ভেজাল ও সরকারি ওষুধের ছড়াছড়ি

হাজারিগলি

নিজস্ব প্রতিবেদক »

নগরীর বিভিন্ন স্থানের ফার্মেসিগুলোতে মেয়াদোত্তীর্ণ ও বিনামূল্যের সরকারি ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। নগরের পাইকারি ওষুধের সবচেয়ে বড় বাজার হাজারি গলি। সেখানে স্বল্পমূল্যে পাওয়া যায় দেশি-বিদেশি, নামে-বেনামে নকল ও অবৈধ ওষুধ। তাছাড়া আরও রয়েছে বিদেশি কসমেটিক্স, বিউটি পার্লারের সৌন্দর্যবর্ধনের নানা কোম্পানির ওষুধ। জেলা প্রশাসন, ওষুধ প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে হাজারি গলির অনেক নামিদামি ফার্মেসিতে অনিয়ম ধরা পড়েছে। এছাড়া নগরের আগ্রাবাদে ওষুধ প্রশাসনের কার্যালয়ের পাশে সেন্ট্রাল ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি চালু করা হয়েছে। যেখানে ওষুধ আসল কিনা যাচাই করা যাচ্ছে।

হাজারি গলির কয়েকজন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘হাজারি গলির পাইকারি ব্যবসায়ীরা কোম্পানি ও ঢাকা থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের (মেডিসিন ব্যবসায়ায়ের মধ্যস্বত্ব কারবারি) থেকে ওষুধ সংগ্রহ করে থাকেন। তার মধ্যে অনেক মধ্যস্বত্ব কারবারিদের সাথে সরকারি হাসপাতালের বিভিন্ন ফার্মাসিস্টদের সম্পর্ক থাকে, যার ফলে বিনামূল্যের সরকারি ওষুধ দালালের মাধ্যমে হাজারি গলির অধিকাংশ ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে। ফলে সেখান থেকে নগরীর বিভিন্ন স্থানের ফার্মেসিগুলোতে বিক্রি করা হয়। তাছাড়া প্রতিবছর ভারতে বাংলাদেশিরা চিকিৎসা করতে গেলে অনেকটা হাজারি গলির ফার্মেসিগুলোর ওপর নির্ভরশীল। ফলে সেই সুযোগ ও অধিক লাভের আশায় অনেক ওষুধ ব্যবসায়ী এসব অননুমোদিত বিদেশি এবং বিক্রয় নিষিদ্ধ বিনামূল্যের সরকারি ওষুধ দোকানে রাখেন।

এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে ওষুধ প্রশাসন চট্টগ্রাম অফিসের উপপরিচালক এমডি কাইয়ুম বলেন, ফার্মেসিগুলোতে ভেজাল ও সরকারি বিনামূল্যের ওষুধের বেচাকেনা বর্তমান অনেকটা কমে এসেছে। আগে আমাদের আইনগত কিছু জটিলতা ছিলো। যার কারণে সরাসরি অভিযান পরিচালনা করতে কিছুটা সমস্যা হয়েছিলো। এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ওষুধ প্রশাসনে বিশেষ সহযোগিতায় তা কেটে উঠছে। আমরা এখন ফার্মেসিগুলো কঠোর মনিটরিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওষুধ ভেজাল ও নকল কি’না যাচাই করার জন্য চট্টগ্রাম ও ঢাকায় দুটি ল্যাব আছে। আগে চট্টগ্রামের ল্যাবটি বন্ধ ছিল। এখন তা চালু হয়েছে। তাছাড়া ওষুধের বাজার তদারকির জন্য ওষুধ প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীঘ্রই ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু হবে। এ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালু হলে ওষুধের বাজারে অপরাধ অনেকটা কেেম আসবে বলে মনে করছি।

বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতি চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি সমীর কান্তি সিকদার বলেন, ‘হাজারি লেনসহ বিভিন্ন স্থানে প্রশাসন অভিযান চালালেই ভেজাল ওষুধ বেরিয়ে আসছে। ফার্মেসিগুলোতে দিন দিন ভেজাল, স্যাম্পল ও আনরেজিস্ট্রার্ড ওষুধের বেচাকেনা বাড়ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে হাজারি গলিতে জেলা প্রশাসনের অভিযানে লক্ষ লক্ষ টাকার ভেজাল ওষুধ ও বিক্রয় নিষিদ্ধ ওষুধ জব্দ হয়েছে। এখন ওষুধ প্রশাসনের আরো কঠোর তদারকির প্রয়োজন। তাছাড়া এ অপরাধ কমানো সম্ভব নয়।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, আগে অভিযানে যেভাবে ভেজাল, বিক্রিতে নিষিদ্ধ সরকারি ওষুধ ও স্যাম্পল বের হতো, এখন তা কমে আসছে। তবে আমরা ওষুধের দোকানগুলোতে আবারো অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জনগণ তথ্য দিলেই আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত বলেন, ‘গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা হাজারি গলিতে অভিযানে যাওয়ার পর ফার্মেসিগুলো বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। মার্কেট কমিটি, ফার্মেসি মালিক সমিতি ও স্থানীয় নেতারা আমাদের সাথে ছিলেন। তাদের অনুরোধে দোকান খুলতে রাজি হননি অনেক ব্যবসায়ী। পরে বাধ্য হয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্তরা গুদামে ঢুকেন। এতে বিপুল পরিমাণ বিদেশি অনিবন্ধিত ওষুধ জব্দ করা হয়। আমরা শীঘ্রই আবারও অভিযান পরিচালনা করব।’