মসলার দামের লাগাম টানুন

পবিত্র ঈদুল আজহা ঘিরে উত্তাপ ছড়াচ্ছে মসলার বাজার। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে মসলার চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি ব্যবহার হয় সবচেয়ে বেশি। প্রায় প্রতি বছরই এ ঈদ সামনে রেখে দেশের বাজারে এক-দুই মাস আগেই বাড়তে শুরু করে বিভিন্ন মসলাজাতীয় পণ্যের দাম। সে হিসেবে এ বছরও মাসখানেক আগে থেকেই এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। দামের এ ঊর্ধ্বগতি এখনো চলমান। গত এক বছরের ব্যবধানে আদার দাম তিন গুণেরও বেশি বেড়েছে। জিরার দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। আর লবঙ্গ, রসুন, পেঁয়াজ, দারচিনিসহ বিভিন্ন মসলাজাতীয় পণ্যের দামও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
দেশে চাহিদাসম্পন্ন প্রধান মসলার মধ্যে রয়েছে জিরা, দারচিনি, এলাচ, গোলমরিচ, তেজপাতা, লবঙ্গ, শুকনা আস্ত মরিচ, শুকনা আস্ত হলুদ, সরিষা ও ধনিয়া। মসলার মধ্যে দ্বিতীয় সারিতে রয়েছে মেথি, কালিজিরা ও মিষ্টি জিরা। এছাড়া জায়ফল, জয়ত্রি, রাঁধুনি, স্টার ফুল, শাহি জিরা, সাদা গোলমরিচের ব্যবহারও হয় উৎসব-পার্বণে। এসব মসলাজাতীয় পণ্যের মধ্যে সরিষা, কালিজিরা, মিষ্টি জিরা, তেজপাতা, মরিচ, হলুদ ও ধনিয়া দেশে উৎপাদন হলেও বিশ্ববাজার থেকে আমদানি করে দেশীয় চাহিদা মেটাতে হয়।
তাছাড়া জিরা, দারচিনি, এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গ, জায়ফল, জয়ত্রি, শাহি জিরা, সাদা গোলমরিচ, মেথি, রাঁধুনি, স্টার ফুলসহ বেশ কয়েক ধরনের মসলার প্রায় শতভাগই আমদানিনির্ভর। অন্যদিকে পচনশীল মসলার মধ্যে পেঁয়াজ, আদা ও রসুন দেশে উৎপাদিত হলেও বিশ্ববাজারের ওপর নির্ভশীলতা রয়েছে অনেকাংশে। যে কারণে দেশে বাড়তি চাহিদার মৌসুমগুলোয় এসব পণ্যের দাম চড়া থাকে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে সংকটের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে মসলার দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
খাতুনগঞ্জের মসলা আমদানিকারকরা বলছেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ মসলাপণ্যই আমদানি হয় বিশ্ববাজার থেকে। একসময় ব্যবসায়ীরা ৮২-৮৪ টাকার ডলার দিয়ে পণ্য আমদানি করত। এখন ডলারের সর্বোচ্চ দাম ১১২ টাকা। পণ্যের দামের ওপর শুল্ক নির্ধারণ হওয়ায় আমদানি খরচ কয়েক গুণ বেড়েছে। যে কারণে মসলাজাতীয় পণ্যের দাম অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়েও বেশি। তাছাড়া সার, জ্বালানি ও শ্রমিক খরচ বাড়ায় দেশেও মসলার উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সেই সঙ্গে পরিবহন খরচও বেশি। মূলত এসব কারণে বেড়েছে মসলার দাম।
কয়েক বছর ধরে দেখা যায়, রোজার পর থেকেই ধীরে ধীরে মসলার দাম বাড়াতে থাকেন ব্যবসায়ীরা। তারা কয়েক ধাপে দাম বাড়ান। এক বছরের ব্যবধানে কয়েকটি মসলার দাম তিন-চার গুণ বেড়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে তদারক সংস্থাগুলো ভালোভাবে কাজ করছে না। সমন্বয়হীনতা আছে। কোরবানির ঈদে চাহিদা বেশি এ কারণে দাম কিছুটা বাড়তেই পারে। কিন্তু বাড়ার যে হার সেটা অস্বাভাবিক। এই দামের লাগাম টানা উচিত।