চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ২০১৫ সালেই পতেঙ্গা-হালিশহর এলাকায় বে-টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্প নেয়া হয়। যদিও এক দশকেও গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের অগ্রগতি খুব দৃশ্যমান ছিল না। এখন বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতার কারণে গতি পেতে যাচ্ছে বে টার্মিনাল নির্মাণের কাজ।
চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণের অংশ হিসেবেই বন্দর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে পতেঙ্গা ও হালিশহর সমুদ্র উপকূলভাগের বিস্তীর্ণ ভূমি ও সাগর ঘেঁষে হচ্ছে বে-টার্মিনাল। এর পূর্ব পাশে আউটার রিং রোড এবং পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের খেজুরতলার বিপরীত থেকে কাট্টলী পর্যন্ত অংশে পলি জমে ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি চর হয়েছে। এই চরকে কেন্দ্র করেই হচ্ছে বে-টার্মিনাল।
প্রকল্প এলাকাটি লম্বায় প্রায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। বন্দর জলসীমার শেষ প্রান্তে চট্টগ্রাম ইপিজেডের পেছনের সাগরপার থেকে শুরু বে টার্মিনাল প্রকল্পের সীমানা, যার শেষ প্রান্ত রাসমণিঘাটে।
বিশ্বব্যাংকের সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন ‘বে টার্মিনাল’ প্রকল্পে গতি নিয়ে এসেছে। প্রকল্পের ব্রেক ওয়াটার বা স্রোত প্রতিরোধক তৈরি এবং জাহাজ চলাচলের পথ তৈরি তথা খননকাজের জন্য মূলত এই অর্থ ব্যয় করা হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বে টার্মিনাল প্রকল্পের কাজ অনেক আগেই গতি পেয়েছে। এখন বিশ্বব্যাংকের ঋণ অনুমোদন গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে এসেছে। টার্মিনাল নির্মাণের আগে প্রথম কাজ হচ্ছে, ব্রেক ওয়াটার বা স্রোত প্রতিরোধক ও খননকাজ করে জাহাজ চলাচলের পথ তৈরি করা। বিশ্বব্যাংকের ঋণে এই কাজ হবে সবার আগে।
সাগর থেকে আসা বড় বড় ঢেউয়ের আঘাতে যাতে জেটি নষ্ট না হয়, সেজন্য দূর থেকেই ঢেউটিকে বাধা দেওয়ার জন্য ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ করতে হয়। বিশ্বের অনেক বন্দরে কৃত্রিমভাবে ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ করতে হয়। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ কৃত্রিম ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ করতে হয়েছে। যাতে সাগরের ঢেউ ও উপকূলের পলি এসে চ্যানেলে জমতে না পারে। কিন্তু বে টার্মিনালের সাগরের অংশে এ ধরনের একটি চর থাকাতে প্রাকৃতিকভাবেই ব্রেক ওয়াটার সুবিধা পাওয়া গেছে।
বে-টার্মিনাল প্রকল্পের আওতায় জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানো নামানোর জন্য চারটি টার্মিনাল নির্মিত হবে। এর মধ্যে একটি মাল্টি পারপাস বা বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী টার্মিনাল। দুটি কনটেইনার টার্মিনাল ও চতুর্থটি হবে তেল ও গ্যাস খালাসের টার্মিনাল।
ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধা এবং নৌ, রেল ও সড়কপথে সরাসরি সংযোগের কারণে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তিন টার্মিনাল অপারেটর এই টার্মিনাল নির্মাণে ইতিমধ্যে চার বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে প্রস্তুত। সব মিলিয়ে এই প্রকল্পে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হচ্ছে ।
এখন আর বলার অপেক্ষা করে না যে, বে টার্মিনাল নির্মিত হলে দেশের অর্থনীতির চিত্র পাল্টে যাবে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালে বে টার্মিনাল অপারেশনে যাওয়ার পরিকল্পনায় রয়েছে। আশা করি কাজটি স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সঙ্গে শেষ হবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ