সুপ্রভাত ডেস্ক »
একই একাদশ নিয়ে সেই একই ছন্দে খেলল বাংলাদেশ। গোলের দেখা মিলল ১ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডেই; সিরাত জাহান স্বপ্নার মুগ্ধতা ছড়ানো শটে। হ্যাটট্রিক উপহার দিলেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। গোলের সৌরভ ছড়ালেন কৃষ্ণা-ঋতুপর্ণারাও। ভুটানকে গুঁড়িয়ে মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠল বাংলাদেশ। এদিকে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক নেপাল। কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সেমিফাইনালে নেপাল ১-০ গোলে ভারতকে হারায়। ১৯ সেপ্টেম্বর নেপাল ও বাংলাদেশ শিরোপার লড়াইয়ে নামবে।
নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে শুক্রবার মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম সেমি-ফাইনালে ৮-০ গোলে জিতেছে বাংলাদেশ। দুই অর্ধে চারটি করে গোল করে বাংলাদেশ। খবর বিডিনিউজের।
সাবিনা করেন তিন গোল। একটি করে গোল স্বপ্না, কৃষ্ণা রানী সরকার, ঋতুপর্ণা চাকমা, মাসুরা পারভীন ও তহুরা খাতুনের।
এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সাফের ফাইনালে উঠল বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে ভারতের শিলিগুঁড়ির আসরে প্রথম ফাইনাল খেলেছিল দল।
প্রথম সেকেন্ড থেকে গোলের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ার হুঙ্কার আগেই দিয়েছিল বাংলাদেশ। মাঠেও ঠিক তাই করে দেখায় তারা। গোলও পেয়ে যায় ম্যাচ শুরু হতেই, ১ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডে। মনিকা চাকমার থ্রু পাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গোলরক্ষককে কাটিয়ে নিখুঁত কোনাকুনি শটে লক্ষ্যভেদ করেন সিরাত জাহান স্বপ্না।
পঞ্চম মিনিটে মারিয়া মান্দার শট সরাসরি গোলরক্ষকের গ্লাভসে জমে যায়। একটু পরই পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে বক্সের বাইরে এসে ভুটানের আক্রমণ ভেস্তে দেন গোলরক্ষক রুপনা চাকমা।
দ্বাদশ মিনিটে বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা স্বপ্না প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারের চার্জে পড়ে যান। বেশ কিছুক্ষণ চিকিৎসা নেওয়ার পর খোঁড়াতে খোঁড়াতে মাঠ ছাড়েন এই ফরোয়ার্ড। বদলি নামেন ঋতুপর্ণা।
পাঁচ মিনিট পর গোলরক্ষককে কাটিয়ে দূরূহ কোণ থেকে দারুণ গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন সাবিনা। মাঝমাঠের একটু উপর থেকে নিখুঁত ক্রসে সুর বেঁধে দিয়েছিলেন মারিয়া।
২৪তম মিনিটে মনিকার ক্রসে কৃষ্ণা পা ছুঁইয়েছিলেন, কিন্তু বল যায় পোস্টের বাইরে। ভালো সুযোগ নষ্টের হতাশায় মাথায় হাত উঠে যায় এই ফরোয়ার্ডের।
বৃষ্টিভেজা ভারি মাঠে বল পায়ে রেখে পাসিং ফুটবলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে ভুটান। কিন্ত কখনও আখিঁ খাতুন, কখনও শিউলি তাদের আক্রমণের তাল কেটে দেন। পোস্টের নিচে যথারীতি বিশ্বস্ত ছিলেন রুপনা।
৩০তম মিনিটে মনিকার আড়াআড়ি ক্রসে কৃষ্ণার হেড এক ড্রপ খেয়ে জালে জড়ালে ম্যাচে চালকের আসনে বসে বাংলাদেশ।
পাঁচ মিনিট পর মনিকার থ্রু পাস পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে স্লাইড করলেও পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারেননি গোলরক্ষক। তিনি স্লাইড করার পর ঋতুপর্ণার পায়ে লেগে বল তার সামনেই পড়ে। বাঁ পায়ের নিচু শটে ফাঁকা পোস্টে বল জালে জাড়ান এই ফরোয়ার্ড।
দুটি পরিবর্তন এনে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করে বাংলাদেশ। মনিকা ও শিউলি আজিমকে তুলে শামসুন্নাহার (জুনিয়র) ও নিলুফা ইয়াসমিন নীলাকে নামান কোচ। যথারীতি এ অর্ধেও ভুটানের উপর ছড়ি ঘোরায় বাংলাদেশ।
সানজিদা-সাবিনার দারুণ বোঝাপড়ায় ৫৪তম মিনিটে আবারও গোল উযাপন করে বাংলাদেশ। ডান দিক থেকে বক্সে আড়াআড়ি ক্রস বাড়ান সানজিদা। অরক্ষিত সাবিনা দেখে-শুনে ঠা-া মাথায় ডান পায়ের শটে লক্ষ্যভেদ করেন।
দুই মিনিট পর আবারও গোলের আনন্দে নেচে ওঠে বাংলাদেশ দল। সাবিনার ফ্রি কিক রক্ষণ দেয়াল পেরিয়ে নিচু হয়ে ছুটছিল জালের দিকে। ভুটান গোলরক্ষক বল আটকালেও গ্লাভসে জমাতে পারেনি। আগলা বল আলতো টোকায় জালে জড়ান মাসুরা।
একটু পর সানজিদার শট ক্রসবার কাঁপায়। ৮০তম মিনিটে বাংলাদেশ জালে বল জড়ালেও বাজে অফসাইডের বাঁশি। ৮৭তম মিনিটে গোলমুখ থেকে টোকায় লক্ষ্যভেদ করেন তহুরা। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন সাবিনা।
চলতি আসরে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় আগে থেকে শীর্ষে থাকা সাবিনার গোল হলো ৮টি।
টানা চার জয়ে ফাইনালে উঠল বাংলাদেশ। মালদ্বীপকে ৩-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ পর্ব শুরু করা মেয়েরা দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দেয় ৬-০ ব্যবধানে। এরপর প্রতিযোগিতার পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে ৩-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেরা চারে উঠে আসে বাংলাদেশ।
ভুটানের বিপক্ষে শতভাগ জয়ের ধারা ধরে রাখল বাংলাদেশ। সাফে এর আগে তাদের বিপক্ষে খেলা তিন ম্যাচেই জিতেছিল দল।
গত তিনবারের মতো এবারও বাংলাদেশের জালের নাগাল পেল না ভুটান। চলতি সাফেও জাল অক্ষত রাখার দারুণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে ফাইনালে উঠল ছোটনের দল!
২০১০ সালে শুরু হওয়া সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের এটি ষষ্ঠ আসর। গত পাঁচ আসরেই চ্যাম্পিয়ন ছিল ভারত। এবারই প্রথম ভারতবিহীন ফাইনাল হবে। ফলে সাফ নারী ফুটবল এবার নতুন চ্যাম্পিয়ন পাবে।