নিজস্ব প্রতিবেদক »
নগরীতে কয়েকদিন ধরেই অস্থির হয়ে উঠেছে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির বাজার। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে ডিমের দাম ডজনে বেড়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। আর ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এতে বাচ্চা ও ফিডের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিকে দায়ী করছেন বক্সিরহাট ও পাহাড়তলীর ডিম আড়তদার ও মুরগি ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলেন, পোলট্রি ফার্মের সাথে জড়িত সকল ধরনের পণ্যের দাম বাড়তির কারণে ফার্মের মালিকরা তেমন ব্রয়লার মুরগির চাষ করেননি। ফলে বাজারে মুরগির সংকট দেখা দিয়েছে।
গতকাল সোমবার বক্সিরহাট বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের ডিমের আড়তে পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিম রয়েছে। প্রতি ডজন লেয়ার মুরগির ডিম ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়, হাঁসের ডিম ডজন ২২০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর সপÍাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা বেড়ে ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
পাশাপাশি সোনালি মুরগি কেজিপ্রতি ৬০ টাকা বেড়ে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। একইসাথে বেড়েছে দেশি মুরগিরও দাম। গতকাল কেজি ৪৮০ থেকে ৫৪০ টাকা ধরে দেশি মুরগি বিক্রি হয়েছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর নির্ধারিত বাজার তথ্যে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ৩০ টাকা বেড়ে ১৮০ থেকে ২২০ টাকায় এবং দেশি মুরগি কেজিপ্রতি ১২ শতাংশ বেড়ে ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজিতে নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে ২৫ শতাংশ বেড়ে হালিপ্রতি লেয়ার মুরগির ডিম ৪৩ থেকে ৪৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার প্রতি ডজন ১২৯ টাকা থেকে ১৪১ টাকা দরে নির্ধারণ করেছে এই প্রতিষ্ঠান।
বাজারের এমন পরিস্থিতিতে গত এক সপ্তাহ আগেও যারা ব্রয়লার মুরগি কিংবা ডিম কিনেছিলেন, তেমন ক্রেতারা বাজারে প্রশাসনের তদারকিকে দায়ী করছেন। এতে দোকানে দোকানে মুরগি ও ডিমের দাম নিয়ে চলছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে বাগবিত-া।
বক্সিরহাটে আসা মোজ্জাম্মেল নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ছিলো কেজি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। এখন বলছে ১৮০ টাকা। ডিমের দাম বলছে ডজন ১৪০ টাকা। এখন দেখছি মাংস ও ডিম খাওয়া স্বপ্নের ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে। এমন হলে সাধারণ মানুষ সংসার চালাবে কিভাবে? তাছাড়া বাজারে প্রশাসনের কোন ধরনের তদারকি দেখা যাচ্ছে না।’
বক্সিরহাটের ডিম ব্যবসায়ী মো. হুসাইন বলেন, ‘পাহাড়তলী বাজারের আড়তে ডিমের সংকট। আমাদের সেখান থেকে বাড়তি দামে কিনতে হয়েছে। কাজেই সব খরচ সমন্বয় করে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় ডিম বিক্রি করতে হচ্ছে।’
পাহাড়তলী বাজারের আলিফ ট্রেডিং এর স্বত্বাধিকারী রবিউল হোসেন নামে এক ডিমের আড়তদার বলেন, ‘উত্তরবঙ্গ থেকে তেমন ডিম আসছে না। পুরো আড়ত খালি। শীতকালে ফার্মের মালিকরা তেমন লেয়ার মুরগির চাষ করেনি। তার মধ্যে পোলট্রি খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সবকিছুর দাম বাড়তি। তাই সব খরচের সমন্বয়ের কারণে ডিমের দামও বাড়তি।’
বক্সিরহাটের মুরগি ব্যবসায়ী কবির হোসেন সওদাগর বলেন, ‘বাজারে তো ব্রয়লার মুরগিও তেমন নেই। এক সপ্তাহ ধরে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া থেকে কোন ব্রয়লার মুরগি আনতে পারছি না। নানা অনুষ্ঠান বেড়ে যাওয়ার কারণেও এক সপ্তাহ ধরে বাজারে ব্রয়লার মুরগির সংকট চলছে। অনেক অর্ডারও নিতে পারছি না। ডিম ও মুরগির দাম আপাতত কমার আর সম্ভাবনা দেখছি না।’
বক্সিরহাটের মুরগি ব্যবসায়ী মো. আবুল হাসেম বলেন, ‘পোলট্রির সাথে জড়িত সকল উপাদানের দাম বাড়তি। তার মধ্যে শীতের সময় ব্রয়লারের চাহিদা বাড়ে, সরবরাহ কিছুটা কমে যায়। সেটা স্বাভাবিক অন্যান্য সময়ের মতোই। তবে হুট করে কেন এমন হলো, সেটা আমার জানা নেই।’