গত বৃহস্পতিবার (১১ জুন) গণভবন থেকে সারাদেশে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ প্রতিহত করতে আলেম-ওলামা, ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও অভিভাবকদের প্রতি আহবান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। এখানে ইসলামের চর্চা যেন ভালোভাবে হয়, ইসলামের সংস্কৃতির বিকাশ যাতে ভালো মতো হয়. ইসলামের মর্মবাণী যেন মানুষের কাছে পৌঁছায়। আমরা দেখেছি এই ধর্মের নামে কীভাকে এখানে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা হয়েছে। কিছু লোক, আমাদের দেশে না শুধু, সারাবিশ্বেই দেখেছি ধর্মের নামে মানুষ খুন করা হয়েছে। মানুষকে খুন করলেই নাকি বেহেস্তে চলে যাবে। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, যারা এতদিন মানুষ খুন করেছে, তাদের কে কে বেহেস্তে গেছেন, সেটা কি কেউ বলতে পারবে? বলতে পারবে না।
সরকারপ্রধানের এই বক্তব্য অদূর অতীতে দেশের বুকে ঘটে যাওয়া জঙ্গিবাদী কর্মকা- এবং সিরিয়া ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ইসলামিক স্টেটের নামে হত্যাকা- ও নৃশংসতা সংঘটিত হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ইসলামের নামে, জেহাদের নামে এরও আগে আল কায়েদা ও ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বে, আফগানিস্তানে তালেবানদের নেতৃত্বে নারকীয় রক্তপাতের তা-ব দেখেছে বিশ্বের মানুষ। এর সবই হয়েছে মহান শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলামের নামে। অথচ ইসলামের যে-মৌলবাণী বিশ্ববাসীর কছে এসেছে তার নির্যাস হচ্ছে, ‘লাকুম দীনুকুম ওয়াল ইয়া দীন’ অর্থাৎ ‘তোমার ধর্ম তোমার, আমার ধর্ম আমার’। এভাবেই ইসলামের পতাকাতলে বিশ্বের মানুষের একাংশ শান্তি ও স্বস্তিতে বসবাস করে আসছে সুদূর কাল থেকে। কিন্তু এই একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ইসলামের ওই মহান মিনারকে অবনমিত করতে উঠেপড়ে লাগে কিছু বিপথগামী মুসলমান নামধারী মানুষ। তারা এমন নেটওয়ার্কও প্রসারিত করে, যার আওতায় পাকিস্তান-ভারত-বালাদেশেও তাদের কিছু জঙ্গি অনুসারী গড়ে ওঠে। তারা বিভিন্ন স্থানে বোমা ও অস্ত্রশস্ত্র বানানোর কারখানা গড়ে তুলে এবং মহান ইসলামের নামে জঙ্গি তৎপরতা শুরু করে। তারা বোমাবাজির মাধ্যমে আমাদের দেশেও আতংক সৃষ্টি করে। সরকারি কর্মকর্তা ও মুক্তচিন্তার মানুষজনকে অবাধে হত্যায় মাতে। দেশে এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। শুধু তাই নয়, এসব জঙ্গিরা তাদের কর্মকা-ে দেশের কিছু তরুণ-যুবাকেও জেহাদের নামে, ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে বিপথগামী করে। তাদের স্বাভাবিক জীবনকে নষ্ট করে দেয়।
সরকারের এই উদ্যোগ সেই মসীলিপ্ত অতীতকে শুভ্র-সমুজ্জ্বল করে তোলারই সময়োচিত পদক্ষেপ। নির্মিত ও নির্মিতব্য মডেল মসজিদ ও ইসলামিক কালচারাল সেন্টারে বুনিয়দি ইসলামের স্যেম্য-সাম্যের দিকটি শিক্ষা দেওয়া হবে। তরুণ-যুবারা এখানে ইসরামের প্রকৃত আলোদায়ী শিক্ষায় স্নাত হবে। সাচ্চা মুসলমান ও মানুষ হয়ে গড়ে উঠবে। জঙ্গিবাদ ও জঙ্গি কার্যক্রমকে প্রত্যাখ্যান করবে।
সরকারের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে সুদূরপ্রসারী ও কল্যণকামী সমাজ প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।
মতামত সম্পাদকীয়