ক্ষুদ্রকায় মশা যেন নগরবাসীর বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছে ফুটপাত কিংবা উন্মুক্ত স্থান, ঘরÑবারান্দা, দোকান, কলকারখানা, অফিস আদালত সবখানে মশকবাহিনীর আক্রমণে পর্যুদস্ত নগরবাসী। একেত করোনার দুর্ভাবনায় অসহায় নগরবাসী, তার ওপর মশার ভয়ংকর উৎপাত, কিছুতেই স্বস্তি মিলছেনা তাদের। খাল, নালা-নর্দমা, ডোবা-পুকুর-দীঘি, জলাশয়, বদ্ধ পানিতে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা বংশ বিস্তার করে চলেছে। ‘মশা মারতে কামান দাগার’ অবস্থা হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের। তারা ওষুধ ছিটাচ্ছে; নগর পিতা ১০০ দিনের কর্মসূচিতে মশক নিধন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকে অগ্রাধিকার কর্মসূচি হিসেবে ঘোষণা করেছেন। কিন্ত দৃশ্যমান অগ্রগতি কোথায়! উড়ন্ত মশা মারার ‘স্প্রে কামান’ ও দাগা হচ্ছে। প্রতি ওয়ার্ডে ৪ জন কর্মী মশক নিধন অভিযানে রয়েছে বলছে চসিক, নানা ধরণের ওষুধও ছিটানো হচ্ছে কিন্তু মশককুল বহাল তবিয়তে তাদের অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। কয়েলে কিছুক্ষণ নিস্তার মেলে কিন্তু এসব কয়েল শিশু ও বয়সীদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ কিন্তু উপায় নেই। জলাবদ্ধতা নিরসন কাজে খাল নালায় বাঁধ দেয়ার ফলে পানির প্রবাহ না থাকায় মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে বলছেন চসিক কর্মকর্তারা, পত্রিকান্তরে এ ধরণের তথ্য এসেছে। তবে যে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ সিটি কর্পোরেশনের নতুন মেয়র। তিনি ওষুধের কার্যকারিতা ও মান নিরীক্ষণের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদদের সাথে গত রোববার বৈঠক করে সহায়তা চেয়েছেন মর্মে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ। চসিক থেকে ওষুধ পরীক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হবে বলে চসিক এর উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
নগরের বিভিন্ন খাল, নালা-নর্দমা মশার প্রজনন ক্ষেত্র, এগুলিতে ময়লা আবর্জনা বর্জ্য ভাসছে। বিভিন্ন খালের মুখে জলকপাট লাগানো হচ্ছে, পানির প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে, খালের ভেতরে পানি জমে তার ওপর ভাসছে মশার লার্ভা ও মশা। নগরীর নালানর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার করা না হলে খাল, নালা নর্দমার পানি প্রবাহ বাধাহীন না হলে মশা বংশ বিস্তার করবেই। ঢাকার উত্তরের মেয়র কলকাতা সিটি কর্পোরেশন কিভাবে মশক নিধন কার্যক্রমে সফল হয়েছে সে ব্যাপারে গত বছর অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছেন। সে অভিজ্ঞতা ঢাকা চট্টগ্রাম কিংবা বাংলাদেশের কোথায়ও কী কাজে লাগানো হয়েছে। আমরা কয়েক বছর আগে দেখেছি ডেঙ্গু প্রায় মহামারির মতো অবস্থা সৃষ্টি করেছিল, বেশ কজন চিকিৎসক চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন। আমরা কি ডেঙ্গু চিকনগুনিয়ার সে সব স্মৃতি ভুলে গেছি? ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কিংবা সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়মিত পরিদর্শন ও নজরদারি না রাখলে কোন কাজেই নগরবাসী কোনোরূপ সুফল পাবে না।
করোনার সময় জনগণকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বলা হচ্ছে, সে সব স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রয়োজন কিন্তু মানুষকে সেবাপ্রদানকারী সরকারি সংস্থাগুলি যদি পরিবেশ দূষণ রোধ, স্বাস্থ্য রক্ষার বিষয়ে সক্রিয় না থাকে তবে এলাকা স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকবে কি করে। নগরের উন্নয়ন কাজের ধূলাবালি, নালা নর্দমার বর্জ্য, খালের আবর্জনা নগরীর পরিবেশকে দূষিত করছে। উন্নয়ন কাজে কোন সমন্বয় নেই, তাহলে নগর ও নগরবাসী নিরাপদ থাকবে কি করে?
মশা মারার ওষুধ কার্যকর ফল দিচ্ছে না। এ ধরণের মানহীন ওষুধ ক্রয়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত। এখন মশামারার ওষুধ যাচাইয়ের জন্য গবেষণাগারে যাবে, তারপর ওষুধ ক্রয় করা হবে, ততদিনে মশারা আরো ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। সারা বছর যদি নজরদারি করা না হয়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান কিংবা খাল নালার পানি প্রবাহ স্বাভাবিক গতি না পায় সকল সময়ে, কিছুদিন মশার ওষুধ ছিটিয়েও কোন লাভ হবে না। নগরবাসীর বিড়ম্বনারও অবসান হবে না।
মতামত সম্পাদকীয়