রাজিব শর্মা »
মার্চের শুরু থেকে নিত্যপণ্যের বাজারে ছিলো উত্তাপ। তবে চলতি মাসে এসে কয়েকটি পণ্যের মূল্যে কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে। এর মধ্যে আমদানি সরবরাহ ভালো থাকায় ছোলা ও ডালসহ দু’একটি পণ্যের দাম কয়েক টাকা কমলেও বাকি সব ধরনের পণ্যগুলো আগের বাড়তি দামেই বেচাকেনা হচ্ছে। তাছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম কিছুটা কমলেও অনান্য মাংস ও মাছের দামে এখনো কমেনি। অন্যদিকে আড়তে পর্যাপ্ত পরিমাণ মালামাল মজুদ ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের দাম কমছে বলে জানালেও তার কোন সত্যতা মিলছে না। ছোলা, চিনি, তেলসহ প্রায় নিত্যপণ্যের দাম অনেকটা চড়া।
গতকাল নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজার ও বক্সিরহাট কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম ডজন প্রতি ১০ টাকা কমে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে গত সপ্তাহের শুরুতে মুরগীর দাম কমলেও তার দুই দিন পর ( সোমবার) থেকে মুরগির সংকটের দোহাই দেখিয়ে আবারো অস্থির ছিলো মুরগির বাজার। কিন্তু গতকাল থেকে ব্রয়লার মুরগির দাম কমতে শুরু করলেও সোনালি ও দেশী মুরগি এখনো বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। গতকাল ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা, সোনালি ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা ও দেশী মুরগি কেজিতে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ভোক্তা অধিকারসহ বাজার তদারকিতে অনান্য প্রতিষ্ঠানের বর্তমান তদারকিতে সন্তুষ্ট ক্রেতারা।
বক্সিরহাটে মুরগি কিনতে আসা আরিফুর রহমান বলেন, প্রশাসনের তদারকিতে বাজারে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম কিছুটা কমছে। এভাবে গরুর মাংস ও মাছসহ অনান্য নিত্যপণ্যের উপর তদারকি আশা করছি।
তাছাড়া অস্থির হয়ে উঠা মুরগি, ডিমের বাজার তদারকি করার পর বাজারে অস্থিরতা অধিকাংশ কাটিয়ে উঠেছে বলে মনে করে ভোক্তা অধিদপ্তর।
ভোক্তা অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, আমরা রমজানের শুরুতে বাজারের উপর কঠোর নজরদারি রেখেছি। কোন অভিযোগ আসলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। ভোক্তাদের জন্য আমাদের সেবামূলক তদারকি সবসময় থাকবে।
এদিকে গতকাল বকশির হাট বাজারে কেজি প্রতি তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকায়, যা আগে ছিল ১৫০-১৬০ টাকা। বড় পাঙ্গাস বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকায়, যা আগে ছিল ১৮০ টাকা। ছোট পাঙ্গাস বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকায়, যা আগে ছিল ১৫০ টাকা। চাষের রুই মাছ বিক্রি হয়েছে ৩২০ টাকায়, কাতলা মাছ বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকায়, পাবদা ৩৫০ টাকা, শিং ৪০০-৪৫০ টাকা, বোয়াল মাছ ৫০০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
রেয়াজউদ্দিন বাজারে মাছ কিনতে আসা মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, রমজানের শুরু থেকে এই পনেরো দিনে একবার মাছ কিনেছি। মাছের দাম বেড়েছে রমজানের একমাস আগেই। রমজানের শুরু থেকে আরেক দফা বেড়েছে। লইট্যা মাছ কেজিতে প্রথম দিকে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় কিনেছি, তা এখন কিনতে হচ্ছে ১৮০ টাকার উপরে।
এদিকে বাজারে সবজির দাম বেশ চড়া। সপ্তাহের ব্যবধানে অনান্য সবজি কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। গতকাল রেয়াজউদ্দিন বাজারে ভালো মানের বেগুন বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৭০ টাকা যা পহেলা রমজানে ১০০ টাকার উপরে ছিল। আবার ৮০ টাকার শসা এখন ৫০ টাকা হয়েছে। ৬০ টাকা লেবুর হালি এখন ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া বাজারে টমেটো প্রতি কেজি ৪০ টাকা, লেবু রয়েছে তিন ধরনের প্রতি হালি ৩০, ৪০ ও ৫০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। কাঁচাকলা ৩০ টাকা হালি, ঝিঙ্গা ১২০ টাকা, তিতা করলা প্রতিকেজি ১০০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
রেয়াজউদ্দিন বাজারে সবজি কিনতে আসা আবুল বাশার বলেন, শীতকালীন সবজিতে এতদিন ভরসা ছিল। কিন্তু গরমের শুরু থেকে সকল ধরনের সবজিতে দাম বাড়তে শুরু করছে। ৪০ টাকার নিচে কোন সবজি নেই।
এদিকে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এবছর নিত্যপণ্যের দাম বাড়েনি বলে জানালেও বাজারে সরেজমিনে গিয়ে তার হিসাব মিলছে না। চলতি বছর প্রায় পণ্যের দামই বাড়তি।
গতবছর মার্চের শুরুতে খাতুনগঞ্জে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৭০ টাকা, প্রতিকেজি ছোলা ৮০ টাকা ও প্রতিকেজি চিনি ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অপরদিকে চলতি বছর রোজায় একই বাজারে প্রতি লিটার তেল ১৮৫ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। প্রতিকেজি ছোলা ৮০ থেকে ৯০ টাকা ও প্রতিকেজি চিনি ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এ বছর মার্চের শুরুতে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে সয়াবিন তেল মণ প্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) ৬ হাজার ৫৮০ টাকা, পাম অয়েল ৪ হাজার ৯৪০ টাকা এবং সুপার সয়াবিন ৫ হাজার ১২০ টাকায় বিক্রি হয়। বর্তমানে সেখানে মণপ্রতি সয়াবিন তেল ৬ হাজার ২০ টাকা ও পাম অয়েল ৪ হাজার ৬২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে প্রতি মণ চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৫০ টাকা।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্য মতে, বছরের ব্যবধানে সয়াবিন তেলে ১২ শতাংশ, ছোলাতে ১৭ শতাংশ ও চিনিতে ৪৫ শতাংশের উপরে দাম বেড়েছে।