বে টার্মিনাল, সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে

অবশেষে জট খুলতে যাচ্ছে বে টার্মিনাল নির্মাণের জটিলতার। জায়গা নিয়ে সৃষ্ট সংকটের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে অচলাবস্থায় ছিল বন্দরের এই সম্ভাবনাময় খাতটি। দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা বে-টার্মিনালের জন্য ১ হাজার ২৪১ কোটি টাকার ৫ শ দশমিক ৭১ একর সরকারি খাস জমি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে মাত্র ৩ কোটি ৩ টাকায় দিচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। নামমাত্র মূল্যে এই জমি পাওয়ার ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রায় ১ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। সাশ্রয় হওয়া এই টাকা বে-টার্মিনালের অবকাঠামো তৈরিতে সহায়ক হবে বলে মনে করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বন্দরের সংশ্লিষ্ট দপ্তর জানায়, গত ৩১ জানুয়ারি ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে বে টার্মিনালের জন্য ৫শ দশমিক ৭১ একর সরকারি খাস জমি ৩ কোটি ৩ টাকায় বন্দর কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য চিঠি পাঠায়। এখন জেলা প্রশাসন থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষকে ওই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য চিঠি দেবে। ৯০ দিনের মধ্যে সেই টাকা জমা করলে জেলা প্রশাসন ওই জমি বন্দরকে হস্তান্তর করবে।
জানা গেছে, এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে ৫০০ একর খাস জমির মূল্য পুনঃনির্ধারণ করে জেলা প্রশাসন। নতুন সেই হিসেব অনুযায়ী ওই জমির জন্য ১ হাজার ২৪১ কোটি টাকা নির্ধারণ করে জেলা প্রশাসন থেকে নতুন প্রস্তাব ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এই ৫০০ একরের মধ্যে রয়েছে পতেঙ্গা, আগ্রাবাদ ও কাট্টলী সার্কেলের জায়গা। তবে ওই জমি প্রতীকীমূল্যে পেতে চট্টগ্রাম বন্দরের করা আবেদন ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছায় সেই জায়গা এবার নামমাত্র মূল্যে পেতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
স্থান জটিলতার কারণে বছরের পর বছর ঝুলে ছিল বে টার্মিনাল বাস্তবায়নের কাজ। অথচ প্রস্তাবিত বে-টার্মিনাল যদি হয় তাহলে তা হবে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবকাঠামোর চেয়েও বড়। চট্টগ্রাম বন্দর বছরে যে পরিমাণ পণ্য হ্যান্ডলিং করে, বে-টার্মিনালে হ্যান্ডলিং করা যাবে তার কয়েকগুণ বেশি। বে-টার্মিনাল প্রকল্পের আওতায় মূলত তিনটি টার্মিনাল নির্মিত হওয়ার কথা। এরমধ্যে একটি নির্মাণ ও পরিচালনা করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বাকি দুটি টার্মিনাল পিপিপি ভিত্তিতে বিদেশি বিনিয়োগে নির্মাণ করা হবে। এরইমধ্যে দুটি টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ড ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক পোর্ট অব সিঙ্গাপুর অথরিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আলাপ-আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।
যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে এবং বিদেশি বিনিয়োগ যদি যুক্ত হয় তাহলে এই টার্মিনালটিই দেশের অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা রাখবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা আশা করব বন্দর কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার সঙ্গে নতুন টার্মিনাল গড়ে তোলার কাজটি করে তাদের সদিচ্ছা ও দক্ষতার পরিচয় দেয়।