ডেস্ক রিপোর্ট »
সরকারের শিল্প বিকেন্দ্রীকরণের চেষ্টা ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে ঢাকার বাইরের বিভাগগুলো ব্যবসার জন্য বেশি সহায়ক হয়ে উঠছে।
ব্যবসায়িক পরিবেশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে অগ্রগতি করলেও, তবে এখনো বেশকিছু ক্ষেত্রে উন্নতি করতে হবে। বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত হচ্ছে বলে দেশীয় এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
দশটি সূচকের মানদণ্ডের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে। মোট ১০০ পয়েন্টের ভিত্তিতে তৈরি এই সূচকে ব্যবসায়িক পরিবেশকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) এবং গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ (পিইবি) যৌথভাবে দেশে প্রথমবারের এ ধরনের ব্যবসায়িক পরিবেশের সূচক তৈরি করেছে।
বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্স’ বা ‘বিবিএক্স’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা গেছে, ব্যবসায়িক পরিবেশ সূচকে বাংলাদেশের পয়েন্ট ৬১ দশমিক ০১। এই সূচকের আলোকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ব্যবসার পরিবেশ উন্নতির দিকে এবং ভবিষ্যতে আরও উন্নতির সুযোগ আছে।
ব্যবসা শুরু, জমির সহজলভ্যতা, অবকাঠামো, কর পরিশোধসহ দশটি সূচকের মানদণ্ডের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে। মোট ১০০ পয়েন্টের ভিত্তিতে তৈরি এই সূচকে ব্যবসায়িক পরিবেশকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এ অনুযায়ী ব্যবসায়িক পরিবেশের পয়েন্ট ০ থেকে ২০ হলে ব্যবসার পরিবেশ খুব কঠিন। পয়েন্ট ২১ থেকে ৪০ হলে ব্যবসায়িক পরিবেশে মারাত্মক প্রতিকূলতা আছে। আর ৬১ থেকে ৮০ হলে ব্যবসার পরিবেশ উন্নতির দিকে এবং ৮১ থেকে ১০০ পয়েন্টের মধ্যে থাকলে দেশে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ বিরাজ করছে বলে ধরা হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ তৃতীয় ভাগে অবস্থান করছে।
ব্যবসার পরিবেশের ওপর এতদিন বিশ্বব্যাংক ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট প্রকাশ করে আসছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই রিপোর্টের বিষয়ে পক্ষপাতিত্ব ও অনিয়মের অভিযোগ উঠে। ফলে ডুইং বিজনেস রিপোর্ট আর প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।
মেট্রোপলিটন চেম্বার ও পিইবি বাংলাদেশের ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে কাজ করে আসছে গত ডিসেম্বর থেকে। বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে তারা প্রথমবারের মত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০টি মানদণ্ডের মধ্যে ৪টিতেই এগিয়ে রয়েছে চট্টগ্রাম। এর বাইরে খুলনা, সিলেট, রংপুর, বরিশালের ও ময়মনসিংহের মত বিভাগও কিছু ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের বিবেচনায় এগিয়ে।
কিন্তু, ১০টি মানদন্ডের কোনটিতেই ঢাকা শীর্ষে আসতে পারেনি।
কারখানা স্থাপনের জন্য দরকারি জমি স্বল্পতার কারণে ঢাকায় শিল্প স্থাপন কিংবা ব্যবসা শুরু- দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। এসব সমস্যা ঢাকার বাইরের জেলা সদরগুলোতে অপেক্ষাকৃত কম, বলে জরিপে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীরা মতামত দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ঢাকার বাইরে ব্যবসা ও শিল্প বিকেন্দ্রীকরণ করতে সরকারও কর অবকাশ সুবিধার পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়নসহ বেশকিছু সুবিধা তৈরি করেছে বলেও জানান তারা।
জরিপে ব্যবসা সংশ্লিষ্ট ১০টি বিষয়ের উপর উদ্যোক্তাদের মতামত নেওয়া হয়। তাতে প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায়, ব্যবসায়ীক পরিবেশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অগ্রগতি করলেও, তবে এখনো বেশকিছু ক্ষেত্রে উন্নতি করতে হবে।
দেশের ৮টি বিভাগের ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে বিবিএক্স সূচক প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জরিপের ফলাফল ঢাকার বাইরে ব্যবসা স্থাপনের জরুরি তাগিদ ও প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র বিকাশের উদীয়মান সম্ভাবনা উভয় দিকই তুলে ধরছে। চট্টগ্রামে ব্যবসা সহযোগী পরিবেশের সুবিধা গ্রহণ করে একে দেশের প্রকৃত বাণিজ্যিক রাজধানী ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত করার প্রতিও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম ও এর আশেপাশের এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর, কর্ণফুলী নদী তলদেশের টানেল নির্মাণ, প্রস্তাবিত বে টার্মিনাল ও মাতারবাড়ী কেন্দ্রিক এনার্জি হাবসহ অর্থনৈতিক অবকাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনা এই সম্ভাবনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
সূত্র : টিবিএস ও নিউজ বাংলা