দেশ গভীর সংকটে নিপতিত হতে যাচ্ছে বোধহয়। কারণ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরে বলেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নভেম্বরে দেশ থেকে ৩৮৯ কোটি ১৫ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই মাসে ছিল ৪১১ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। এ হিসাবে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় নভেম্বরে রফতানি আয় কমেছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এর আগে আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরেও রফতানি কমেছে। আগস্টে এ হার ছিল ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ৪ দশমিক ৬১ ও নভেম্বরে ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
অন্যদিকে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের তুলনায় চলতি বছরের একই মাসে রফতানি খাতে ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। এ মাসের বড় প্রবৃদ্ধির প্রভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস শেষে (জুলাই-নভেম্বর) এ খাতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারা দেখা যাচ্ছে। তবে রফতানি খাতে অর্থবছরের শুরুতে প্রায় ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও পাঁচ মাস পর এসে তা কমে দশমিক ৬২ শতাংশে ঠেকেছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৪ সালের জুলাই জুড়েই চলেছে ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলন। আগস্টে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলেও বেশ কয়েক মাস ধরেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কার্যত ভঙ্গুর ছিল। স্বাভাবিকভাবেই সে সময় রফতানিতে কিছুটা ভাটা পড়েছিল। কিন্তু চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। দেশজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমও তুলনামূলক বেড়েছে। এর পরও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরে রফতানি আয় না বেড়ে উল্টো কমে যাওয়াটা উদ্বেগজনক।
এ প্রসঙ্গে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি) ও বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম একটি পত্রিকাকে বলেন, ‘রফতানি খাতে আগামী দুই-তিন মাস নেতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে। কারণ এখনো পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। সবচেয়ে বেশি সমস্যার কারণ ব্যাংক খাত, এছাড়া রয়েছে কাস্টমসের নানা সমস্যা।’
নানাবিধ সমস্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, কয়েক মাস ধরে আমরা বলছি, ব্যবসায়ীদের অবস্থা ভালো নয়। এটা সরকার কোনোভাবেই আমলে নিচ্ছে না। অথচ আমাদের সঙ্গে সরকারের বসা দরকার। যদিও তারা বসার প্রয়োজন মনে করছেন না। কিন্তু বসে আলোচনা করলে অনেক কিছুর সমাধান বের হয়ে আসে।’
আমরা মনে করি এ ক্ষেত্রে সরকারকে আরও সক্রিয় হওয়া দরকার। কারণ এ সমস্যাগুলো সমাধানের সামর্থ আছে সরকারের। মনে রাখা দরকার এত বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশে অর্থনীতির কাঠামো দুুর্বল হয়ে পড়লে বড় বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। সরকার সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নয়নের চিন্তা বাদ দিয়ে একরৈখিক চিন্তা করলে তাতে সংকট বাড়ব। কাজেই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের বসা দরকার। তাতে উত্তরণের উপায় বেরিয়ে আসবে নিশ্চয়ই। রফতানি না বাড়ালে বৈদেশিক মুদ্রা আসবে না। শুধু রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরতা বিপদ ডেকে আনবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ

















































