অরূপ পালিত
পাহাড়ের চূড়া আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাড়িটা। আকাশ আর প্রকৃতি যেন একসাথে মিশেছে। বাড়ির আশপাশে সুনসান নীরবতা। শিউলি ফুলের গন্ধে সারা বাড়ি মৌ-মৌ করছে। এতো বড় বাড়িতে মানুষ মাত্র তিনজন। এই তিনজনের জন্য কাজের লোক হাফডজন। ¯িœগ্ধ শীতের সকাল। ঘরের জানালার পর্দাগুলো সরিয়ে দিল বুয়া। সকাল থেকে আবহাওয়া বেশ ঠান্ডা। ভোরের চকচকে সোনালি কাঁচা-মিষ্টি রোদ জানালা ভেদ করে টিকলির মুখের ওপর এসে পড়েছে। দুষ্টু রোদেরও হয়তো ইচ্ছে হলো এমন সুন্দরী রমণীর সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে একটিবার বিচরণ করতে। রোদ না হয়ে মানুষ হলে হয়তো এতোক্ষণে খুনোখুনি হয়ে যেতো। টিকলির ঘুম ভাঙল মিষ্টি-দুষ্টু রোদের আদরে। ঘুম থেকে ওঠে বিচলিত সে। আজ বিপুলের জন্মদিন। তাড়াতাড়ি উইশ করতে হবে। মোবাইলে বিপুলকে ধমকের সুরে বলল, তোমার মোবাইল এতো ব্যস্ত থাকে কেন?
বিপুলও জানে টিকলির স্বভাব। একটুতেই অধৈর্য হয়ে ওঠে। কথা না বাড়িয়ে সে বললো, স্যরি জান।
ও বেচেলার, তাড়াতাড়ি স্টেশনে এসো। তোমার জন্য মামা টিকিটের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। আজকে তুমি আসলে দুজনে পানতুমাই বেড়াতে যাবো। টিকলি বাসায় বলেছে সে বান্ধবীর বাসায় যাবে। আজকে রাতে ফিরবে না। বিপুলকে কিছু খাওয়ানোর মতো আনন্দ টিকলির কাছে আর কিছুই নেই। চট্টগ্রাম থেকে সিলেট পৌঁছাতে বিপুলের চারটে বেজে গেছে। এই সাত-আট ঘণ্টা শুধু শাড়ি আর ব্লাউজ মেলাতে সময় কোন দিকে গড়ালো টিকলির খেয়াল নেই। নীলশাড়ির সাথে একটা নীল রঙের মেচিং ব্লাউজ পরবে। অনেক চেষ্টা করেও সেটা কোনো রকমেই মেলাতে পারেনি। শেষমেশ নরমাল সুতির সেলোয়ার-কামিজ পরে বেরিয়ে গেল। এর মধ্যে না হলেও বিপুলকে পঞ্চাশবার ফোন করেছে। কথা একটাই, কতোটুকু আসছো? গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখেছি স্টেশনে।
শহরের কোলাহল থেকে বেরিয়ে নির্জনে একাকী সময় কাটানোর জন্য দুজনে বেঁচে নেই সুন্দর পানতুমাই। পাহাড়ি স্বচ্ছজলের ছড়া পাড়ি দিয়ে গাঁয়ের মেঠোপথ। সবুজ বাঁশবাগানে শুকনো পাতার মচমচ আওয়াজে গা চমচম করে। হাঁটুজলে নদী পার হয়ে উঁচু পাহাড় ধরে হাঁটতে থাকে দুজন। জঙ্গলে একা হাঁটতেও ভয় হচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় প্রেমিক-প্রেমিকেরা দুজন-দুজনকে জড়িয়ে আছে। কেউ-কেউ কোলে মাথা দিয়ে রেখে আছে। জঙ্গলের ভেতর এগোতেই শোনা যায় জল গড়িয়ে পড়ার শব্দ। জঙ্গলের মাঝেই উঁকি দিচ্ছে রূপবতী ঝরনা পানতুমাই। দুজন অনেক দূর চলে এসেছে। টিকলি মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় আজকে বাসায় আর ফিরবে না। আত্মীয়স্বজন সবার মুখে একটি কথা শুনতে শুনতে বিরক্ত এসে গেছে। তোদের বিয়েটা কবে হচ্ছে?
টিকলি বিপুলকে শক্ত করে ধরে রেখেছে। পানতুমাইর শাঁ শাঁ শব্দে টিকলির মন উড়–-উড়ু।কয়েক শ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে নেমে আসছে শুভ্র জলধারা। পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা জলরাশিকে দূর থেকে দেখলে মনে হয়, কে যেন দুজনের জন্য বিছিয়ে রেখেছে সাদা শাড়ি। বিপুল বিমুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকে পাহাড় আর জলের এই মিতালির দিকে। টিকলি বিপুলকে বলে, এমন শীতল পানিতে আমাকে ডুবিয়ে মারতে পারবে? তোমাকে কেউ আর জ্বালাতন করবে না। বিপুলের হুঁশ আসে। পাগলী বলে কি? বিপুল টিকলিকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নেয়। বিপুলের বুকে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। টিকলির রূপ যেন আজ রূপবতী পানতুমাইকে হার মানিয়েছে। টিকলিকে আজ যেমন সুন্দর লাগছে, তেমনি চঞ্চলা লাগছে।
অন্ধকার নেমে আসে ধরণীর বুকে। বিপুলকে হোটেলে ফিরতে হবে। টিকলি আজ ফিরতে চায় না নীড়ে। সে বিপুলের সাথে একান্তভাবে সময় কাটাতে চায়। টিকলিকে যখন বিপুল বলে, তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি। টিকলি চোখের ভাষায় বলে দেয়, মুহূর্তের জন্যও বিপুলকে মিস্ করতে রাজি নয় সে। টিকলি এমন একটি মেয়ে লজ্জাভয় কিছু নেই। কখন খুশিতে জড়িয়ে নেবে আর কখন সবার সামনে হাউমাউ করবে বোঝা দায়। টিকলির কপালের ঘাম দেখে বিপুল আন্দাজ করতে পারে। টিকলি কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছে না। বিপুল সহজ করে দেয়। তুমি কিছু বলছো না যে। বাসায় ফিরতে হবে না।
শেষ পর্যন্ত টিকলি বিপুলকে বললোÑ তোমার তো এখন ভালো চাকরি হয়েছে। এখন তো আমাদের বিয়েটা করতে কোনো বাধা নেই।
বিপুল ভালো করে জানে টিকলির জীবনযাত্রা একরৈখিক। যা বলে তাই করে।
টিকলিকে বিপুল বলল, তোমার যে রকম ইচ্ছে। তবে আগে আমার কিছু কথা আছে। তোমাকে শুনতে হবে। অনেক দিন বলতে চেয়েছি। তুমি শুনতে চাওনি। আজকে শুনে তারপর তুমি বিয়ের জন্য ডিসিশন নিও।
তোমার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত নিয়ে আমি কিছু শুনতে চাই না। অন্যকিছু থাকলে আমাকে বলতে পারো। এমন সুন্দর মুহূর্তে আমি তোমার অতীত টেনে নিয়ে নষ্ট করতে চাই না। তুমি এক সপ্তাহের মধ্যে আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাবে।
টিকলি আমি কোনোদিন আর কিছু বলবো না। শুধু আজকে আমার কথাগুলো শোন। তারপর তুমি আমায় যা বলবে মাথা পেতে নেব। আমার জন্ম চট্টগ্রাম শহরে আগ্রাবাদ এলাকায়। আমার বাবার পরিচয় জানা নেই। শুনেছি আমার মায়ের দুই বিয়ে। প্রথম সংসার টিকে নাই। মা গার্মেন্টসের চাকরি ছাড়েন নাই বলে। প্রথম বাবাকে আমি দেখি নাই। একটু বুদ্ধি হয়েছে আমার। দ্বিতীয় বাবাকে দেখতাম, মাসের শেষে এসে মা’র সব টাকা-পয়সা মেরে-ধরে নিয়ে যেতে। কোনো কথা বলতে পারত না মা। কথায়-কথায় মাকে শুধু চুলের মুঠি ধরে লাথি মারতো। মা মুখ বুজে কেন জানি সব সহ্য করতেন। একদিন আমি বস্তিতে ছেলেদের সাথে খেলছিলাম। কে এসে নানিকে বলল, মার অফিসের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। রাজনীতির প্রতিহিংসার আগুনে বলি হলেন আমার মা। হরতাল আর অবরোধের কারণে পোড়ামুখটা আর আমাকে কেউ দেখায়নি। মার মুখটা জন্মের জন্য হারিয়ে ফেলেছি। আমি কোন বাপের সন্তান নিজেও জানি না। বস্তিতে আমাকে বাপের পরিচয় নিয়ে অনেকজনের অনেক কথা শুনতে হয়েছে। নানি শেষমেশ আমাকে একটা এতিমখানায় রেখে আসেন। সেখানে আমাকে দিয়ে সারাদিন বাস-রেল এসব থেকে টাকা উঠাতো। অনেক সময় মারতো। সেই কারণে ভালো লাগতো না। আমার মা আমাকে কোনো দিন গায়ে হাত দেওয়া দূরের কথা, ভুলে টোকাও দেয়নি। তাই মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে বস্তিতে চলে আসি। বস্তিতে এসে নানিকে আর পাইনি। বস্তি নাকি শিশুপার্ক হবে। সরকার তাই উচ্ছেদ করে ফেলেছে। মনে হয় সবাই আমাকে ছেড়ে বেঁচেছেন। মাথায় ভূত চেপে বসেছিল। দুই চোখ যেদিক যায় চলে যাব। বটতলী স্টেশনে এসে একটা রেলে চেপে বসি। রেলটি আমাকে নিয়ে গেছে শহর থেকে গ্রামে। দোহাজারী স্টেশন। রাতে ভয়ে এক চায়ের দোকানের লোকের কাছে আশ্রয় পেয়েছি। দুইদিন চায়ের দোকানে কাটানোর পর একজন ভালো মা’র সন্ধান পেলাম। গরিব মা-টির কেউ ছিল না। উনি খাবারের দোকানে মরিচ-মসলা বেঁটে দিতেন। আমাকে নিয়ে গিয়ে মমতাময়ীর মায়ার চাদরে রেখে স্কুল পার করিয়ে কলেজ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন। উনি শুধু আমার মা ডাকটি কে বেশি পছন্দ করতেন। কিছুদিন পর আমার ভালো মাও আমাকে ছেড়ে চলে যান। ওই একা ঘরে মা’কে ছাড়া থাকতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। কলেজের এক বন্ধুর সহোযগিতায় শহরে চলে আসি। ওই বন্ধু আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছে। ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর তোমাকে ভালো বন্ধু হিসেবে পাই। কথাগুলো বলতে বলতে অনেক দিনের লুকিয়ে থাকা জমানো কষ্ট চোখ দিয়ে বেরিয়ে এলো। টিকলি বিপুলকে জড়িয়ে ধরে বললোÑ
আজকের পর থেকে তোমার অতীতগুলো এই জায়গায় ফেলে চলে যাবে। এই কথাগুলো আমাকে বলেছো এই পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। বিপুল জানে, টিকলির বাবা এসব শুনলে টিকলিকে বিয়ে দেওয়া দূরে থাক, মিশতেও দেবেন না। টিকলির বাবা একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা। অনেক ক্ষমতা তাঁর। বিপুলও একেবারে কম, তাও না। খাদ্য অধিদফতরের ভালো পদে আছেন। সৎ এবং আদর্শবান বলে নিজের পরিচয়টা গোপন করে যায়। টিকলির বাবা মেয়েকে চাকরি করতে দেবে না বলে ম্যানেজমেন্টে পড়িয়ে ঘরে বসিয়ে রেখেছেন। বিপুলকে এবং ওর চাকরি কোনোটাই টিকলির বাবার পছন্দ না। এর মধ্যে বিয়েটা টিকলির জেদ আর ইচ্ছেমতো সম্পন্ন হয়েছে। টিকলিকে ওর বাবা জানিয়ে দেয়। চট্টগ্রামে তুমি যেতে পারবে না। চট্টগ্রামে নিয়ে যদি তোমাকে এই ছেলে মেরে ফেলে। বিপুলকে সিলেটে ট্রান্সপার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য টিকলির বাবা ওঠে পড়ে লেগেছেন। মেয়েকে কানে মন্ত্র দিতে থাকেন। ওকে এখানেই আসতে হবে। না হলে বলে দে! তোকে ছাড়তে হবে। সিলেটে গেলেও বিপুল শ্বশুরবাড়ি যায় না। টিকলির সাথে দেখা করে হোটেলে ফিরে আসে। খুব কষ্ট হতো টিকলির।
লন্ডন থেকে টিকলির খালাতো ভাই বিজয় এসেছে। টিকলিকে সে ছোটবেলা থেকে বেশ পছন্দ করতো। কিন্তু টিকলির বিয়ে হওয়ায় বিজয়ের মনে খুব কষ্ট। বিজয় টিকলিকে নিয়ে ঘুরতে যায় নানাদিকে। বিজয় আর টিকলিকে পানতুয়াই যখন আবার বেড়াতে যায় বিপুলকে মিস্ করে টিকলি। বিজয় যখন টিকলির ঘা ঘেঁষে বসে, অদৃশ্য শক্তিপ্রবেশের অধিকার খোঁজে টিকলির কাছে।
মনের অজান্তেই কষ্টগুলো হানা দেয়। একটি হতাশা। দানা বাঁধতে থাকে বিদ্রোহ।
অনুশোচনা হয় কেন বিজয়কে বিয়ে না করে বিপুলকে বিয়ে করলো। টিকলি আজকে যেন ভালোমন্দের হিসাব মিলাতে পারছে না। বিজয় আর বিপুলের মধ্যে ভালো কে? বিজয় আবার লন্ডন চলে যায়। টিকলি এই কয়েকদিনে বিজয়ের কাছে হেরে বসে আছে। মন ব্যাকুল হয় বিজয় যেন একটু ছুঁয়ে পাশে বসে। বিজয় চলে যাবার সময় টিকলিকে বলে যায়, আমি সারাজীবন তোমার অপেক্ষায় থাকবো। বিজয়ের বিজয় বেশে আবির্ভাব মনে হয় টিকলির হৃদয়ের মধ্যে কোথায় যেন জায়গা করে নিয়েছে। টিকলির মন আবার দোটানায় পড়ে। টিকলি ভাবে যে মানুষটিকে এতো ভালবাসে, সে কি আমাকে মূল্যায়ন করছে না? বিপুল সিলেটে মাসে-দুমাসে একবারও আসতে পারে না। টিকলির নিজেকে নিঃসঙ্গ লাগে। চেহারা শুকিয়ে ফ্যাকাসে হয়ে আসে। নিঃসাড় হয়ে যায় সমস্ত অনুভূতি। বঞ্চিত হৃদয়ে শুধু হাহাকার, কান্না।
টিকলি বাবার বাড়ি ছেড়ে চট্টগ্রাামে আসতে চাইলেও, বাবা আসতে দেয় না। টিকলির বাবার সম্পর্কে কোন কিছু বলতে পারে না বিপুল। টিকলি উল্টো বুঝে। বাপের বাড়ির কোনো কথা বিপুলের মুখ থেকে বের হলে টিকলি তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে। কথাবার্তায় একসময় টিকলি বিপুলের সাথে একগুঁয়েমি শুরু করে। বিপুলের কাছ থেকে মুক্তি খুঁজে। টিকলি চট্টগ্রাম আসে বিপুলের কাজ থেকে মুক্তি নিতে। বিপুল এমন একজন মানুষ সবকিছু সহ্য করে নীরবে। কোনো অজানা ব্যথায় বিপুলের বুকটা যেন ভার হয়ে আসে। কোনোদিন কোনো সুখ ধরে রাখতে পারে না। বিপুল বুঝতে পারে ভালোবাসার সংসারে তৃতীয় কোনো লোকের আগমন। টিকলির ফেসবুকের অনেক ছবিই তা বলে দেয়। টিকলি নিজেকে নিয়ে দ্বিধায় পড়েছে। বিপুল আবার টিকলিকে বোঝাতে থাকে। কোনো সিদ্ধান্ত নিতে আরেকটু সময় নাও। টিকলি হয়তো বিপুলের কাছে এসেছে মনের ভুলে। টিকলি দোটানায় পড়েছে। এখন কি করবে? এই কয়েকদিনে বিপুলের স্পর্শে ফুজিয়ানা পর্বতের ওপরে জমে থাকা বরফ গ্রীষ্মের তাপে তরল হয়ে গেছে। টিকলি ওর বাবাকে কথা দিয়েছে এক সপ্তাহের মধ্যে সব ছেড়েছুড়ে লন্ডন চলে যাবে। বিপুলকে ছেড়ে যাবার সময় টিকলির মন বিচলিত হয়ে উঠেছে। টিকলি নিজেকে আবিষ্কার করে নতুন উপলব্ধির একটা ঠান্ডা স্তব্ধতায়। দেহে তার নবজীবনের বারতা। টিকলি চট্টগ্রাম থেকে সিলেটে বাপের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়। জানালার পাশে মুখটি বের করে চট্টগ্রামকে শেষ দেখা দেখছে। ট্রেন চলার পথে চট্টগ্রাম ভাটিয়ারী এলাকায় পৌঁছালে বাইরের থেকে কে বা যেন বগিতে পাথর ছুড়ে মারে। পাথরের আঘাতে গাড়িতে অজ্ঞান হয়ে যায় টিকলি। পনের দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে টিকলি চলে যায় বিপুলকে ছেড়ে অজানা গন্তব্যে। ডাক্তার বুঝতে পারে টিকলি একা যায়নি। সাথে সন্তান আর মাতৃত্বকে নিয়ে গেছে। বিপুলের হাসপাতালে বিলাপ ধরে কান্নায় আশেপাশের মানুষ কেঁদেছে। বিচার কার কাছ চাইবো?
বিচারের আশায় থানায় গেলে ওনাদের পরামর্শ, যে থানা এলাকায় পাথর ছুড়ে মেরেছে, সেই থানায় গিয়ে মামলা করতে হবে। উকিল নিয়োগ দেন। উকিল বলেন, এটি যখন রেলওয়ের বিরুদ্ধে মামলা, তখন রেলওয়ের নিজস্ব থানা আছে। সেখানে গিয়ে পরামর্শ চাইতে পারেন। রেলওয়ের আইনের ১২৭ ধারা অনুযায়ী, ট্রেনে পাথর ছোড়া হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদ-সহ ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে। ৩০২ ধারা অনুযায়ী পাথর নিক্ষেপে কারও মৃত্যু হলে মৃত্যুদ-েরও বিধান রয়েছে। যদিও এসব আইনে বাংলাদেশে কারও শাস্তির কোনো নজির নেই। বেশ কিছুদিন কোর্ট-কাচারি, মন্ত্রণালয়ের এদিক-সেদিক দৌড়ানোর পর হাল ছেড়ে দেয় বিপুল। কারণ কে মেরেছে, কে দেখেছে এসবের গল্প এখানেই শেষ। সাক্ষী নেই। এসবের পেছনে দৌড়াতে গিয়ে চাকরি ছেড়ে দেয় বিপুল। এক সময় মাথার মধ্যে আসে এসব কার জন্য? যে যাবার সে তো চলেই গেছে। বিপুল একাকিত্ব দূর করতে এখন শুধু পাহাড়, নদী, জলধারার কাছে যায়। হেরে যায় জীবনের গল্পে। যখন একা বসে থাকে বুঝতে পারে একটা ছায়া এসে ওকে জড়িয়ে নিচ্ছে। চোখের জলে চারপাশ অস্পষ্ট দেখে।