সুপ্রভাত ডেস্ক »
মালয়েশিয়া থেকে সংগ্রহ করে ভ্যাপ ও ইসিগারেটের মাধ্যমে দেশে ভয়ঙ্কর মাদক এমডিএমবি বিক্রি করছিল একটি চক্র। চক্রটির মূলহোতাসহ সকল সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ তৈরি করে এই মাদক ক্রেতাদের মধ্যে সরবরাহ করা হতো বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হাসান মারুফ।
আজ (শুক্রবার) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি। দেশে প্রথমবারের মতো নতুন প্রকারের মাদক এমডিএমবির বড় একটি চালান জব্দের বিষয়ে আজকের সংবাদ সন্মেলনের এসব জানানো হয়। এই চালানের সাথে জড়িত যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা হলেন— একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত ছাত্র খন্দকার তৌকিরুল কবির তামিম (২৬), মেহেদী হাসান রাকিব (২৬), একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেলস এবং মার্কেটিং কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত মো. মাসুম মাসফিকুর রহমান ওরফে সাহস (২৭), ভারতে পড়াশোনা করে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করা মো. আশরাফুল ইসলাম (২৫)।
সংবাদ সম্মেলনে মো. হাসান মারুফ বলেন, সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে তরুণ সমাজের মধ্যে ই-সিগারেট এবং ভেপের ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ই-সিগারেট ও ভেপের ভেতরে নিকোটিন বা টোবাকো জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করা হতো, যাতে আইনানুগ কোনো বাধা নেই। কিন্তু সম্প্রতি ই-সিগারেট ও ভেপের ভেতরে নিউ সাইকোঅ্যাকটিভ সাবস্ট্যান্স (এনপিএস), অপিওডসসহ বিভিন্ন ধরনের বিপজ্জনক সাবস্ট্যান্সের ব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে ইন্টারন্যাশনাল নার্কোটিক কন্ট্রোল বোর্ড (আইএনসিবি) কর্তৃক অপারেশন ই-ভেপোর-এইট নামে বিশ্বব্যাপী একটি ইন্টেলিজেন্স গ্যাদারিং প্রোগ্রাম শুরু করা হয়। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলাদেশেও উল্লিখিত মাদকের বিস্তার রোধে নজরদারিতে নামে ডিএনসি ঢাকা গোয়েন্দার একটি চৌকস টিম। যাদের তৎপরতায় উন্মোচিত হয় ভয়ংকর মাদক এমডিএমবি ছড়িয়ে পড়ার বাস্তব চিত্র।
অনলাইন-ডার্ক ওয়েবে নজরদারিতে নতুন মাদক শনাক্ত
মাদকের ডিজি বলেন, ঢাকার গোয়েন্দা টিম অফলাইন ও অনলাইন মার্কেটপ্লেস, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ডার্ক ওয়েবে নজরদারি শুরু করে। এ সময় ভেপের মাধ্যমে গোপনে ছড়িয়ে পড়া এক নতুন ধরনের সিনথেটিক মাদক এমডিএমবির সন্ধান পাওয়া যায় এবং খুচরা বিক্রেতা হিসেবে তামিমকে চিহ্নিত করা হয়। একই সঙ্গে সোর্স ব্যবহার করে তার কাছ থেকে স্যাম্পল অর্ডার করা হয়।
অর্ডার করা সেই মাদক ডেলিভারির মুহূর্তে ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের উপপরিচালক মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে, ঢাকা মেট্রো উত্তর ও দক্ষিণের একটি সমন্বিত টিম গত বুধবার পল্লবীতে ২০ মিলি এমডিএমবিসহ প্রথম সরবরাহকারী তামিমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তামিমকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট বিশ্লেষণ করে এই ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট আসামি মেহেদী হাসান রাকিবের অবস্থান চিহ্নিত করা হয়। পরবর্তীতে গোয়েন্দা নজরদারি ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ঢাকার মিরপুর এলাকা হতে ১০ মিলি এমডিএমবিসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি বলেন, আসামি রাকিবের জবানবন্দিতে উদ্ঘাটিত হয় দেশের অভ্যন্তরে থাকা একটি এমডিএমবি-সাপ্লাই নেটওয়ার্ক। সেই সাথে শনাক্ত করা হয় মালয়েশিয়া থেকে দেশে এমডিএমবি আনার মূলহোতা আশরাফ ও সাহস। পরবর্তীতে অভিযানে চক্রের দুই প্রধানকে গ্রেপ্তার করে তাদের বাড়িতে তল্লাশি চালালে উদ্ধার হয় ৩১০ মিলিলিটারের ৫ কন্টেইনার এমডিএমবি পিনাকাসহ উদ্ধার মাদকদ্রব্যগুলো।
তিনি আরও বলেন, মিরপুর সেনপাড়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা আশরাফকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবত সমাজের এলিট শ্রেণীর মাঝে তিনি এই ধরনের মাদক সরবরাহ করতেন। মূলত ই-সিগারেট ও ভেপ ব্যবহারকারীদের টার্গেট করে তার সহযোগী সাহসের সমন্বয়ে এমডিএমবি মাদকের একটি মার্কেট তৈরির প্রচেষ্টা করছিল। বিভিন্ন সময় মালয়শিয়ায় যাতায়াত করায় সেখান থেকে সে এই মাদক সংগ্রহ করে দেশে সরবরাহ করত।
মাদকের ডিজি বলেন, চক্রটি অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুককে পুরোপুরি ‘অদৃশ্য বাজার’ হিসেবে ব্যবহার করত। ফেসবুকের ক্লোজড গ্রুপ, রিভিউ পেজ ও ভুয়া অ্যাকাউন্টে গোপন সংকেতভিত্তিক পোস্ট দিত তারা। যেখানে সাধারণ ফ্লেভার, গেমিং টুল বা “পোর্টেবল ডিভাইস”-এর আড়ালে বোঝানো হতো আসল পণ্য। আগ্রহী ক্রেতা ইনবক্সে মেসেজ পাঠালে তাকে নিয়ে যাওয়া হতো ইন্ড-টু-ইন্ড এনক্রিপটেড হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে। যেখানে কোডওয়ার্ডে দাম ঠিক করা হতো। অবস্থান শেয়ার, লাইভ ট্র্যাকিং এবং নির্দিষ্ট ইমোজি ব্যবহার করে সরবরাহ নিশ্চিত করা হতো। যা দেখে সাধারণ ব্যবহারকারী বুঝতেই পারত না যে এটি আসলে ভয়ংকর এই মাদকের গোপন ডিজিটাল বিক্রয় নেটওয়ার্ক।


















































