চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
নিজস্ব প্রতিবেদক
রোগীরা হাসপাতালে আসেন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ফিরে যেতে, কিন্ত চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। এ যেন ময়লা-জীবাণু’র সঙ্গে রোগী-স্বজনদের ওঠাবসা! এক রোগ সারতে না সারতে আরেক রোগ বাধিয়ে ঘরে ফেরা! রোগীর স্বজনরা হাসপাতালের মেঝেতে ময়লার স্তুপের পাশেই শয্যা পেতেছে। অনেকটা নিরুপায় হয়ে হাসপাতালের বারান্দা-মেঝেতে রাত কাটান তারা।
গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, ৩১ আর ৩৩ নাম্বার ওয়ার্ডের মাঝখানে গত তিন ধরে ময়লার স্তুপ পড়ে আছে। ৩১ নাম্বারের পরিচ্ছন্নতা কর্মী ময়লা ফেলতে আসলে ঝাড়ু দিয়ে ৩৩ নাম্বারের ওয়ার্ডের পাশে রেখে দেই। ঠিক একইভাবে ৩৪ নাম্বার ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা কর্মী ৩১ ওর্য়াডে রেখে চলে আসে।
মেঝেতে তুলা, বিস্কুট-ওষুধের প্যাকেট, গ্লাভস, ওয়ান টাইম গ্লাস, প্লাস্টিকের বোতল, ভাত ছড়ানো ছিটানো। মাছি ভোঁ ভোঁ করছে, দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে চারদিকে। তারই পাশে রোগীর স্বজনরা শয্যা পেতেছে। সেখানে থেকে তারা রোগীদের সেবা যত্ন করে যাচ্ছেন। কেউ কিছুক্ষণ থেকে চলে যান, কাউকে রাত দিন থাকতে হয়। এখানে তাদের থাকা খাওয়া-ঘুম। ময়লা পড়ে থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। এভাবে গত কয়েকদিন ধরে ময়লারস্তূপ পড়ে আছে বলে জানান রোগীর স্বজনরা।
তেমনই একজন ইয়াছিন মোহাম্মদ বাচ্চু। তিনি রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি থেকে এসেছেন। গত ২৫ তারিখ থেকে তার সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুর ওজন কম থাকায় শেখ রাসেল ওর্য়াডে ভর্তি রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘একবার ৩১ নাম্বার ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা কর্মী ময়লা ফেলতে আসেন। তিনি ঝাড়ু দিয়ে ৩৩ নাম্বারের পাশে রেখে দেন। আবার ৩৩ নাম্বারের পরিচ্ছন্নতা কর্মী একই কাজ করেন। ময়লা ফেলার সময় তো আমাদের গায়ে ফেলে দেওয়ার অবস্থা করেন। অনেক ময়লা আমাদের গায়ে এসে পড়ে। দুর্গন্ধে টেকাও মুশকিল। দিনে মাছি, রাতে মশার সঙ্গে বসবাস করতে হচ্ছে। কত বার তাদের বলেছি ময়লাগুলো যেন সরিয়ে নেয়। উল্টো গালাগাল করে চলে যায়।’
তারই পাশে রহিমা আক্তার নামে এক মহিলা বলে ওঠেন, ‘এ ময়লাগুলো তিন ধরে এদিক সেদিক করছে। ময়লা ফেলতে বললে তাদের কাজ না বলে জানায়। যারা ময়লা তুলতে আসে তাদেরও বলেছি । কিন্ত কেউ শুনেনি, কেউ ময়লা তুলতে আগ্রহ দেখায়নি।’
শুধু ৩১ আর ৩৩ নাম্বার ওর্য়াড নয়। চমেক হাসপাতাল ঘুরে ২৯ ওয়ার্ড, মেডিসিন, সার্জারি ওয়ার্ডসহ বেশ কিছু জায়গায় ময়লার স্তুপ পড়ে থাকতে দেখা যায়। রোগীরা বলছেন কিছু কিছু ময়লা দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে। কিছু তুলে নিলে সব নিয়ে যায় না।
চমেক সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে বর্তমানে পরিচ্ছন্নতা কর্মী রয়েছেন ৮৯ জন। তারা শিফট অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টা পরিষ্কারের কাজ করে যাচ্ছেন। সিটি কর্পোরেশন থেকে কয়েকজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীও পাঠানো হয়। এছাড়া সেবা সংস্থা নামে একটি সংগঠন আছে। হাসপাতালের বর্জ্য পরিষ্কার করে। তার জন্য প্রতি মাসে ৮৯ হাজার টাকা হাসপাতালকে পরিশোধ করতে হয়।
ময়লা পড়ে থাকার প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সব সময় চেষ্টা থাকে পুরো হাসপাতাল পরিষ্কার রাখার। তার জন্য যথেষ্ট কর্মী রয়েছেন। তারা দায়িত্বে অবহেলা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।