চট্টগ্রাম নগরে ফের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা উল্টে খালে পড়ে গেছে। বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে হালিশহর থানার সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। রিকশা উল্টে খালে পড়ে গেলে লাফ দিয়ে চালক নেমে পড়েন । তবে খালে পড়ে যান দুজন যাত্রী। পরে স্থানীয়রা যাত্রীদের উদ্ধার করেন। তবে এ ঘটনায় কারও নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
এর আগে শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) চকবাজারের কাপাসগোলা এলাকার হিজরা খালে ব্যাটারিচালিত রিকশা উল্টে খালে পড়ার ঘটনা ঘটে। এতে ছয়মাসের শিশু সেহরিশ খালের পানিতে তলিয়ে যায়। ১৪ ঘন্টা পর পাঁচ কিলোমিটার দূরে খাল থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়।
চকবাজারের ঘটনার পর কয়েকদিন ধরে কয়েক হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ করেছে পুলিশ। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে এসব ব্যাটারিচালিত রিকশার চার্জিং গ্যারেজে অভিযান চালানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি গ্যারেজে থাকা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জরিমানাও করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি চার্জিং স্টেশন বন্ধ করা হয়েছে। জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থার অপব্যহার রোধে চার্জিং গ্যারেজে এ অভিযান বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়।
আমরা জানতে পেরেছি, চলতি মাসে চট্টগ্রাম মহানগরে অননুমোদিত ৩১৬২টি ব্যাটারিচালিত রিকশা আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে ২৩ তারিখ পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে সিএমপি ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগ ৯১৩টি, ট্রাফিক উত্তর বিভাগ ৯১৮টি, ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগ ১১৬৮টি, ট্রাফিক বন্দর বিভাগ ১৬৩টি সর্বমোট ৩১৬২টি অননুমোদিত ব্যাটারিচালিত রিকশা আটক করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন চার্জিং পয়েন্টগুলোতে অভিযান অব্যাহত আছে।
অনেক দাবি সত্ত্বেও এই রিকশা বন্ধ না হওয়ার বিষয়ে নগরবাসীর অভিযোগ, কিছু এলাকায় স্থানীয় রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় এসব রিকশা নির্বিঘ্নে চলছে। কোনো কোনো চালক জানান, আটক হলে জরিমানা দিয়েও তারা রাস্তায় থাকে। আবার প্রতিবারই দুর্ঘটনার পর প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নেয়। আটকের পাশাপাশি অনেক চালককে জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে এসব রিকশা আবার নিয়মমাফিক ছাড়িয়ে নেওয়া হয় এবং কয়েকদিনের মধ্যেই পুনরায় চলাচল শুরু করে।
চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিদিন কী পরিমাণ ব্যাটারি-চালিত রিকশা চলে, তার সঠিক কোনো সরকারি পরিসংখ্যান নেই। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংখ্যাটি ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে অনেক আগেই। এই বিশাল সংখ্যক রিকশা চালাচ্ছেন মূলত অপ্রশিক্ষিত, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অজ্ঞ কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকেরা। ফলে দুর্ঘটনার হার বেড়েছে কয়েকগুণ।
তালবাহানা না করে এই রিকশা নিয়ে সুপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, এই রিকশা থাকবে কি থাকবে না। সুবিধাজনক বলে এই রিকশা একদম বন্ধ করা সম্ভব নয়। তারচেয়ে এই রিকশার ডিজাইন, রুট পারমিট, চালকদের প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স সবকিছু নিয়মের মধ্যে আনাই হবে সময়োপযোগী কাজ। কর্তৃপক্ষ প্রস্তাবটি বিবেচনা করে দেখতে পারে।