নিজস্ব প্রতিবেদক »
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ভুয়া মামলায় কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন, সরকার সে বিষয়ে সজাগ রয়েছে।
তিনি গতকাল নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সিভিল ডিফেন্স, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আগে ভুয়া মামলা করত পুলিশ। তারা ১০টা নাম আর ৫০টা বেনামি আসামি দিত। এখন পাবলিক (জনগণ) দিচ্ছে ১০টা নাম, ৫০টা ভুয়া নাম। মামলাগুলো পুলিশ, র্যাব কিংবা আনসার দেয়নি। জনগণই দিচ্ছে। তদন্তে কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন, সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি আমরা।’
মামলার আসামি হওয়া এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ সম্পর্কে আমরা টাকা দিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছি বিভিন্ন মিডিয়ায়। সত্যিকারের মামলা হলে আপনাকে (প্রশ্নকারী সাংবাদিক) ধরার কথা। এ রকম যাঁদের নামে মামলা হয়েছে, কাউকে কি ধরা হয়েছে? আপনি যে কোনো হেনস্তার শিকার হননি, এ জন্য আমাদের আরও ধন্যবাদ দেওয়ার কথা।’
পাশের একটি দেশ বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের কাছে অনুরোধ মিথ্যা সংবাদ দেবেন না। এতে পাশের দেশ সুবিধা পেয়ে যায়। আমাদের দেশের মিডিয়ার যে একটা সুনাম আছে, পাশের দেশের মিডিয়ার কিন্তু সেই সুনাম নেই। তারা মিথ্যাটাই প্রচার করে বেশি। আর এটা কিন্তু কাউন্টার করতে পারেন আপনারা (সাংবাদিক)।’
অন্তর্বর্তী সরকারের ভুল হলে ধরিয়ে দিতে অনুরোধ জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের ভুল হলে ধরিয়ে দিন। কেউ পয়সা মারছে কি না, তা প্রকাশ করুন।’
চট্টগ্রামে সম্প্রতি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নতুন ঐক্যজোট দাবি করেছে, সরকার, রাষ্ট্র এবং প্রশাসনের একটি পক্ষ দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য ইন্ধন দিচ্ছে এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এটার উত্তর আপনারা সবচেয়ে ভালো দিতে পারেন। আপনি এটা লেখেন আমরা কারও ক্ষতি করছি না। আপনারা অনুসন্ধান করে বলেন। আর উসকানির বিষয় তো আগেই বললাম। পাশের দেশ উসকানি দিচ্ছে।’ পাশের দেশ বলতে কাদের বোঝানো হচ্ছে এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেননি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
সম্প্রতি পাকিস্তান থেকে আসা জাহাজ নিয়ে বিভিন্ন গুজব ছড়ানো হচ্ছে, বিষয়টিকে কীভাবে দেখা হচ্ছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘এই জাহাজ “মিডল ইস্ট” (মধ্যপ্রাচ্য) থেকে আসছে। সেখান থেকে এসে একটা দেশে গেছে, সেখান থেকে আমাদের দেশে আসছে। আমাদের দেশে কোনো দেশের জাহাজ আসা নিষিদ্ধ আছে? আমরা কি কারও কাছে বন্দী যে শুধু তাকেই সেবা করব? আমার দেশ সবার ওপরে। খেজুর, পেঁয়াজ, আলু এগুলো সামনের রোজার সময় দরকার। এগুলো কি আমরা আসতে দেব না? যারা এগুলো রটাচ্ছে, তারা আমাদের শত্রু।’
চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি সন্তোষজনক নয়, উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটামুটি। পুরোপুরি সন্তোষজনক নয়। এই যে একটি পূজা গেল, এটি কত সুন্দরভাবে হয়ে গেল। আজ আমরা একটি মতবিনিময় সভা করেছি। বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে তাঁদের সঙ্গে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কীভাবে আরও উন্নতি করা যায়, এ ব্যাপারে আলাপ করা হয়েছে। আপনাদেরও সাহায্য এবং সহযোগিতা চাই। আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া এটি সম্ভব নয়। পরিস্থিতির অবশ্যই উন্নতি হবে।’
পুলিশের কাজে ফিরে আসা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশের মনোবল আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রাফটা নিচের দিকে নেমে গেলে খারাপ। গ্রাফটা কিন্তু আস্তে আস্তে ওপরের দিকে উঠেছে। মনোবল দুই দিনে চেঞ্জ হয় না। একটু সময় লাগে। আপনারা সময় না দিলে এটা সম্ভব নয়। আমার কাছে জাদু নেই যে বললেই সব হয়ে যাবে।’
যেসব পুলিশ সদস্য এখনো কাজে যোগদান করেননি, তাঁরা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যাঁরা যোগদান করেননি, তাঁরা আমাদের চোখে অপরাধী। তাঁদের আইনের আওতায় অবশ্যই আনা হবে। আপনারা খোঁজ নিতে পারলে আমি ধরব। আপনারা খোঁজ নিয়ে জানান। ইতিমধ্যে অনেককে গ্রেফতারও করা হয়েছে।’
চট্টগ্রামে অস্ত্রধারী অনেক চিহ্নিত সন্ত্রাসী আছে যারা জুলাই অভ্যুত্থানে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের ওপর গুলি চালিয়েছে, তাদের অনেকেই এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে, তাদের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ইতিমধ্যে অনেককেই ধরা হয়েছে, অভিযান চলছে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে আমাদেরকে যদি সহযোগিতা করেন, তবে আরো দ্রুততম সময়ে তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে তথ্য নিয়ে তাদের গ্রেফতার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি নির্দেশ দেন।
মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম, র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহীদুর রহমান, অতিরিক্ত চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নুরী, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ শাররিফ মানি, নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ।