ভেজাল চা পাতার রমরমা বাণিজ্য

dav

রাজিব শর্মা

প্রশাসনের নির্দেশনাকে তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন কোম্পানির লোগো ও মোড়ক হুবহুভাবে তৈরি করে নামে বেনামে ভেজাল চা পাতার রমরমা বাণিজ্য করছে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী।
গত কয়েকমাস ধরে বাংলাদেশ চা বোর্ড লাগাতার অভিযান পরিচালনা করে বেশকিছু ভেজাল চা জব্দ করার পর এসব অসাধু ব্যবসায়ীর তৎপরতা কিছুটা কমলেও বর্তমান আবারো তা চাঙা হয়ে উঠছে। এ ব্যাপারে বাজার তদারকিতে প্রশাসনিক কার্যক্রমে অবহেলার অভিযোগ তুলছেন খোদ চা পাতা ব্যবসায়ীদের।
গতকাল রোববার ভোজ্যপণ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই, রাজাখালী, কোরবানিগঞ্জ, চকবাজার, কর্ণফুলী ব্রিজ, কোতোয়ালী মোড়, লালদীঘি, জেল রোডসহ অর্ধ শতাধিক এলাকায় খোলাবাজারে নানা নামে বেনামে এসব ভেজাল চা বিক্রি করতে দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বড় কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর নামের বর্ণ পরিবর্তন করে অন্য নামে এবং একই লোগো ও মোড়ক ব্যবহার করছে কিছু ব্যবসায়ী। তার মধ্যে অনেক দোকান দেখা যায় ভাসমান। তাছাড়া এসব ব্যবসার মূল দোকান বা অফিস কোথায় তার কোন উত্তর দেননি এসব চা পাতা ব্যবসায়ীরা। চটকদার এসব মোড়কে আবার বিএসটিআইসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রশাসনের লোগোসহ অনুমোদনকৃত সিল দেখা যায়। তাছাড়া অনেকেই চাক্তাই থেকে খোলা চা কিনে এনে নিজেরা নিজেরা প্যাকেটে ঢুকিয়ে বাজারজাতকরণ করছে বলেও জানান ভাসমান ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া খোলা বাজারের চা পাতায় চায়ের ঘ্রাণ পাওয়ার জন্য নানা রঞ্জক মেশানো হয় বলে তদারকিতে জানা যায়।
এদিকে নতুন চাক্তাই এলাকায় তেল ঘর নামের একটি দোকানে সাজানো অবস্থায় রাখা চা পাতার ভেজাল ও মানের বিষয়ে জানতে চাইলে ঐ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মো. মহিনউদ্দিন বলেন, এসব প্যাকেট আমরা করি না। এসব চায়ের মান সম্পর্কে আমরা তেমন জানি না। কারা তৈরি করে তাও জানি না। চাক্তাই থেকে এনে আমরা বিক্রি করি। তবে কেউ যদি ভেজালের অভিযোগ আনে আমরা ফেরত নিচ্ছি। এই মুহূর্তে চায়ের মান কেমন বলতে পারছি না। আপনারা চাক্তাইয়ের ব্যবসায়ীদের থেকে জেনে নেবেন।
অন্যদিকে কোরবানিগঞ্জ এলাকায় শিবু দে নামের এক চা পাতা ব্যবসায়ী নিজেই চাক্তাই থেকে এনে প্যাকেট করে বিক্রি করেন বলে জানান। তিনি বলেন, চাক্তাই খোলা বাজারে চা পাতা বিক্রি করে। আমরা ওখান থেকে প্যাকেট করে বিক্রি করি।
কোনো ক্রেতা আপনার চায়ের মান সম্পর্কে জানতে চাইলে আপনি কি বলবেন, এমন প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, চায়ের মান সম্পর্কে আমি জানি না। আমি প্যাকেট করে বিক্রি করি। আড়তে খোলা বিক্রি করা হয়। প্রশাসনের উচিত তাদের ধরা।
এদিকে চাক্তাইয়ের বেশ কিছু এলাকায় খোলা ও নামে-বেনামে নানা কোম্পানির চা দেদারসে বিক্রি করা হচ্ছে। চা পাতার অনেক প্যাকেটে যেসব নাম রয়েছে তা সম্পর্কে অনেকে জানেও না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাক্তাইয়ের এক চা ব্যবসায়ী বলেন, আমরা সিলেট ও পঞ্চগড় থেকে খোলা চা কিনে এখানে খোলা বিক্রি করি। কিন্তু কে বা কারা এসব প্যাকেট করে আমরা জানিনা। তবে বাজারে যেসব ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন নামে প্যাকেট চা বিক্রি করে তাদের বিষয়ে তলব করতে পারে প্রশাসন। আর আমরা যারা খোলা বিক্রি করি, আমাদের প্রশাসন ধরবে না। কারণ আমরা যেভাবে কিনছি সেভাবে বিক্রি করছি। আমরা ভেজাল করছি না।
এদিকে বাংলাদেশ চা র্বোডের বেশ কয়েকটি অভিযানে ভেজাল চা পাতা প্যাকিং ও বাজারজাতকরণের সত্যতা মিলেছে। বিএসটিআই অনুমোদন, অনুমোদনবিহীন প্যাকিং ও লোগো ব্যবহার করে বাজারজাতকরণের দায়ে সদরঘাট এলাকার ‘কর্ণফুলী চা ঘর’ ও ‘হক টি হাউস’ নামের দুইটি প্রতিষ্ঠানকেও জরিমানা করা হয়েছিলো। অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ভেজাল চা জব্দ করছিলো সংস্থাটি। তবে গত দুই মাস আগের মতো তেমন অভিযান পরিচালিত হচ্ছে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জের এক চা ব্যবসায়ী বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা ভেজাল চা বিক্রি করছে। চা বোর্ডের অভিযানে এ চিত্র উঠে এসেছে। কিন্তু এখন অভিযানের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। ফলে আবারো চাঙা হয়ে উঠছে বিভিন্ন বেনামি কোম্পানি। এখন বাজারে কোনটি আসল বা নকল তা বুঝতে পারবে প্রশাসন। আমরা ব্যবসায়ীরা মনে করছি সব চা আসল। এসব বিষয়ে প্রশাসনিক অভিযান প্রয়োজন।
এদিকে বাংলাদেশ চা বোর্ডের বর্তমান অভিযান সম্পর্কে জানতে চাইলে সংস্থাটির জনসংযোগ ও শ্রম কর্মকর্তা মো. রাজিবুল হাসান কোন তথ্য দিতে রাজি হননি। তিনি বলেন, অভিযানের বিষয়ে আমি তেমন কিছু বলতে পারবো না। আপনারা উপসচিব মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলুন।
অন্যদিকে অভিযানের বিষয়ে বাংলাদেশ চা বোর্ডের উপসচিব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, চায়ের এসব অবৈধ ব্যবসা ও প্রতারণা বন্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছেন চা বোর্ডের ভ্রাম্যমাণ আদালত। জনস্বার্থে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।