কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানির ঘটনার জেরে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দুই দেশে। মঙ্গলবার গভীর রাতে হঠাৎ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কেঁপে ওঠে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর। মঙ্গলবার রাতে ২৫ মিনিট ধরে পাকিস্তানের নয়টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় ভারত, যেগুলোকে ‘সন্ত্রাসীদের আস্তানা’ বলে দাবি করেছে দেশটি। প্রতিবাদে পাকিস্তানও গোলাবর্ষণসহ সামরিক জবাব দিয়েছে।
পেহেলগামের ঘটনায় পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠনকে দায়ী করে দিল্লি। তবে পাকিস্তান তার সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করে। মঙ্গলবারের হামলা নিয়ে ভারত বলেছে কোনো সামরিক স্থাপনায় নয়, বরং সন্ত্রাসীদের আস্তানায় হামলা হয়েছে। আবার পাকিস্তান বলছে বেসামরিক নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে ।
শান্তিকামী মানুষেরা ভাবছে, এই সংঘাত কি শুধু দুই দেশের মধ্যকার বিষয়? বরং এটি গোটা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। এখন ‘পারমাণবিক প্রতিবেশী’ এই দুই রাষ্ট্রের দ্বন্দ্বে বিশ্ব সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন, কারণ বিশ্বের যেকোনো অঞ্চলের যেকোনো সংঘাতের পরিণতি শুধু স্থানীয় নয়, বৈশ্বিক হয়ে দাঁড়ায়।
অবশ্য ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ এবং সংঘাতের ইতিহাস দীর্ঘ ও রক্তাক্ত। ১৯৪৭-এর বিভাজনের পরপরই কাশ্মীর নিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়। একই ইস্যুতে পুনরাবৃত্তি হয় ১৯৬৫ সালে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নিজের পূর্ব প্রান্তে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছিল ভারত, একে কেন্দ্র করে দেশটির পশ্চিম প্রান্তে পাকিস্তানের সাথে পূর্ণ যুদ্ধে লিপ্ত হয় ভারত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত ও পাকিস্তান কোনো দ্বিপাক্ষিক সংঘাতে জড়ালে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য নড়বড়ে হয়ে পড়ে। আফগানিস্তানের অস্থিরতা, চীন-ভারত উত্তেজনা, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা, আর মিয়ানমারের সেনাশাসনের প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়া এমনিতেই উত্তপ্ত। এখন এই নতুন যুদ্ধ পরিস্থিতি পুরো অঞ্চলকেই অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিচ্ছে। বিশেষত, পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই দেশের সরাসরি সংঘাতে জড়ানো মানেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি, চাপ এবং জোটবদ্ধ প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এটি শুধু জাতিসংঘ বা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, চীন, রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্যও উদ্বেগের বিষয়।
আসলে যে কোনো যুদ্ধই দিনশেষে বাণিজ্যিক। এই ধরনের যুদ্ধের পেছনে অস্ত্র বাণিজ্যও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক। মনে রাখার মতো বিষয়, ২০১৮–২২ সালের মধ্যে ভারত ছিল বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক রাষ্ট্র। আবার পাকিস্তানও সাম্প্রতিককালে চীন, তুরস্ক ও কাতার থেকে অস্ত্র, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি সংগ্রহ করছে।
বড় দেশগুলোর লক্ষ্যই হলো অস্ত্র বিক্রি আর মধ্যম দেশগুলো খামোখা সে অস্ত্র কিনে নিজেদের ক্ষতি করে ওদের লাভবান করে। আমরা যেকোনো যুদ্ধ চাই না। আমরা শান্তি চাই। আমরা জানি যুদ্ধে কেউ জেতে না কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয় মানুষ।