বে টার্মিনালে ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে আবুধাবি পোর্টস

সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর

সমঝোতা স্মারকপত্রে স্বাক্ষর করেন চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল এবং আবুধাবী পোর্টস গ্রুপের চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সাইফ আল মাজরুই।

সুপ্রভাত রিপোর্ট »

বে টার্মিনাল ঘিরে বিশাল বিনিয়োগের অংশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি পোর্ট গ্রুপ, যারা ‘এডি পোর্টস গ্রুপ’ নামে বেশি পরিচিত তারা মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।

বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টার্মিনালটি নির্মিত হলে চট্টগ্রাম বন্দর বছরে ১০ লাখ টিইইউ (টোয়েন্টি-ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট) কন্টেইনার এবং ৭০ লাখ মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং করতে পারবে।

মাল্টিপারপাস টার্মিনালে খোলা বা বাল্ক জাহাজ যেমন ভিড়বে, তেমনি ভিড়বে কন্টেইনার জাহাজ। কন্টেইনারের মধ্যে আবার ক্রেনযুক্ত এবং ক্রেনবিহীন জাহাজও এই টার্মিনালে ভেড়ানো যাবে। ভেড়ানো যাবে যাত্রীবাহী জাহাজও। ফলে বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী করেই টার্মিনালটি নির্মিত হবে। আর এ কারণেই বিনিয়োগের জন্য আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ এই টার্মিনালটি বেছে নিয়েছে।

এডি পোর্টস, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ), নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং এডি পোর্টসের বাংলাদেশ এজেন্ট সাইফ পাওয়ারটেকের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করা হয়।

সমঝোতা স্মারকপত্রে স্বাক্ষর করেন চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল এবং আবুধাবী পোর্টস গ্রুপের চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সাইফ আল মাজরুই।

আবুধাবি পোর্ট গ্রুপের সঙ্গে এক বছর আগে থেকেই কাজ করছে বাংলাদেশের একমাত্র টার্মিনাল অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড।

সমঝোতা স্মারকপত্র (এমওইউ) স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর পথ ধরে মেরিটাইম সেক্টরে আমাদের যে যাত্রা সেটিকে পুনর্জীবিত ও উজ্জীবিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সময়ে সমুদ্র ও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর গত ১৫ বছরে আন্তর্জাতিক বন্দরের সক্ষমতা অর্জন করেছে। মংলা বন্দরের আপগ্রেডেশন হচ্ছে। মংলা বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের মতো সক্ষমতা অর্জন করবে। পায়রা বন্দরে নির্মাণাধীন জেটিতে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভিড়েছে। এটা একটা নতুন অনুভূতি। আগে মাদার ভেসেলে পণ্য পরিবহনের জন্য আমাদের কলম্বো ও সিঙ্গাপুর বন্দরের উপর নির্ভরশীল হতে হতো। বর্তমানে মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মিত হচ্ছে। এতে করে নির্ভরশীলতা কমে যাবে। মাতারবাড়ি বন্দর আঞ্চলিক ‘হাব’ এ পরিণত হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য সৌদিআরবের রেড সী গেটওয়ে টার্মিনালের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। খুব শীঘ্রই এর কার্যক্রম শুরু হবে। বে টার্মিনাল নির্মিত হলে ২৪ ঘন্টা জাহাজ আসা যাওয়া করবে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল, , বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লা আলী আব্দুল্লা কাসিফ আল মৌদি, আবুধাবী পোর্টস গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল অফিসের রিজিওনাল চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার আহমেদ আল মুতায়া।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের পাশ ঘেঁষে বে টার্মিনালকে ‘আগামীর’ বন্দর হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। বর্তমান চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে পতেঙ্গা হালিশহর উপকূল বরাবর আড়াই হাজার একর জমিতে বে টার্মিনালটি নির্মাণ করা হবে।

বে টার্মিনালে চারটি টার্মিনাল তৈরি করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বে টার্মিনালের চারটি টার্মিনালের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ হবে গ্যাস ও তেল খালাসের ট্যাংক টার্মিনালে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশের ইস্ট কোস্ট গ্রুপ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। তাতে ৩৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ হবে।

কনটেইনার এবং পণ্য উঠা-নামানোর তিনটি টার্মিনাল নির্মাণ হবে। এর মধ্যে ১৫০ কোটি ডলার করে বিনিয়োগ করে আলাদা দুটি টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনা করবে সিঙ্গাপুরের পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল এবং আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড। আর মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ করবে আবুধাবি পোর্টস, যেখানে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ হবে।

এছাড়া বে টার্মিনালের চ্যানেল তৈরিতে বিনিয়োগ করা হবে ৫০০ মিলিয়ন ডলার। ব্রেক ওয়াটার (ঢেউ নিরোধক বাধ), ট্রাক টার্মিনালসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে বিনিয়োগ হবে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, বে টার্মিনাল প্রকল্পের মাল্টিপারপাস টার্মিনাল এবং দুটি কন্টেইনার টার্মিনালে বার্থের দৈর্ঘ্য তিন হাজার ৯৫০ মিটার। এর মধ্যে মাল্টিপারপাস টার্মিনালে বার্থের দৈর্ঘ্য দেড় হাজার মিটার। মাল্টি পারপাস টার্মিনালের মোট বার্থসংখ্যা ৫টি। টার্মিনালে প্যানামেক্স ক্লাসের কন্টেইনার জাহাজ, বাল্ক ক্যারিয়া, রো রো শিপ ইত্যাদি জাহাজ ভিড়তে পারবে।

দুটি কন্টেইনার টার্মিনালের প্রতিটির বার্থ এরিয়া হবে এক হাজার ২২৫ মিটার করে। কন্টেইনার টার্মিনালে বার্থের সংখ্যা ৪টি করে মোট ৮টি।

বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে ১০ মিটার গভীরতা ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের বড় জাহাজ প্রবেশ করতে পারে না। বে টার্মিনালে ভিড়তে পারবে ১২ মিটার গভীরতা ও ২৮০ মিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের জাহাজ।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে জাহাজ ভেড়ানোর ক্ষেত্রে জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করতে হবেনা। টার্মিনালটিতে ছয় হাজার কন্টেইনার বহনক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ পরিচালনা করা সম্ভব হবে। বর্তমান বন্দরের জেটিতে প্রায় দুই হাজার কন্টেইনার ধারণক্ষমতার জাহাজ ঢুকতে পারে।