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত পরিবারে এ ধরনের ঘটনা থাকলেও তারা সামাজিক কারণে মামলায় যেতে চান না। দেখা যায়, কি গ্রামে, কি শহরে কোন কোন ক্ষেত্রে ধর্ষণের ঘটনা আপোসে মিটিয়ে ফেলা হয়।
ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধ পরিবার, সমাজকে ক্ষয় করে দিচ্ছে। সামাজিকভাবে সংগঠিত প্রতিবাদও কম, নাগরিক সমাজ বিবৃতি দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেন। সমাজবিজ্ঞানী কিংবা বিশ্লেষকরা কিছু অভিমত দেন। পত্রিকায় এলে কিছুদিন আলোচনা, প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়। পুলিশ প্রশাসন কিছু তৎপরতা দেখায়, তারপর সকলে ঝিমিয়ে পড়ে। অপরাধীরা আবার তৎপর হয়। ধর্ষণের ঘটনায় যদি অপরাধীরা দ্রুত ধরা না পড়ে কিংবা সাজা না পায় তবে সমাজে সুস্থিরতা নষ্ট হয়। পারিবারিক-সামাজিক সম্পর্কেও চিড় ধরে। কালক্রমে সমাজের অন্তর্নিহিত শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। পোশাক কারখানার কর্মী, বাসে ভ্রমণরত নারী যাত্রী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। এখন ‘গ্যাং রেপ’ হচ্ছে বেশি। গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেলেও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে নারী। শিশু, মাঝবয়সী নারী, কেউ রেহাই পাচ্ছে না। স্বামীকে কিংবা মা-বাবাকে বেঁধে রেখে নারকীয় অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে এভাবে সমাজ তার শক্তি হারায়। মুখ থুবড়ে পড়ে সামাজিক প্রগতি। পুলিশ প্রশাসন যদি ধর্ষণের ঘটনায় কঠোর না হয়, অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করা না হয়, তাদের দ্রুত বিচার এবং শাস্তি দেওয়া না হয়, তবে এই অপরাধ কমবে না। গ্রামে কিংবা শহরের যে এলাকায় ধর্ষণ বা অপরাধের ঘটনা ঘটবে সে এলাকার জনপ্রতিনিধি এবং পুলিশ প্রশাসনকে জবাবদিহি করতে হবে- প্রশাসন থেকে এ ধরণের কঠোর পদক্ষেপ নিলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে। রাজনৈতিক দল, সামাজিক ব্যক্তিত্ব, পেশাজীবীদের সংগঠিতভাবে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে। পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমদ সন্তানদের খোঁজখবর রাখতে অভিভাবকদের ভূমিকার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি ঢাকার কলাবাগানের ঘটনাকে ‘পূর্ণাঙ্গ ক্রাইম বলেছেন। কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা প্রয়োজন। দেখা যাচ্ছে, কিশোর তরুণরা এ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে বেশি।
মতামত সম্পাদকীয়