নিজস্ব প্রতিবেদক »
সন্তানের পড়ালেখা, ঘর ভাড়া, পরিবারের সকল খরচ ও চাহিদা মেটানোর তাগিদ থেকে গাড়ি-বাড়ি করার জন্য বেশির ভাগ পুরুষ ব্যস্ত সময় পার করেন। ফলে পরিবারের সকলকে সময় দিতে পারেন না। এভাবে তারা সন্তান ও বাবা-মায়ের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত দূরে সরে যায়। আর একটা সময় সেই বাড়ি-গাড়ি সবই হয় ঠিকই। কিন্ত তখন ছেলেরা আলাদা সংসার পাতে, নয়তো বিদেশ পাড়ি জমায় অথবা সেই বৃদ্ধের জায়গা হয় বৃদ্ধাশ্রমে।
তাই সময় থাকতে বাড়ি-গাড়ির পেছনে না ছুটে পরিবারে সময় ব্যয় করার বার্তা দিয়েছে নগরীর কোতয়ালীর ‘ষোড়শীকুন্জ’ পূজা ম-প। থিমের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাড়ি ফিরে এসো সন্ধ্যা নামার আগে ’।
সরেজমিন গতকাল রোববার দেখা যায়, বাঁশের বেড়ার তৈরি একটি বড় গেট। তার ওপর ছোট ঘরের জানালা। সেই জানালা খুলে মা সন্তানের জন্য অপেক্ষা করছেন। পূজাম-পে নারী-পুরুষের জন্য আলাদা প্রবেশদ্বার রাখা হয়েছে। সেই পূজাম-প দেখতে উপচেপড়া ভিড়। দর্শনার্থীরা বলছেন, এ ধরনের থিম বর্তমানে সমাজের জন্য শিক্ষণীয়।
‘ষোড়শীকুন্জ’ পূজাম-পের সাংগঠনিক সম্পাদক অন্তু চৌধুরী অন্তর বলেন, ‘প্রতি বছরই এখানে পূজা করা হয়। একেক সময় একেক ধরনের বার্তা দিতে চেষ্টা করা হয়। যাতে সমাজে এর প্রভাব পড়ে। ’
তেমনি আরেকটি থিমভিত্তিক পূজাম-প সাজানো হয়েছে বারেক বিল্ডিংয়ের ‘একতাগোষ্ঠী পূজা উৎযাপন পরিষদ’-এর আয়োজনে। যেখানে ম-পে আসা দর্শনার্থীদের গ্রামীণ পরিবেশের স্বাদ দিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাঁশের নানা কারুকার্য। নাম দেওয়া হয়েছে ‘অনূভুতি’। সেখানে বাঁশের ঝুড়ি, চালাসহ হারিয়ে যাওয়া বাঁেশর হরেক রকম পণ্যের ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যাতে বর্তমান প্রজন্ম বাঁশের নানা পণ্য দেখতে পায়।
‘একতাগোষ্ঠী পূজা উদযাপন পরিষদ’ এর সভাপতি বাবুল দাশ তনয় বলেন, ‘এখন বাঁশের ব্যবহার দিন দিন কমছে। অথচ এটি যেমন পরিবেশবান্ধব ঠিক তেমনি এটি দিয়ে নানা পণ্য তৈরি করা যায়। তাই এই বাঁশের ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা এ থিমটি তুলে ধরেছি।’
ভারতের বেনারসির আদলে থিমভিত্তিক পূজাম-প হয়েছে আন্দরকিল্লার রাজা পুকুর লেইনে। ককসিটে তৈরি বেনারসের মন্দির। গঙ্গায় ভাসছে প্রদীপ আর পদ্ম ফুল। মূলত গঙ্গা আরতিতে থাকা পুরোহিতদের ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই মণ্ডপে।
‘নারী’ নামে থিমভিত্তিক পূজা উদযাপন করছে ‘টেকপাড়া সার্বজনীন শ্রী শ্রী শারদীয় দুর্গোৎসব’ আয়োজক কমিটি। সেখানে দেখানো হয়েছে অত্যাচার, নির্যাতনকে পাশ কাটিয়ে সকল পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। তারা ঘর-বাইরে সব জায়গায় সমানতালে সামলাতে পারে এমনই বার্তা দেওয়া হয়েছে এই পূজাম-পটিতে।
‘টেরীবাজার বাই লেইন পূজা উৎযাপন পরিষদ’ এ ৬ষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত যা আয়োজন হয় তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কুমার পাড়া, ঢাক ঢোলের মেরামতের ব্যস্ততা, মন্দিরে মন্দিরে পূজোর সাজসহ নানা বিষয়কে তুলে আনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম মহানগের এবার ২৯৩টি ম-পে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি পূজাম-পেই এভাবে থিমভিত্তিক চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ( ২০ অক্টাবর) ষষ্ঠীর মাধ্যমে শুরু হয় পূজা।
গতকাল (২২ অক্টোবর) ছিলো অষ্টমী বা কুমারি পূজা। এ সময় নগরের পাথরঘাটার ‘ শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দির’ এবং হাজারি লেইনের ‘শ্রী শ্রী পঞ্চমাতা বিগ্রহ বাড়ী ও সেবাশ্রম’ এ কুমারি পূজা পালন করা হয়।