ভূঁইয়া নজরুল »
চট্টগ্রামে এখনও ভ্যাকসিনের বাইরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ৮ লাখ শিক্ষার্থী। বর্তমানে দিনে প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থীকে ভ্যাকসিন দেওয়া হলেও কাল সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে ক্র্যাশ কর্মসূচি। দিনে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীকে ভ্যাকসিন দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগুচ্ছে জেলা শিক্ষা অফিস ও সিভিল সার্জন দপ্তর। আগামী ১৬ জানুয়ারির মধ্যে জেলার প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন দেওয়ার টার্গেট করা হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রামে করোনার সংক্রমণ হার বেড়ে গতকাল ৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ হয়েছে। সারাদেশে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশ অতিক্রম করেছে। করোনা বেড়ে গেলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হবে, কী হবে না তা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্যবিষয়ক কারিগরি কমিটির সাথে বৈঠকে বসছে আজ রোববার।
শিক্ষার্থীদের করোনার ভ্যাকসিন কর্মসূচি সমন্বয় করছে জেলা শিক্ষা অফিস। চট্টগ্রামে গত দেড় মাস আগে থেকে শিক্ষার্থীদের (১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী) করোনার টিকা দেওয়া শুরু হলেও এখন পর্যন্ত কতোজনকে দেওয়া হয়েছে? এ বিষয়ে চট্টগ্রামের জেলা শিক্ষা অফিসার ফরিদুল আলম হোসাইনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলায় মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসায় মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৭২ জন। এরমধ্যে এ পর্যন্ত ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে ৭৮ হাজার ৮০৭ জনকে। এরমধ্যে প্রথম ডোজ দিয়েছে ৬৭ হাজার ৬০১ জন ও দ্বিতীয় ডোজ দিয়েছে ১১ হাজার ২০৬ জন।’
তিনি আরও বলেন, নগরের ৫টি কেন্দ্রে (চট্টগ্রাম গ্রামার স্কুলের দুই ক্যাম্পাসে দুটি কেন্দ্র, প্রেসিডেন্সি স্কুল, ইউরোপিয়ান গ্রামার স্কুল ও স্যার মরিস ব্রাউন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল) ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। এসব কেন্দ্রে গড়ে প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী ভ্যাকসিন নিচ্ছে।
নগরে আরও কেন্দ্র বাড়ানো হয়নি কেন?
ফাইজারের ভ্যাকসিন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে রাখতে হয়। নগরের অনেক বড় স্কুলেও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ নেই। আমরা চাইলেও অনেক স্কুলে কেন্দ্র বাড়াতে পারিনি। যেসব স্কুলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ রয়েছে, সেগুলোকে কেন্দ্র হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা শিক্ষা অফিসার ফরিদুল আলম হোসাইনী।
কাল থেকে টার্গেট দিনে ২০ হাজার
আগামীকাল সোমবার থেকে আগ্রাবাদ, আন্দরকিল্লা ও জামালখানের তিনটি কমিউনিটি সেন্টারে ব্যাপক হারে শুরু হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম। এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘তিনটি কমিউনিটি সেন্টারের পাশাপাশি উপজেলাগুলোতেও আমরা ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু করছি। সেই হিসেবে আমাদের টার্গেট দিনে ২০ থেকে ২৫ হাজার শিক্ষার্থীকে ভ্যাকসিন দেওয়া।’
তাহলে কি স্কুল বন্ধ না দিলেও হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত দেবে জাতীয়ভাবে। তবে আমরা ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন কার্যক্রম (প্রথম ডোজ) ১৬ জানুয়ারির মধ্যে ৮০ শতাংশ শেষ করতে চাই।’
জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া শিক্ষার্থীদের কীভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা অফিসার ফরিদুল আলম হোসাইনী বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে তালিকা আমাদের পাঠানো হয়। সেই তালিকা অনুযায়ী আমরা ভ্যাকসিন দিচ্ছি। তবে শিক্ষার্থীদের জন্মসনদ দেখে ১২ বছরের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।’
এদিকে দুই ডোজের ভ্যাকসিন নেওয়ার পর করোনায় আক্রান্তের হার কম। এরপরও যদি কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকে স্বাস্থ্যের বেশি অবনতি হয় না বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। গত দুই বছর জেলা সিভিল সার্জনের দায়িত্বে থাকা এবং বর্তমানে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ফজলে রাব্বী বলেন, ‘ভ্যাকসিন দিলে করোনার ঝুঁকি কম থাকে। তবে ভ্যাকসিন দেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলতে হবে। এজন্যই সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদেরও ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।’
কোভিড নিয়ে গবেষণা করছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি টিম। ভ্যাকসিন দেয়ার পরও কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কোভিড ল্যাবের ইনচার্জ প্রফেসর ড. শারমিন চৌধুরী বলেন,‘ ভ্যাকসিন দেওয়া থাকলে কোভিডে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। তাই ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। আর শিক্ষার্থীদের জন্যও একই হওয়ার কথা।’
উল্লেখ্য, গত দুই বছর করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রায় বন্ধ ছিল। তবে এবার আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে আগ্রহী নয় সরকার। এজন্য ১২ বছরের অধিক শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে চায়।